প্ল্যু সা শাঁজ প্ল্যু সে লা মেম্ শোজ। মুজতবা আলী ভ্রমনপ্রিয় পন্ডিত ব্যক্তি। বহু ভাষায় তার দক্ষতা ছিল। তার কোন এক বইতেই এই ফরাসী প্রবাদটি পড়েছিলাম। তিনি এর যে ইংরেজী অনুবাদ দিয়েছিলেন তা হচ্ছে, “The more it changes the more it is the same thing.” অর্থা কিনা যতই তুমি কোন কিছু পরিবর্তন কর ততই এটা একই জিনিস রয়ে যায়। আশা করি ফরাসী প্রেসিডেন্ট মহোদয় ওবামাকে তাদের এই প্রবাদটির কথা জানাননি, তাহলে চেঞ্জ-এর ধ্বজাধারী ওবামা কিছুটা বিব্রত বোধ করতেন কিনা বলা মুশকিল। যাইহোক প্রবাদটির সত্যাসত্য বিচারে কখনও মাথা ঘামাইনি। কিন্তু প্রবাদটি যে সত্য হলেও হতে পারে সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে। পাসপোর্ট অফিসে যদি কেউ আজ থেকে কয়েক বছর আগে গিয়ে থাকেন এবং তখনকার অবস্থার সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন সেখানকার অবস্থার যথেষ্ট পরিবর্তন বা চেঞ্জ ঘটেছে। পাসপোর্ট অফিসের গেট পর্যন্ত পৌছাবার আগে অসংখ্য দালাল আপনাকে তাদের নানান অফার নিয়ে ছেকে ধরবেনা। একসময় মোড় থেকে শুরু করে পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য ফটোকাপির দোকান ছিল, যারা কিনা পাসপোর্টের ফর্ম ফটোকপি করে বিক্রি করত। সেসব দোকানও এখন নেই। বাইরে মোটামুটি একটি ছিমছাম পরিবেশ। এখানে বলে রাখা ভাল পাসপোর্ট ফরম এখন বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং ফর্ম নিতে আর পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত যেতে হবেনা। এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বলতে হবে। অফিসের ভেতরকার পরিবেশও বাইরের মতই কম বেশী ভালই মনে হল। আপাতদৃষ্টিতে দালালদের চোখে পড়লনা। সবচেয়ে চেঞ্জ চোখে পড়ল তাদের সার্ভিসে। ছয় হাজার টাকায় জরুরী পাসপোর্ট নেয়া যায় এবং ভোটার আইডি কার্ড থাকলে সেটা এক ঘন্টার মধ্যেই হাতে পাওয়া যায়। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আগে জরুরী পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও নানা ঝামেলা পোহাতে হত। একটি জরুরী পাসপোর্ট করতেই গিয়েছিলাম, দিনে দিনে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে ভাবছিলাম যাক শেষ পর্যন্ত তাও কিছু পরিবর্তন এসেছে। খোদ আমেরিকাতেই যখন পরিবর্তনের সুবাতাস, আর আমাদের দেশেও যখন দুবছর ব্যাপি নানা আবর্তন আর প্রবর্তনের ঢেউ, তখন বিবর্তনের নানা ধারা পেরিয়ে পাসপোর্ট অফিসের এই পরিবর্তন বেশ আবশ্যম্ভাবী বলেই মনে হচ্ছিল।
পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। এ সময়ের মধ্যে যে এস, আই মহোদয় ভেরিফিকেশনে এসেছিলেন তিনি আমাকে বাসায় খুজে পাননি। তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে বাসার লোকজন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন বিদ্যুত বিলের ফটোকপি ইত্যাদি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসএসসির সার্টিফিকেট প্রয়োজন ছিল। আমার সার্টিফিকেট কোথায় আছে বাসার কেউ জানতেননা। তাই তিনি তার ফোন নম্বর দিয়ে গিয়েছিলেন এবং বাসায় বলে রেখেছিলেন আমি যেন তার সাথে সার্টিফিকেট সহ দেখা করি। যথারীতি আমি তার মোবাইলে ফোন করলাম পরের দিন। তিনি আমাকে রাতে যেতে বললেন মিরপুর চৌদ্দ নম্বর পুলিশ কোয়ার্টারে। ক্লাস শেষ করে রাত নয়টার সময় কোন মতে মিরপুর দশ নম্বর নেমে একটা রিকশা নিলাম চৌদ্দ নম্বরের উদ্দেশে। রিকশায় উঠে যাচ্ছিলাম। এমন সময় মনে পড়ল প্রচলিত নর্ম (?) অনুযায়ী যিনি পুলিশ ভেরিফিকেশন করেন কষ্ট করে, তার কিছু দাবী দাওয়া থাকে। খেয়াল করে দেখলাম আমার কাছে বাসায় যাওয়ার ভাড়া ছাড়া আর কিছুই নেই। গতকাল লোকটা যেহেতু এসেছিল বাসায় সুতরাং বাসায় ফোন করলাম বিষয়টা পরিষ্কার হবার জন্য। জানতে পারলাম আমাদের বাসার কেয়ারটেকারের মাধ্যমে তাকে একশত টাকা দিতে চাওয়া হয়েছিল। লোকটি তা নিতে রাজী হননি। শুনে আমি যারপরনাই খুশি হলাম। যাক শেষ পর্যন্ত তাহলে সব জায়গায় কিছু চেঞ্জ এসেছে। লোকটি তাহলে সত্যিই সৎ। এই ভেবে আমি ফুরফুরে মন নিয়ে উক্ত সৎ এস আই পানে চলতে থাকলাম। চৌদ্দ নম্বর পুলিশ কোয়ার্টারের গেটে এসে তাকে ফোন করলাম। তখন বাজে রাত সাড়ে নয়টা। তিনি জানালেন সারা দিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে তিনি একটু খেতে বসেছেন। তিনি আমাকে পুলিশ কোয়ার্টারের গেটে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললেন। আমি গেটের কাছে দাড়াতে গেটম্যান আমাকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আমি কারণ বলতেই সে আর কিছু বল্ল না। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম। গেটম্যান কনস্টেবলটি আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে গার্ডরুমের ভেতর থেকে একটি চেয়ার বের করে আমাকে বসতে দিল। কছুক্ষণ বসে থাকতে হল। এরই মধ্যে হঠাৎ দেখতে পেলাম এক লোক এদিকে এগিয়ে আসছে। রাস্তা বেশ অন্ধকার থাকায় লোকটি তার মোবাইলের টর্চটি জ্বালিয়ে রেখেছে। লোকটি কাছে এসে যখন নিশ্চিত হল যে আমিই তার কাছে এসেছি তখন সে মোবাইলের লাইটের ইশারা করে তার সাথে যেতে ইংগিত করল। আমি একটু ধাক্কার মত খেলাম, কারণ পুলিশ কোয়ার্টারটি গাছপালা ঘেরা একটি বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে। সেখানে শুধু এই গেটের কাছেই যা একটু উজ্জ্বল আলো রয়েছে। রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের খুবই অপ্রতুল আলো, তাছাড়া আশে পাশে সব ঘন অন্ধকার। এই অবস্থায় লোকটি কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে? যাইহোক অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনুসরণ করতে হল। লোকটি যেখানে নিয়ে গেল তা গেট থেকে বেশ দূরে। মাঠের পাশে কয়েকটি পুলিশের পুরাতন ভাঙ্গা গাড়ি পড়ে রয়েছে, আশে পাশে অন্ধকার, কেমন ভৌতিক পরিবেশ। আমার মনে কেমন যেন খটকা লাগতে শুরু করল, কারণ গার্ডরুমের সামনে একটা টেবিলও ছিল আবার প্রয়োজনীয় আলোও ছিল। সে জায়গা বাদ দিয়ে এখানে কেমনতর কাগজ পত্রের এসেসমেন্ট হবে তা আমার মাথায় ঢুকলনা। যাইহোক মনের চিন্তা মনে চেপে রেখে লোকটির রুটিন জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলাম। সে অনেকটা যন্ত্রের মত অভ্যস্ত গলায় প্রশ্ন করতে থাকল, আপনি অমুক? এটা আপনার ছবি? এটা আপনার সাইন ইত্যাদি। সে অবশ্য এক্ষেত্রে তার মোবাইল সেটের টর্চটি ব্যবহার করছিল। ছবির সাথে চেহারা মেলাতে সে আমার চেহারার উপরও আলো ফেলল। এসএসসি সার্টিফিকেট নেয়ার পর সমস্ত ফর্মাল প্রশ্ন শেষে, লোকটি বেশ খাতির জমানো আলাপ আলোচনা শুরু করল। যেমন আপনি কোথায় পড়েন, অনার্স কি বিষয়ে করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সে এক পর্যায়ে জানাল সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে অনেক আগে। এসব কথার ফাঁকে আমার মনে চেপে রাখা শংকাবোধটা কমে গেল, আমি তার সাথে সহজভাবে কথা বলতে থাকলাম। এক সময় দেখা গেল কথার প্রসঙ্গসমূহ শেষ হয়ে যেতে লাগল এবং এক সময় লোকটি চুপ হয়ে গেল এবং আমার মনে হতে থাকল লোকটি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। যাইহোক শেষ পর্যন্ত লোকটা সম্ভবত লজ্জা ভেঙ্গে মনের কথাটি পেড়েই ফেল্ল। লোকটি অস্পষ্টভাবে কি বল্ল তার শব্দ সব আমি বুঝতে পারলামনা। তারপরও এতটুকু স্পষ্টভাবে বুঝলাম লোকটি টাকা চাচ্ছে। আমি যারপর নাই আঘাতপ্রাপ্ত হলাম। অবস্থাটি স্বাভাবিক ভাবেই বিব্রতকর মনে হল। একদিকে তো টাকা নাই আবার মানুষ কিভাবে এত নির্লজ্জ হতে পারে তা ভেবে এসব পরিস্থিতিতে আমি নিজেই লজ্জায় নুয়ে পড়ি। আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম গতকাল যে তাকে টাকা দিতে চাওয়া হয়েছিল, তা সে নিলনা কেন? লোকটি বলল - "ও! ঐটা! দারোয়ান আমাকে একশ টাকা সাধছিল, কিন্তু একশ টাকা দিয়া কি হইব, একশ টাকা তো আমার মটর সাইকেল স্টার্ট দিতেই ফুরায়া যায়।" এবার বিষয়টি পরিষ্কার হল। লোকটি কতটা সৎ এবং আমাদের লোকদের ক্যারেকটারের মধ্যে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে তা ঠিক ঠিক বেঝা গেল। প্ল্যু সা শাঁজ প্ল্যু সে লা মেম্ শোজ প্রবাদটি যতই দূর দেশী হোক না কেন প্রবাদের মধ্যে যে সত্যতার ব্যাপার স্যাপার থাকতে পারে তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলাম।
যাইহোক আমি লোকটিকে কোনমতে কনভিন্স করলাম যে আমার কাছে সত্যিই কোন টাকা পয়সা নাই। কিন্তু লোকটি যেন ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারছেনা এবং নানাভাবে তা সে প্রকাশ করছে। এ অবস্থা চলতে চলতে হঠাৎ আলো আধারীর মধ্যেই দেখতে পেলাম লোকটির চোখের তারা নেচে উঠল, যেন সে নতুন একটা সল্যিউশন খুজে পেয়েছে। সে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল, “আরে ভাই আজকাল কি আর এসবে কোন সমস্যা আছে নাকি, আপনি বাসায় যেয়ে আমার নাম্বারে একটা ফেক্সি পাঠায়া দিলেই তো হল। আমার নম্বার তো আপনার কাছে আছেই! ”এই অভিনব আইডিয়ার কথা শুনে কিছুণের জন্য বাকশূন্য হয়ে গেলাম। ফিরতী রিকশায় করে যখন আসছিলাম তখন মনটা খুবই খারাপ লাগছিল। লোকটি যেমন সৎ ধারণা করে গিয়েছিলাম ঠিক তেমনই বিপরীত ধারণা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। মানুষ এত নিচে কিভাবে নামতে পারে বিনা দ্বিধায়! তারা কি বিবেকের এতটুকু দংশনও অনুভব করেনা!
মনে পড়ল, টি আই বি বলেছিল যে এ সরকারের আমলে দুর্নীতি বেড়েছে। অথচ এই দুর্নীতি দূর করার জন্যই দেশে কতনা হৈ হৈ কান্ড ঘটে গেল গত দুবছর ধরে। ন্যাশনাল হাউজহোল্ড সার্ভে ২০০৭ এর সূত্র ধরে ট্রান্সপারেন্সি জানায়: “In terms of magnitude law enforcing agencies including joint forces, police, Rapid Action Battalion (RAB) were found to be the most corrupt...” অর্থাৎ মাত্রার দিক থেকে জয়েন্ট ফোর্স, পুলিশ, র্যব সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে বেশী। সার্ভেতে আরও জানা গেছে ৯৬.৬ শতাংশ লোক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে ইন্টার্যাক্ট করতে যেয়ে কোন না কোন দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছে। তার মধ্যে ৯৪ শতাংশ দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছে পুলিশের কাছ থেকে বাকিটুকু জয়েন্ট ফোর্স বা র্যাবের কাছ থেকে। টি আই বি চেয়ারম্যান ১৮ই জুন ২০০৮ তারিখে তথ্য দেন, পাবলিক এবং প্রাইভেট সেক্টর মিলে মোট ঘুষ গ্রহনের পরিমাণ হচ্ছে ৫৪৪৩ কোটি টাকা। টি আই বি এর রিপোর্টগুলো নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকতে পারে। এগুলো কতটুকু গ্রহনযোগ্য হচ্ছে বা হয়েছে আর এগুলো কি উদ্দেশ্যেই বা করা হয়েছে বা হচেছ সে সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ওঠাটা খুবই যৌক্তিক বলে মনে হয়। কিন্তু এ তথ্যগুলো যদি আমরা ততটা আমলে নাও নিই, তারপরও বলা যায় এ সরকারের দুর্নীতি বিরোধী ড্রাইভের কারণে দুর্নীতির উপর তেমন কোন প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না। অন্তত এতটুকু তো নিরাপদে বলাই যায় অনেক কিছু পরিবর্তন করার পরও দুর্নীতি আমাদের জন্য এখনও একটি বড় সমস্যা - এ সত্যটির কোন পরিবর্তন হয়নি। আসলে দুর্নীতির বিষয়ে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা যেমন নেতিবাচকভাবে এবং হাস্যকর উপায়ে করা হয়েছে তা সত্যিই নিন্দা করার মত। রোড শো এর মত হালকা প্রদর্শনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তো অন্তত দুর্নীতির মত গভীর, জটীল এবং সিরিয়াস ধরণের সমস্যা দূর করা যাবে না। এটুকু অন্তত আমাদের বোঝা উচিৎ। দুর্নীতির সাথে একজন মানুষের মূল্যবোধ, তার বিশ্বাস, জীবনধারা সমস্ত কিছু জড়িত। দুর্নীতি কেন এবং আমাদের এ অবস্থা থেকে বের হবার জন্য কি কি করা যেতে পারে তা একটি দীর্ঘ ও গভীর চিন্তা-গবেষণার বিষয়। কিন্তু যদি মোটা দাগে বলতে চাই তাহলে বলতে হয় এর একটি প্রধান কারণ হচেছ বৈষয়িকতা। আমরা আমাদের বৈষয়িক প্রয়োজনগুলোকে অনেক বাড়িয়ে নিয়েছি। ছোটবেলায় গ্রামবাংলার সহজ সরল যে চিত্রটি আমাদের মনে বইয়ের পাতা থেকে গেথে গিয়েছিল সেই চিত্রটি গ্রামে বা শহরে কোথাও-ই খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সবখানেই মানুষ জীবনকে অতিরিক্ত প্রতিযোগীতামূলক, জটীল এবং অতিমাত্রায় বস্তুবাদী করে ফেলেছে। আমাদের জীবন দৃষ্টির পরিবর্তন না ঘটলে, লোভ না কমাতে পারলে কিভাবে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে তা বলা মুশকিল।
এক্ষেত্রে নৈতিকতা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। মানুষের নৈতিকতা মানুষের জীবন-দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে। আর নৈতিকতা না থাকলে লোভের কাছে আমাদের হার মানতেই হবে। নৈতিকতা যদি না থাকে তাহলে, সুযোগ পেলে একজন মানুষের অধিক কিছু অর্জন থেকে নিজেকে বিরত রাখবার আসলে কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। এস আই সাহেবরা যদি মানুষের ঘরে ঘরে পুলিশ কিয়ারেন্স দিতে গিয়ে কিছু বার্তি টাকা পান তাহলে তিনি নেবেননা কোন যু্ক্তিতে? এস আই সাহেবের কাছ থেকে কথা প্রসঙ্গে জানতে পেরেছিলাম তিনি প্রতিদিন প্রায় ৪০ টি বাসায় যান। এর মধ্যে ৩০ টি বাসা থেকেও যদি তিনি গড়ে ২০০ টাকা করে পান তাহলে তার দৈনিক আয় হচেছ ৬০০০ টাকা। এভাবে তিনি যদি ২৫ দিন ডিউটি করেন তাহলে তার আয় হচেছ ১,৫০,০০০ টাকা। এত টাকা মাসিক বেতন তো ঢাকা শহরে বড় বড় অফিসাররাও পাননা। তাহলে তিনি কেন এ সুযোগটি ব্যবহার করবেননা? আসলে নৈতিকতা, শুধুমাত্র নৈতিক বোধ মানুষকে এমন কাজ থেকে দূরে রাখতে পারে।
আমাদের এ দেশটি সাইত্রিশ বছরে পা দিল। একটি জাতিরাষ্ট্রের বিচারে এটি কোন বড় সময় নয়। এখনও আমাদের পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। আর তাই এখনও স্বপ্ন দেখতে চাই অনৈতিকতা মুক্ত সুন্দর একটি বাংলাদেশের। এ-কি খুবই অন্যায় আর অসম্ভব স্বপ্ন? সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে সর্বব্যাপী অনৈতিকতার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা কি খুবই কঠিন? বিজয়ের এ মাসে বিজয়ের আনন্দের পাশাপাশি আমরা সকলে কি একটি অনৈতিকতা মুক্ত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা নিতে পারিনা?
....................................................................................................
"একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা ও অনৈতিকতামুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন" শিরোণামে সাইটে প্রকাশিত:
Click This Link