সিএনজি চালিত বেবিট্যাক্সিতে করে একটি কাজে যাচ্ছিলাম। পথে একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেয়ার জন্য বেবিট্যাক্সিটি দাড়াল। সেখানে ঠিক ক্যাশ কাউন্টারের উপর লেখা একটি নোটিশ চোখে পড়ল : "এখানে বিল বেশী লেখা হয়না"। অতীব চমৎকার নোটিশ! নোটিশের মর্তবা কি চিন্তা করতেই মনে পড়ল, বিভিন্ন সময়ে স্যানিটারী দোকানে যখনই কিছু কিনতে গিয়েছি দোকানদার জিজ্ঞাসা করত, বিল কত লেখব? তখন কাচা বয়স ছিল। বিষয়টি বুঝতে পারতাম না, মনে হত বিল যত হয়েছে সেটা লিখলেই তো পারে আবার জিজ্ঞাসা করার মানে কি? পরে শুনেছিলাম মিস্ত্রি বা বাড়ির কেয়ার টেকাররা জিনিসের দাম বাড়িয়ে লিখিয়ে নিয়ে বার্তি টাকাটা নিজেদের পকেটস্থ করে। ড্রাইভারদের ক্ষেত্রেও ঠিক এ বিষয়টি প্রযোজ্য। আর তাদের এ কাজে সহায়তা করতে রাজী নন এই সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কতৃপক্ষ। সেটিই তারা জানিয়ে দিচ্ছে এই নোটিশের মাধ্যমে। কিন্তু আমার যেটা অনুভূতি হল নোটিশটি দেখে তা হচ্ছে, সমাজে শুধু বড় বড় নয় ছোট খাট সমস্ত ক্ষেত্রে অন্যায়-দুর্নীতি কিভাবে কত গভীরে শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে তার নীরব স্বাক্ষী হচেছ এই নোটিশ বোর্ডটি।
আরো একটি বিষয় লক্ষ করেছি এ ধরণের ছোট খাট অন্যায়কে আমরা অনেকেই ট্রিভিয়ালাইজ করে থাকি, অর্থাৎ খুব হালকা ভাবে, "এটা তেমন কিছুই না"- এভাবে গ্রহন করে থাকি। আবার অনেকে এই সামন্য একটু বাড়ানোর ব্যাপারগুলোকে অনৈতিক তো মনেই করে না বরং যৌক্তিক মনে করে থাকে। মনে পড়ে যখন অনার্স পড়তাম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। যাতায়াত খরচ দেখিয়ে আমাদের একটি ভাউচার দিতে বলা হল যাতে আমরা সেই খরচটি তুলে নিতে পারি। অন্যান্য অংশগ্রহনকারী বন্ধরা সব যেখানে বাসে গিয়েছে, সেখানে ট্যাক্সিক্যাব দেখিয়ে টাকার অংকটা একটু স্বাস্থ্যবান করে ভাউচার জমা দিচ্ছিল। আমি শুধুমাত্র যত খরচ হয়েছিল সেটিই দিখিয়েছিলাম এবং তার পরিমাণ খুবই কম ছিল, কারণ বাস-রিকশায় যাতায়াতে শহরের মধ্যে আর কতই খরচ হয়! বন্ধদের মধ্যে এ নিয়ে মোটামুটি সাড়া পড়ে গেল। আমি তাদের সাথে যুক্তিতর্ক করলাম। লক্ষ করলাম তার তাদের ভুলটিকে ভুলই মনে করছেনা। বরং এ সামান্য ব্যাপারটিকে খুবই স্বাভাবিক মনে করছে। অন্যদিকে আমার এত সামান্য টাকার অংক দেখানোর সাধুতাকে অপ্রয়োজনীয় ভন্ডামী মনে করছে। একজন খুব বড় ব্যক্তি আমাকে একটি গল্প বলেছিলেন, অনেকজন পাগলের মধ্যে যদি একজন সুস্থ্য মানুষ যায় তাহলে পাগলরা ঐ সুস্থ্য লোককেই পাগল বলতে থাকে!
আসলে যার রোগ অনেক বড় তার স্বাভাবিকভাবেই ছোট রোগের প্রতি ইনসেনসিটিভিটি তৈরী হয়। আবার তার চেয়েও বড় রোগ হলে ঐ বড় রোগটিও আর বড় মনে হয়না। আর অন্যায়ের ব্যাপারটিও তাই। চর্চার ফলে বড় অন্যায়ও ছোট মনে হয়। কেননা তখন মানুষের মন ইনসেনসিটিভ হয়ে যায়।
আমরা নিজেদের কতটা ইনসেনসিটিভ করতে চাই তা আমাদের উপরই নির্ভর করে। কথাটি আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে আমাদের জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সবক্ষেত্রে সত্য।