মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। এর কারণ, অনেক ইসলামী দল পাকিস্তান হানাদারদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু, সেই সময়ে, স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার মতো সাহস খুব কম মানুষেরই থাকার কথা। ইসলামী ঘরানার মানুষ হয়েও, ইসলামের ঝাণ্ডা তোলা শাসকগোষ্ঠীর পদলেহী কিছু দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে অসম্ভব সাহসের প্রয়োজন হয়। শহীদ মাওলানা অলিউর রহমান তেমনই সাহসের পরিচয় দিয়ে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
সিলেটের সন্তান মাওলানা অলিউর রহমানের পূর্বপুরুষ হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সফরসঙ্গী হয়ে ইয়েমেন থেকে ভারতবর্ষে আগমন করেন। ৩৬০ আউলিয়াদের একজনের উত্তরসূরি মাওলানা অলিউর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাহফিল করে করে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝিয়ে ছিলেন। তিনি সাহসিকতার সাথে তৎকালীন আলেম সমাজের চোখ রাঙ্গানীকে তুচ্ছ করে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাকে সমর্থন করেছিলেন। লিখেছিলেন 'শরীয়তের দৃষ্টিতে ছয় দফা'। তাঁর এই লেখা বঙ্গবন্ধু সাদরে গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সাথে নিজ হাতে গঠন করেছিলেন 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী ওলামা পার্টি'।
তাঁর এসব কর্মকান্ড তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের দোসরেরা ভালো চোখে দেখেনি। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার লালবাগ এলাকা থেকে মাওলানা অলিউর রহমানকে ধরে নিয়ে যায় পাকি সেনারা। তিন দিন আর চার রাত আটকে তাঁর উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। ১৪ ডিসেম্বর বেয়নেট চার্জ করে চোখ উপড়ে হত্যা করা হয় এই বীরকে।
সময়ের ধূসর আবরণে এমন অনেক মনীষী'র কথা আমরা ভুলে গিয়েছি, যেমন ভুলে গিয়েছে সিলেটের মানুষ। তবে, কোন একদিন না একদিন, আশা করি, তাঁর নামে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন হল বা পাঠাগারের নামকরণ করা হবে।