somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিস্তিমাত- অর্ধেক আনন্দ তুমি অর্ধেক হতাশা!

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ঈদের দিন সবাই যখন গরু নিয়া ব্যস্ত, আমি তখনও ব্যস্ত সিনেমা নিয়া- সিনেমার নাম কিস্তিমাত।

ট্রেলার দেখে অনেক বেশি আশাবাদী ছিলাম, তবে সিনেমা দেখার পড় মনে হল "বেশি কিছু আশা করা ভুল, বুঝলাম আমি এতদিনে" গানটির কথা।
আগেই লাফ দিয়েন না, সিনেমা দেখার মতো অবশ্যই। বিস্তারিত বলছি।

কাহিনীতে নতুনত্ব নেই, সেই পুলিশের সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এর সংঘর্ষ। তার মাঝে দিয়ে সুন্দরী "মডেল" নায়িকার সাথে নায়কের "অঢেল" প্রেম। মাঝে নায়কের "ফেঁসে যাওয়া" ভিলেনের মাধ্যমে। এরপরে নায়কের আবিষ্কার "আজ থেকে বিশ বছর আগে এই ভিলেনই তার প্রাণের বাবা" কে খুন করেছিল। অবশেষে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের কিস্তিমাত।
তাহলে কিস্তিমাত ঢালিউডের আর দশটা সিনেমা থেকে আলাদা কোথায় ও ক্যামনে? আলাদা মেকিং এ... নতুন চকচকে বোতলে পুরনো মদের মতো। আশার কথা হল, বোতলটা বেশ চকচকে- আকৃষ্ট করে দারুণ। এরকম মেকিং এ সিনেমা হলে ইন্ডাস্ট্রির জন্য তা আশার খবর।

ভালো দিক দিয়ে শুরু করি। ছবির সবচেয়ে দুর্দান্ত জিনিস ছবি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক - গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয় একেবারে! প্রতিটা সিনের জন্য পারফেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি গান শ্রুতিমধুর- টাইটেল ট্র্যাক, কাজলরেখায়, স্বপ্নেরই মতো- গান দুটো বেশ ভালো লাগে। গানের মেকিং, ক্যামেরার কাজ, লোকেশন, কস্টিউম ভালো। আইটেম সং আরও ভালো করা যেত অনেক। অভিনয়ের দিকের কথা বললে, ভালোবাসা জিন্দাবাদ বাদে এই প্রথম আরেফিন শুভ নিজেকে একক নায়ক হিসেবে পর্দায় হাজির করেছেন (অগ্নি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা ছিল)। মন্দ করেননি তিনি, বেশ স্টাইলিশ ছিলেন,গালে খোঁচা দাড়ি, মুখে দিয়াশলাইয়ের কাঠি, চোখের প্রায় সবসময় (রাত ছাড়া :P ) সানগ্লাস- পুলিশের পোশাকে তাকে বেশ মানাচ্ছিল। সিনেমায় তার ঘোড়া নিয়ে এন্ট্রি সিন- দারুণ। সিনেমার একশন দৃশ্য- বেশ দারুণ ও নতুনত্ব আছে। "ধিশু মাইক মাইক" টাইপ না, ছুরি দিয়ে ভিলেনের সাথে মারামারির সিকুয়েন্স জোস ছিল। খালি হাতের মারামারিও জোস। আঁচলের অভিনয় ভালো- তবে পোশাক সিলেকশনের দিকে নজর আরেকটু বেশি দিলে ভালো হয়। মিশা সওদাগর ভালো, তার "আমি কবিতা লেখা কবি না, আমি ওয়ান অ্যান্ড অনলি লায়ন রবি, আমার সাথে টক্কর দিলে সোজা কবরে চলে যাবি" এই ধরনের আরও রাইমের মতো সংলাপ দর্শকদের বেশ আনন্দ দিয়েছে। তবে সিনেমার সারপ্রাইজ হচ্ছেন সম্ভবত মিশার ছোটভাই ভূমিকায় অভিনয় করা "টাইগার রবি"। তার দাঁত কিরমির করা- দর্শকদের বেশ আনন্দ দিয়েছে। সুযোগ পেলে ভিলেন হিসেবে তিনি বেশ ভালো করতে পারবেন।

ভুল অনেক আছে সিনেমাতে, ছবির সবচেয়ে দুর্বল জিনিস ছবির গল্প আর স্ক্রিনপ্লে। পরিচালক আশিকুর রহমান নিজে গল্প লিখলে সম্ভবত সেটা বেশি ভালো হত। শুভ যেই গাড়ি নিয়ে শুরুতে ভিলেনদের তাড়া করেন, ভিলেনের গুলিতে সেই গাড়ি উড়ে আগুন ধরে যায় , অথচ শুভ অক্ষত! তিনি শিস দিতেই তার জন্য ঘোড়া হাজির! ক্যামনে কি ভাই? মনে হয় "রাখে আল্লাহ্‌ , উড়ায় কে?" নীতিতে বিশ্বাসী আমরা। মডেল চরিত্রে অভিনয় করা আঁচল শুভর পাশের বাসায় ভাড়া নেন, প্রথম দেখেই তিনি শুভর প্রেমে পড়ে যান- এই প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়া, গলায় পড়ে যাওয়া আর কত দেখব? নায়কের সাথে নায়িকার ধাক্কা লেগে গান শুরু যদি এখনও দেখতে হয়, তাইলে ক্যামনে কি? শুভর পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করা "পুলিশ" ক্যারেক্টারটি আসলে কেমন সেটাই বোঝা গেল না- অবৈধভাবে যারা জমি দখল করতে চান, তাঁদেরকে শুভ তাড়িয়ে দেন 'কাবাডি' খেলে তাঁদেরকে হারিয়ে আর দুই তিনটা লাথি ঘুষির মাধ্যমে! খেলার এত শখ থাকলে খেলোয়াড়দের সাথে জাতীয় পর্যায়ে খেলেন, অপরাধীদের সাথে ক্যান? অনেক জায়গায় শুভর ন্যাকামি আর অতি অভিনয় সহ্য করা বেশ মুশকিল। আঁচলের মতো মডেল আর দেখি নাই কখনো, আল্লাহ্‌র দিনে ২৪ ঘণ্টা তিনি "গভীর লেভেলের" মেকাপ করে থাকেন! ডায়েট করে অজ্ঞান হয়ে গেছেন, শুভ তাকে হাসপাতালে কাঁধে করে নিয়ে গেছেন (জোর আছে কাঁধে বটে), সেখানেও তিনি হাই লেভেলের মেকাপ করা- গলার দামি মালাও অজ্ঞান হওয়ার পড়েও যথাস্থানেই ছিল। নিজেকে আঁচল এতটাই পছন্দ করেন- বাসার সোফার কুশনে লেখা " আই লাইক মি"- হায়রে! টাইগার রবি আঁচলের হাতে এসে বালা পড়িয়ে যান, সেটা দেখে শুভ ক্ষিপ্ত হয়ে আঁচলকে নিয়ে টাইগারের কাছে যান, গিয়ে দেখেন টাইগার আগেই শুভর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন- অথচ এর আগে কখনো শুভর সাথে টাইগারের দেখাও হয় নাই- তাইলে তিনি জানলেন ক্যামনে শুভ আসছেন তার জন্য? তার সাঙ্গপাঙ্গরাও কই গেল তখন?! বাড়ীওয়ালার কথা ঠিকমতো না বুঝেই আঁচল শুভকে গুন্ডা ভাবতে লাগলেন, আর শুভ- যিনি একজন দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার, তিনি সারাদিন পুলিশের পোশাকে থাকলেও, আঁচলের সামনেই তিনি শুধু নরমাল পোশাকে আসেন। এত বছর পড়ে শুভ তার হারানো মা আর বোনকে খুঁজে পেলেন, অথচ তাঁদের সেরকম কোন রেসপন্স বা রিএকশনই নাই- কিছু চোখের পানি ছাড়া! শুভ বললেন আর তারা বিশ্বাস করে ফেললেন- আসলেই বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদুর। শুভর বোন হাসপাতালে কোমায়- অথচ আঁচল সেই বোনের জন্য তার পাশে সমানে আপেল, কমলা- টাইপের ফল এনে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত! কোমায় চলে যাওয়া মানুষ ফল দিয়া করবে কি?! নাকি কোমা থেকে ফিরে আসার আগেই ফলের ব্যবস্থা করে রেখেছেন , যদি পড়ে না পাওয়া যায় এই চিন্তা করে? শুভর মতো শুভর মা আর বোনেরও কই মাছের প্রাণ- ছোটবেলায় গাড়ি সহ পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েও ( যেই গাড়ি পড়ার পড়ে ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের সমান বিস্ফোরণ হয় দুর্বল গ্রাফিক্স এর মাধ্যমে) তারা বেঁচে যান- কীভাবে? কুনু ব্যাখ্যা নাইক্কা! শুভ আর আঁচলের উপরে হেলিকপ্টার নিয়ে হামলা (এখানেও দুর্বল গ্রাফিক্সের হেলিকপ্টার) হওয়ার পড়ের সিনেই তারা অক্ষত, কিচ্ছু হয় নাই তাঁদের, সমানে সমান তালে, নারী পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে তারা গোলাগুলি করেই যাচ্ছেন। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয়- গোলাগুলির মাঝে, একদম মাঝে একটা sad romantic গান- আই মিন সিরিয়াসলি!? গোলাগুলি শেষ হবার পড়ে ভাবলাম বাকি মারামারি দেখানো হবে, সেটাই হল- একটা বোমা ফুটল, মিশার ফ্যাক্টরিতে আগুন... কোন সিকিউরিটি নাই যেন, শুভর জন্য দরজা খুলা- ভাই আসেন, বোমা দিয়া উড়ায় দিয়া যান! :/ বাবার হত্যার পড় যেই ডিসি শুভকে সন্তানের মতো লালন পালন করেছেন, সেই মানুষকে শুভ একবার ডাকছেন আঙ্কেল, পড়ের দৃশ্যতেই ডাকছেন স্যার- যেকোনো একটা ডাকেন ভাই! ডিসি চরিত্রে কাশেম আলী দুলাল আর নায়িকা চরিত্রে আঁচলের উচ্চারণে বেশ সমস্যা আছে- বিশেষ করে "পতিশোধ" আর "মিত্তু" (মৃত্যু) বলাতে... শুভর বাবা ফ্যামিলিকে নিয়ে গাড়িতে চড়ে যাচ্ছেন- অথচ পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে গাড়ি চলছে না, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। এরকম আরও হাজারও হতাশাজনক ভুলে ঘেরা কিস্তিমাত।

মেকিং এর জন্য সিনেমাকে পাশ মার্ক দেয়া যায়, বাট যেই আশা ছিল সেটা পূরণ হয় নাই... ছাড়া ছাড়া লাগছিল গল্প বেশ কিছু জায়গায়- কি থেকে কি হচ্ছে! আশিকুর রহমানের কাছে অনুরোধ থাকবে আরেকটু সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে সিনেমা বানাতে। গল্পের দিকে জোর দিন- গ্রাফিক্স, স্টাইলে নজর কম দিলেও চলবে, দর্শক একটা "চেয়ার থেকে যাতে না উঠতে পারি" টাইপ গল্প চায়... সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

কিস্তিমাত এখন আসলেই কতটা কিস্তিমাত করতে পারে- সেটাই দেখার বিষয়।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×