সম্প্রতি আমার প্রিয় রাজনীতিবীদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে আগামী ১৮ মাসের মধ্যেই ১ কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি করবে বিএনপি। এই প্রতিশ্রুতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। প্রশ্ন উঠছে, এ ধরনের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত কি না এবং এটি আদৌ কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে কর্মক্ষম জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটির বেশি। যুব সমাজের একটি বড় অংশ বেকারত্বে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া, তবে বাস্তবায়নে চাই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও শক্তিশালী বাস্তব কাঠামো।
কীভাবে সম্ভব?
একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ অনুযায়ী, খাতভিত্তিক কর্মসংস্থানের মধ্যে কৃষি ও গ্রামীণ খাতে ২০ লাখ, গার্মেন্টসসহ শ্রমনির্ভর শিল্পে ১৫ লাখ, নির্মাণ খাতে ১০ লাখ, আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে ১০ লাখ এবং বিদেশে কর্মী প্রেরণের মাধ্যমে ৫ লাখ চাকরি সৃষ্টি করা যেতে পারে।
শুধু খাতভিত্তিক পরিকল্পনাই নয়, তার সঙ্গে প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি, বিদেশি শ্রমবাজার সম্প্রসারণে কূটনৈতিক উদ্যোগ, এবং উদ্যোক্তা বিকাশে রাষ্ট্রীয় সহায়তা।
কাঠামোগত ব্যবস্থা?
১. জরুরি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পেইন (প্রথম ৬ মাস)
৫০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে স্বল্পমেয়াদী স্কিল ট্রেনিং দিতে হবে। সেই সাথে, ১০০+ জেলায় ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একটিভেশন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) অথোরিটিকে এজন্যে কাজে লাগানো দরকার।
২. কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান প্রসার
গ্রামে কৃষি, মৎস্য ও হাঁস-মুরগি খামারে ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। “এক গ্রামে এক প্রকল্প” মডেল অনুসরণ করলে এটা সম্ভব। বিএনপি সরকার যদি ডিজিটাল কৃষি মার্কেটপ্লেস চালু করে, তাহলে লক্ষমাত্রা পূরণ করা কোন ব্যাপারুই না!
৩. আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম বিস্তার
৫ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে ট্রেনিং দিয়ে বাজারে ছেরে দিতে হবে। সরকারিভাবে Fiverr/Upwork এর মতো অনলাইন মার্কেট সংযুক্তি চালু করা দরকার। চাকরী নিশ্চিত করতে 'ইউথ হাব' চালু করতে হবে প্রতিটি উপজেলায়।
৪. মেগা প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতে শ্রমিক নিয়োগ
সড়ক, রেল, ব্রিজ, হাউজিং প্রকল্পগুলতে ১০ লাখ কর্মজীবীকে নিয়োগ করা দরকার। নগর উন্নয়ন কর্মসূচি, যেমন - Smart City প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।
৫. বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কূটনৈতিক উদ্যোগ
মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, জাপান, ইউরোপে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করতে বি,এন,পি তার নেটয়ার্কিং ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে। প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের জন্য দ্রুত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করলে, কে কোন খাঁতে কাজ করতে ইচ্ছুক ও পারঙ্গম, তা বের হয়ে আসবে।
অর্থায়ন কীভাবে?
সরকারি বাজেট ছাড়াও এই কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং প্রবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি খাত ও অংশীদারিত্বভিত্তিক প্রকল্প (PPP) মডেল বাস্তবায়নের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
মনিটরিং ও স্বচ্ছতা
যেকোনো জাতীয় কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আমার মতে, একটি ওপেন ড্যাশবোর্ড, নিয়মিত অগ্রগতি পর্যবেক্ষনে প্রতিবেদন এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করলে কর্মসূচি বাস্তবায়নে গতি আনা সম্ভব।
উপসংহার
আমি মনে করি, “১ কোটি চাকরি” বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক সহায়তা ও প্রযুক্তিনির্ভর বাস্তবায়ন কাঠামোর মাধ্যমে তা অর্জন অসম্ভব নয়। তবে এই প্রতিশ্রুতি কেবল নির্বাচনী প্রচারণায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবমুখী রূপ দিলে তা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।
লেখক: মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০০