ব্যাঙের সর্দি -কথাটির সাথে কমবেশী সবাই পরিচিত। তাদের আবাসস্থল কুয়োর বাইরে কোন পৃথিবী আছে বলে তারা জানেনা-আর জানার প্রয়োজনও বোধহয় করে না।
ব্যাঙের লাফালাফি দেখে মনে হয়- ব্যাঙ সাম্রাজ্যে আর সব নস্যি। ব্যাঙের লাফালাফির পক্ষে-বিপক্ষে হার জিত ধরলে সম্ভবত আমাদের মধ্যে সমান শক্তিধর দুটো দল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ- আমাদের কেউ মনে করেন, সমাজে চলতে হলে নিরীহ থাকাই মঙ্গল জনক, আবার কেউ মনে করেন- বেঁচে থাকতে হলে ব্যাঙের মত চটপটে স্বভাবের বিকল্প নাই।
.............
তবে যে যাই বলুক শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক কিন্তু ব্যাঙ স্বভাবের লোকদের একদম পছন্দ করতেন না। তাহলে শুনুন- একবার তাঁর দলের চটপটে স্বভাবের একলোককে মনোনয়ন না দিয়ে তিনি নিরীহ গোবেচারা টাইপের একজনকে মনোনয়ন দিলেন। এতে তাঁর দলের প্রায় সকলে ক্ষুব্ধ হয়ে এর কারন জানতে চাইলেন। শেরে বাংলা উত্তরে বললেন- আমার অবর্তমানে অন্য কেউ দলের হাল ধরুক তা চাও কিনা? সবাই বললো- তা চাই বৈকি। তিনি আবার বললেন- এমন কাউকে দলে চাও কি না, যে সুযোগ বুঝে ব্যাঙের মত লাফিয়ে অন্য দলে চলে যাবে? সবাই সমস্বরে জবাব দেয়- তা তো চাই না।
তিনি বললেন- তোমার পকেটে যদি তিনটে ব্যাঙ ও তিনটে পাথর একসাথে রেখে দাও কিছুক্ষণ পরে দেখবে পাথরগুলো ঠিকই রয়ে গেছে- ব্যাঙগুলো নাই। এমন লোককে বাছাই করতে হবে-যে পাথরের মত অনড় থেকে সকল প্রতিকুলতায় দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত- আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব:
শেরে বাংলা নেতৃত্ব নির্বাচনের যে কৌশল আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছিলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি আদৌ সে পথে আছে? আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখছি- চারিদিকে ব্যাঙ প্রকৃতির লোকদের জয়জয়কার। যার যত বেশী দল পাল্টানোর অভিজ্ঞতা- সে তত বড় ঝানু রাজনৈতিক ব্যক্তি! ইলেকশন এলে জয়ের পাল্লা যে দলের দিকে ভারি মনে হয়- সেখানেই ব্যাঙের মত লাফিয়ে পড়ে তথাকথিত ঝানু রাজনীতিবিধেরা! আর আমাদের দলীয় প্রধানের তাদের স্বাগত জানাতে তীর্থের কাকের মত বসে থাকে।
তবে ব্যাঙেরও নীতিবোধ বলে কিছু একটা আছে, আমাদের ব্যাঙ প্রজাতির নেতাদের তাও নেই। সুযোগ বুঝে খোলস পাল্টাতে যারা পটু তাদের বোধহয় শেষ রক্ষা হয় না। প্রাণী বিজ্ঞানীরা বলেন- ব্যাঙ আর মানুষের মধ্যে আশ্চর্য ধরনের মিল আছে। পরীক্ষাগারে ছাত্র-ছাত্রীরা সে রহস্য উদঘাটনের জন্য ব্যাঙের ব্যাবচ্ছেদ করে
অতএব সাধু সাবধান- ব্যবচ্ছেদের শিকার হবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:২০