The Diving Bell and the Butterfly - বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণার নাম
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সিনেমার নাম- The Diving Bell and the Butterfly (original title- Le scaphandre et le papillon )
দেশ- ফ্রান্স
অভিনয়- Mathieu Amalric, Emmanuelle Seigner, Marie-Josée Croze ও আরও অনেকে।
পরিচালকের নাম- Julian Schnabel
রিলিজ ডেট- 23 May, 2007
জনরা- Biography, Drama
IMDb Rating- 8.1/10
একটা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক?
বলতে পারবেন , আমাদের পুরো শরীর কোন কারণে প্যারালাইজড হয়ে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ অবশ হয়ে গেলেও কোন অঙ্গটি অবশ হয় না? কোন সেই অঙ্গ যেটি সচল থাকে?
কি, পারছেন না? চোখ কুঁচকে যাচ্ছে এই ছোট্ট একটা প্রশ্নের উত্তর বের করতে? জি হ্যাঁ, আপনার যেই অঙ্গটি কুঁচকে যাচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে- উত্তর সেই অঙ্গটিই- আপনার সুন্দর দুটি চোখ।
Jean-Dominique Bauby ফ্রান্সের বিখ্যাত Elle ম্যাগাজিনের এডিটর। অর্থ, যশ, খ্যাতি- কোনকিছুরই অভাব নেই জীবনে। ভালোবাসার মানুষ আর তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে আনন্দেই দিন কাটছিল তার। তবে কপালে আনন্দ বেশিদিন সইল না, ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরের আট তারিখ হঠাৎ করেই স্ট্রোক করলেন তিনি। সাধারণ কোন স্ট্রোক যে নয়, সেটা বোঝা গেল তার জ্ঞান ফেরার সময়সূচী দেখেই- ২০ দিন পড়ে চোখ খুললেন তিনি- দুইটি নয়, একটিমাত্র চোখ, তার বাঁ চোখ। জানতে পারলেন, বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি, যার নাম locked-in syndrome- এই রোগে আপনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণভাবে প্যারালাইজড হয়ে থাকলেও, মানসিকভাবে আপনি সচল থাকবেন। শরীরের অন্য সব অঙ্গ অবশ হয়ে গেলেও, চোখ অবশ হয়না এই রোগে। তবে তার ক্ষেত্রে কপাল আরেকটু খারাপ, ডান চোখের সমস্যা হওয়ার কারণে ডাক্তাররা ইতিমধ্যে তার ডান চোখ সেলাই করে বন্ধ করে দিয়েছেন। বেঁচে থাকার জন্য তার একমাত্র অবলম্বন এখন একটি চোখ, তার বাঁ চোখ।
অন্য কেও এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে কি করত? বেঁচে থাকার ইচ্ছা হয়তো অনেক আগেই ত্যাগ করত। এক চোখ নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করত। কিন্তু Bauby এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বেঁচে থাকার আশার প্রদীপ তিনি জ্বালিয়ে রেখেছিলেন শত ঝড়ঝাপটার বিরুদ্ধে লড়ে- লড়াইটা করেছেন এই এক বাঁ চোখ দিয়েই। অদ্ভুত এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি তার এই এক চোখ দিয়ে- একটা আস্ত বই লিখে ফেললেন- নিজের আত্মজীবনী! কীভাবে? Bauby কি বলতে চান, তা বোঝার জন্য একজন সার্বক্ষণিক নার্স নিয়োগ করা হয়, যিনি বর্ণমালাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বলতেন, যেই শব্দটি Bauby বলতে চাইতেন, সেটি যেই বর্ণ দিয়ে শুরু হত- সেই বর্ণ বলার সময় তিনি চোখের পাতা ফেলতেন- নার্স বুঝে যেত তিনি এই বর্ণ দিয়ে কোন শব্দ বলতে চাচ্ছেন। ধরুন তিনি Egg শব্দটি বলতে চাচ্ছেন, নার্স যখন A থেকে শুরু করে E তে এসে পৌঁছুতেন, তখন Bauby চোখের পাতা বন্ধ করতেন একবার- শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এভাবেই তিনি তার গোটা আত্মজীবনী লিখেছেন। এভাবে একটি শব্দ বলতে তার সময় লাগতো প্রায় দুই মিনিটের কাছাকাছি সময় আর বইটা লিখতে তিনি প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি বার চোখের পাতা ফেলেছেন। সিনেমার শেষে কি হয়, তা নিজেই দেখে নিবেন বলে আশা রাখি।
দ্যা ডাইভিং বেল অ্যান্ড দ্যা বাটারফ্লাই Bauby নামক মানুষটির বিরল এক রোগে আক্রান্ত হওয়া ও তার আত্মজীবনী লেখার কাহিনী নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমা। অন্য দশটা সিনেমা থেকে এই সিনেমাকে আলাদা করে দিয়েছে এই সিনেমার থিম আর মেকিং। সিনেমার শুরু হয় একটি চোখ খোলার মাধ্যমে, চোখের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে- দেখলে মনে হবে বাঁ চোখের ভেতরে কেও ক্যামেরা ঢুকিয়ে শুটিং করছে! প্রায় ৪০ মিনিটের কাছাকাছি সিনেমার সময় কেটে যায় এভাবেই বাঁ চোখ দিয়ে দেখে, পরিচালক দর্শকদের বাধ্য করেন Bauby এর কষ্ট বোঝার জন্য তার মতই এক চোখ দিয়ে সব দেখতে- পরিলচালকের মুনশিয়ানা সম্ভবত এখানেই। এরকম মেকিং হাতেগোনা খুব কম সিনেমাতেই দেখা যায়।
একটি দৃশ্যের কথা না বললেই নয়, Bauby এর ৯২ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা যিনি চার দেয়ালের একটি ঘরে বন্দি তার নিজের অসুস্থতার জন্য, এতটাই অসুস্থ তিনি যিনি সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচেও নামতে পারেন না, অসুস্থ ছেলের সাথে দেখা করা তো দূরের ব্যাপার- সেই বাবার সাথে যখন Baubyর টেলিফোনে কথোপকথন হয়। নিজের মনের কথা বাবাকে জানানোর জন্য নিজের এক চোখ দিয়ে Bauby তার নার্সের দিকে যেই এক্সপ্রেশন দেয়, তা দেখলে চোখের পানি আটকে রাখা কষ্টের। নিজের অসুস্থতার কারণে অনেক না বলা কথার মাধ্যমে যেন অনেক কথা বলা হয়ে যায় বাবা আর ছেলের মাঝে।
সিনেমার মেকিং, ডিরেকশন, পরিচালনা, স্ক্রিনপ্লে, অভিনয়- সব এক কথায় ফার্স্ট ক্লাস। কেন্দ্রীয় চরিত্রে Mathieu Amalric শুধু বাঁ চোখ দিয়ে পুরো ছবিতে যেই এক্সপ্রেশন দিয়েছেন, অনেক সিনিয়র অভিনেতাও তা পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার সহ বেশ কিছু পুরস্কার জিতেছে এই সিনেমাটি। অস্কারেও চারটি ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পেয়েছে, যদিও জিততে পারেনি কোনটাতেই। ব্যাপার না, যেই সিনেমা মন জিতে নেয়, তার অস্কার না জিতলেও চলে সম্ভবত। সিনেমার মন্দ দিক পাই নি বলতে গেলে, তবে অনেকের কাছে স্ক্রিনপ্লে একটু ধীরগতির লাগতে পারে। যদি কোন ধুমধাম একশন আশা করেন এই সিনেমার কাছ থেকে, তাহলে ভুল করবেন- সিনেমার সিংহভাগ দৃশ্য সংলাপ নির্ভর।
ট্রিভিয়া- ১. এতক্ষণ এই লেখা পড়ে যারা সন্দেহ করছেন “ধুর! এমন হয় নাকি? গাঁজাখুরি কাহিনী- যতোসব! এক চোখ দিয়ে এগুলো করা সম্ভব নাকি জীবনে?” , তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি- সিনেমাটি সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে বানানো! জি হ্যাঁ, Bauby নামের এই মানুষটি সত্যি ছিলেন এবং তিনি এভাবেই নিজের আত্মজীবনী লিখে গেছেন। তার আত্মজীবনীর নাম অনুসারেই সিনেমার নাম হয় The Diving Bell and the Butterfly.
২. কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রথমে জনি ড্যাপের অভিনয়ের কথা থাকলেও "Pirates of the Caribbean: At World's End.” সিনেমার শিডিউল এর সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি পড়ে এই চরিত্রে অভিনয় করতে পারেননি।
৩. সিনেমাটি প্রথমে হলিউড এই তৈরি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পড়ে পরিচালক ফ্রান্স থেকে সিনেমাটি তৈরি করে করেন, এটা করার জন্য তিনি ফ্রান্স ভাষাও শিখেছেন।
৪. সিনেমাটি যাতে অনেক বেশি বাস্তবধর্মী লাগে, এই কারণে পরিচালক ঠিক সেই হাসপাতালেই শুটিং করেন যেখানে আসল Bauby অসুস্থ হয়ে ভর্তি ছিলেন। এমনকি যেখানে Bauby অবসর সময়ে বিশ্রাম নিতেন, সেখানেও তিনি শুটিং করেন।
প্রাণী হিসেবে আমরা মানবজাতি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ- অল্পতেই জীবন নামক অসাধারণ এক উপহারের প্রতি আমাদের ঘৃণা ধরে যায়, নিজের হাতে নিজের জীবন ধ্বংস করতেও আমরা পিছিয়ে যাই না। প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, বাবা মায়ের বকুনি, প্রিয় নায়কের সাথে দেখা করতে না পেরে জীবন দিয়ে দেয়া, স্মার্ট ফোন কিনতে না পেরে আত্মহত্যা এমনকি ঈদের ড্রেস “পাখি” কিনতে না পেরেও অনেকের আত্মহত্যার কথা শুনতে পারা যায়। কিন্তু Baubyর মতো কিছু মানুষ আমাদের দেখিয়ে যান যে, বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়েও, পুরো শরীরের একটি অঙ্গও নাড়ানোর ক্ষমতা না থাকার যন্ত্রণার পড়েও, শুধু একটি চোখের পাতা ফেলে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়- কীভাবে নিজের জীবন সম্পর্কে বই লিখে আরও শত শত মানুষকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়া যায়! The Diving Bell and the Butterfly – এখানেই অন্য দশটি সিনেমা থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই সিনেমা যেই ফিল বা “অনুভব” দান করে, সেটি অনেক নামীদামী স্টারকাস্টের বিলিয়ন ডলার কামানো সিনেমাও দান করেনা। The Diving Bell and the Butterfly শুধু সিনেমা নয়, এটি সিনেমার চেয়েও বেশি কিছু, এটি বেঁচে থাকার এক অনুপ্রেরণার নাম
ডাউনলোড লিঙ্ক- Click This Link
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন