যৌতুক লোভী স্বামীর হাতে খুন হয়েছে কুমিল্লা সদর দণি উপজেলার আশ্রাফপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ির মৃত আব্দুর রশিদের মেয়ে লায়লানুর আক্তার লাকী। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঢাকার দণি বনশ্রী প্রজেক্ট জি ব্লকের মণিশা ভিলায়। হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ঘাতক স্বামী জামাল কে গ্রেফতার করে। জানা যায়, কুমিল্লা সদর দণি থানা আশ্রাফপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ির মৃত আব্দুর রশিদের মেয়ে লায়লা নুর আক্তার লাকীর সাথে লপিুর জেলার রামগঞ্জ থানাধীন ভাটিয়াল গ্রামের মোঃ হাফিজ উদ্দিন এর ছেলে এ.বি এম জামাল উদ্দিনের সাথে গত প্রায় ১২/১৩ বছর পূর্বে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের সময় লাকির বাবা মেয়ের সুখের জন্য স্বামীকে ৩ লাখ টাকা ফর্নিচার, ইলেকট্রনিক সহ বিভিন্ন মালামাল দেন। বিয়ের পর লাকির ঘরে দুই সন্তান জন্ম নেয়, বড় ছেলে রাফি(১০) ছোট ছেলে মাহি(৪)। বিয়ের ৩ বছর পর থেকে লাকির স্বামী জামাল ও দেবর, শুশ্বর, শাশুড়ী লাকিকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় এবং জামাল বিদেশ যাবে বলে। পরে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাল বিদেশ যাওয়ার সময় নগদ ২ লাখ টাকা স্বামী জামালকে দেন লাকির বাবা। জামাল বিদেশ যাওয়ার পর স্বামীর অনুপস্থিতিতে লাকিকে প্রায় সময় শুশ্বর বাড়ির লোকজন শারিরীক নির্যাতন করতো। দুই বছর পরে জামাল বিদেশ থেকে এসে পুনরায় লাকির বাবার সম্পত্তির দিকে নজর পড়ে। লাকির বাবা ও মা মৃত্যুর সময় লাকিকে বেশকিছু পৈত্তিক সম্পত্তি দেন। এই সম্পত্তির লোভে লাকিকে হত্যা করেছে ঘাতক স্বামী জামাল। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে গত প্রায় দুই বছর পূর্বে ঢাকার দণি বনশ্রী একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করে। ঢাকায় বসবাস করা অবস্থায় যৌতুকের জন্য লাকি কে প্রায় সময় শারিরীক নির্যাতন করতো স্বামী ও শুশ্বর বাড়ির আত্বীয় স্বজন। লাকির বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা জামাল কে দেওয়ার জন্য জামালের পরিবার একত্রিত হয়ে তাকে মানসিক চাঁপ ও শারিরীক নির্যাতন করতো। এসব নির্যাতনের ঘটনায় লাকির আত্বীয় স্বজন বেশ কয়েকবার স্বামীর পরিবারের সাথে বসে সমাধান করেন। এদিকে গত ১ মাস যাবত লাকিকে যৌতুকের জন্য প্রতিরাতে শারিরীক নির্যাতন করতো, এসময় আশেপাশের বসবাসকারীরা লাকির চিৎকারের আওয়াজ শুনতো। গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে জামালের বাসায় তার আত্বীয় স্বজন আসে. ওই রাতের লাকিকে স্বামী ও দেবর সহ শুশ্বরবাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বাথরুমের ভেতরে ফেলে রাখে। পরদিন বেলা ১২ টার সময় ঘাতত জামাল লাকির ছোট ভাই এনামুল হক আরিফকে মোবাইলে জানায় লাকি ফাঁসি দিয়ে আতœহত্যা করেছে। খবর শুনে লাকির পরিবার ঢাকা ছুরে গিয়ে দেখে লাকি বাথরুমের পাশেই পড়ে আছে। এসময় লাকির গলায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহৃ দেখা যায়। ৫ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল থেকে খিলগাঁও থানার এসআই নবী হোসেন তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে হত্যাকান্ডের বিষয়ে লাকির ভাই এনামুল হক আরিফ বাদি হয়ে নারী নির্যাতন হত্যাকান্ডের ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন এবং একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবজৌতি খিশা বলেন, হত্যাকান্ডের বিষয়ে এজাহার দায়ের করা হয়েছে নিহতের পরিবার থেকে, ময়নাতদন্তের রিপোট হাতে পাওয়ার পরই হত্যা মামলা সম্পন্ন হবে। এদিকে আসামী জামাল কে ঢাকার কোর্টে প্রেরন করে এসআই নবী হোসেন আসামী ৭ দিনের রিমান্ড এর আবেদন করলে আদালত তাকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:৪৮