somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার "হিরো দ্যা সুপারস্টার" দর্শন :) :) :)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সিনেমার নামঃ হিরো দ্যা সুপারস্টার
পরিচালকঃ বদিউল আলম খোকন
অভিনয়ঃ শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, ববি, মিশা সওদাগর, নূতন, আহমেদ শরীফ, অমিত হাসান, শিবা শানু, আফজাল শরীফ, উজ্জ্বল প্রমুখ।

ঈদের বাকি তিনটি সিনেমা থেকে এই সিনেমাটি দেখার ইচ্ছা বেশি ছিল, কারণ হল শাকিব খান এই প্রথম সিনেমাতে নিজের “টাকা ঢেলেছেন” অর্থাৎ তিনি নিজে এই সিনেমার প্রযোজক বা প্রোডিউসার। যতটুকু আগ্রহ ছিল, সাড়ে পাঁচ মিনিটের ট্রেলার দেখে সেই আগ্রহ কমে গিয়েছিল- তারপরেও চলে গেলাম হলে সিনেমাটি দেখতে।
একটা অদ্ভুত তথ্য দিয়ে শুরু করি- আমি প্রথম দিন হলে গিয়ে লাইনে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও এই সিনেমার টিকিট পাই নাই! প্রচণ্ড ভিড়! গত দুই বছর ধরে প্রায় নিয়মিত হলে গিয়ে সিনেমা দেখছি- আর কোন ঈদে এরকম অবস্থা দেখি নাই। টিকেট না পেয়ে একদিকে মেজাজ খারাপ হলেও, আরেকদিকে মেজাজ ভালো ছিল এই ভিড় দেখার কারণে।
যাকগে, পরের দিন নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে যাওয়াতে ভাগ্যে টিকেট “নসিব” হল। হলে তিল ধারণের জায়গা নাই, বেশিরভাগ সপরিবারে এসেছেন। জায়গা না হওয়াতে অনেকে বাইরে থেকে আলাদা চেয়ার এনে পিছনে বসে এমনকি অনেকে দাঁড়িয়েও আছেন সিনেমা দেখার জন্য! এ এক অদ্ভুত বিরল দৃশ্য!
কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না, হলে গিয়েই দেখবেন আশা করি। নিজের প্রথম প্রযোজিত সিনেমা নিয়ে “কিং খান” এর কাছে যতটা আশা ছিল, ততটা পাই নি- সত্যি বলছি অ্যান্ড সরি ফর দ্যাট- কিন্তু শাকিব খানকে পাশ মার্ক অবশ্যই দেয়া যায় এই সিনেমার জন্য- এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
ভালো দিক দিয়েই শুরু করি। ছবির কাহিনীকার হলেন কাশেম আলী দুলাল। তেলেগু ফিল্ম “রেবেল” এবং আরও বেশ কিছু তামিল সিনেমার কাহিনী “ব্লেন্ড” করে তিনি হিরো দ্যা সুপারস্টার এর কাহিনী বানিয়েছেন। তবে তার “ব্লেন্ডিং” ভালো লেগেছে। দর্শককে সিটে বসিয়ে রাখার মতো করে তিনি কাহিনী সাজিয়েছেন, কিছুক্ষণ পর পর কাহিনিতে নতুন মোড়, ছোটোখাটো টুইস্ট- মন্দ না। নিজের প্রথম সিনেমাতে শাকিব বেশ খরচ করেছেন বলে বোঝা যায়, ১০- ২০ টা গাড়ি, হেলিকপ্টার, গানের জন্য দারুণ লোকেশন- সবই ঠিকমতো করেছেন। শুকিয়ে যাওয়ার পর অপু বিশ্বাসের নতুন রূপ বেশ ভালো লেগেছে- আশা করি তিনি এরকমই থাকবেন। “যেখানেই যাবে, আমাকেই পাবে” আর “সো সুইট হিরো” গানদুটো ভাল লেগেছে। স্বল্প সময়ের জন্য এসেও উজ্জ্বল বেশ অভিনয় করেছেন। আফজাল শরীফ দর্শকদের বেশ আনন্দ দিয়েছেন।

ছবির ভুল বলে শেষ করা যাবেনা- মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণ হল, ভুলগুলো খুবই হাস্যকর- একটু নজর দিলে আর যত্নের সাথে কাজ করলেই এগুলো হত না। লাফ দিচ্ছেন তেলেগু সিনেমার নায়ক, আর অবতরণ করছেন শাকিব খান! কি দরকার ছিল এই কাটপিসের? ছবির গ্রাফিক্স খুবই হাস্যকর। শাকিব খান শুকনো রাস্তার মাঝে নিজের জুতো সরাচ্ছেন আর সেখান থেকে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে, ভিলেনকে আছাড় মারছেন আর সেখান থেকে “দুই টন” ধুলা উড়ছে- কোন দরকারই ছিল না এগুলোর! ভিলেনদের রাতের বেলা শাকিব খান মেরে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছেন, পরের দিন সকালে সেই পড়ে থাকা ভিলেনদের শরীরে রক্তের কোন চিহ্নই নাই! সেটা কি বাষ্পীভূত হয়ে গেছে নাকি কে জানে? :P উজ্জ্বল যেই অভিনেতাকে ( নাম ভুলে গেছি) মারছেন, সেখানকার গ্রাফিক্স খুবই হাস্যকর, উজ্জ্বল এর attitude ই যথেষ্ট ছিল সেখানে, আলাদা গ্রাফিক্স আর ধুলার দরকার কি সেটা কিছুতেই মাথায় ঢুকল না! শাকিবের আস্তানা, উজ্জলের আস্তানা, মিশার আস্তানা, আহমেদ শরীফের আস্তান- সব জায়গায় যারা বন্দুক নিয়ে পাহারা দিচ্ছে, অতি দুঃখের ব্যাপার হল সেই সবগুলো বন্দুক খেলনা বন্দুক! বর্তমানের ছোট বাচ্চারাও এই “সস্তা” বন্দুক দিয়ে খেলা করেনা! অপু বিশ্বাস বললেন- আমি ভার্সিটি যাচ্ছি। আর শাকিব অপুর বোন(?!) ভূমিকায় অভিনয়কারী নূতনকে জিজ্ঞাসা করলেন “ ও কোন কলেজে পড়েন? নামটা জানতে পারি?” উত্তরে নূতন বলেন “কানাডিয়ান ভার্সিটি”! আরে বাপ, তোরা সবাই মিলে আগে ঠিক করে অপু কিসে পড়ে- কলেজে না ভার্সিটিতে না কিন্ডারগার্ডেনে! :/ :P ববির অভিনয়ে উন্নতির কোন ছাপ নেই, জাস্ট “শোভাবর্ধন” করেছেন। নূতন এই বয়সে এসে কেন এইসব অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি আর ড্রেসআপ করছেন- হলে তিনঘণ্টা বসেও তার কোন কূলকিনারা করতে পারলাম না! মিশা সওদাগর, অমিত হাসান- কারো কাছ থেকেই যেই ধরনের “ভিলেনিশ” আচরণ আশা করেছিলাম, তা পাইনি, গতানুগতিক করেছেন, তবে মিশার “জেতা ম্যাচ! জেতা ম্যাচ ছিল, বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হল!” সংলাপটি দর্শকদের বেশ আনন্দ দিয়েছে। গানের লোকেশন ভালো হলেও গানের “দৃশ্যায়ন” এ কোন নতুনত্ব নাই। উজ্জ্বল যখন নিজের বাড়িতে প্রবেশ করছেন, তখন হল দিন আর যখন বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালেন, তখন পিছনে দেখা গেল অন্ধকার মানে রাত! উঠান থেকে দরজায় আসতে রাত হয়ে গেল- ক্যামনে কি?! :P যাদেরকে মার দেয়া হচ্ছে, তারা ক্যাবলের সাহায্যে ঝুলে আছে- সেটা স্পষ্ট! আর ভুল ধরতে ইচ্ছা করছে না, যত ভুলের কথা বললাম, সবগুলোর দায়িত্ব বর্তায় পরিচালক বদিউল আলম খোকনের বাজে ডিরেকশন আর এডিটরের বাজে এডিটিং এর উপর। আরেকটু সময় দিলে বা আরও যত্ন নিয়ে কাজ করলে এগুলো হত না।

সবার শেষে আসি “কিং” সাহেবের কথায়। নিজের প্রথম প্রযোজিত সিনেমাকে “স্টাইলিশ” বানানোর জন্য শাকিব বেশ ভালো রকমের পরিশ্রম করেছেন- সেটা পরিস্কার। পুরা ছবিটা বলতে গেলে তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন- ওয়ান ম্যান শো। অভিনয়ের চেয়ে নিজের “স্টার পাওয়ার” বা “হিরোইজম” এ তিনি বেশি জোর দিয়েছেন- যার কারণে সিনেমাটি দর্শক খেয়েছে এবং খাচ্ছে। শাকিব এই ছবিতে ডবল পার্ট- দুইটা চরিত্র তিনি আলাদাভাবে ভালই ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে “হিরা” চরিত্রে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর গেটআপ এরকম হয় কিনা- এটা শাকিবের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। কিন্তু “হিরো” চরিত্রের ক্ষেত্রে তিনি দারুণ। শাকিবের কস্টিউম কিছু ক্ষেত্রে চোখে বেশ পীড়া দেয়, অন্য কিছু জায়গায় বেশ আরাম দেয়। শাকিবের নাচ নিয়ে কথা না বললেই নয়- দুর্দান্ত নেচেছেন তিনি এই ছবিতে। বেশ কিছু কঠিন স্টেপ তিনি বেশ দারুণভাবেই করেছেন এবং বোঝা যায় এর পিছনে তার পরিশ্রম রয়েছে বেশ ভালো ধরনের। ছবির শেষের দশ মিনিটে তার অভিনয় বেশ ভালো লাগে তবে এই অভিনয়ের পরিমাণটা আরেকটু বেশি হলে আরও ভাল্লাগত। একটি দৃশ্যের কথা না বললেই নয়, আহমেদ শরীফের কাছ থেকে কথা আদায়ের জন্য শাকিব খান তাকে বেঁধে তার পায়ে আর হাতে “ড্রিল মেশিন” দিয়ে ফুটো করে দেন- দারুণ ছিল সেটার দৃশ্যায়ন!

সব কথার শেষ কথা- হিরো দ্যা সুপারস্টার একটি এন্টারটেইনিং সিনেমা, কাহিনীর মারপ্যাঁচ, ছোটোখাটো টুইস্ট, শাকিবের স্টার পাওয়ার- সব মিলিয়ে এই সিনেমা মন্দ লাগবে না, সময় ভালো কাটবে। আশা করি শাকিব সামনে আরও সিনেমা প্রযোজনা করবেন, হাস্যকর ভুল কাটিয়ে উঠবেন এবং ভালো ডিরেক্টরদের সুযোগ দিবেন। বদি আর সাফিদের এই ধরনের ডিরেকশন আর কত? হ্যাপি বাংলা সিনেমা ওয়াচিং:)

পুনশ্চঃ শাকিবের জনপ্রিয়তা নিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে, একবার হলেও হলে যাওয়ার একটু অনুরোধ করছি। শাকিবকে যখন প্রথম দৃশ্যে সিনেমাতে দেখানো হয়, মানুষের চিৎকারে কানে তালা লেগে যাবার জোগাড়! মানুষ যে তার জন্য কি ভয়াবহ ধরনের পাগল- সেটা হলে না গেলে টের পাওয়া একটু হলেও কঠিন। হ্যাঁ, তার এই জনপ্রিয়তা একটি “নির্দিষ্ট শ্রেণী”তে সীমাবদ্ধ, কিন্তু এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে শাকিব যদি ভালো মানের কাজ করেন, তাহলে সকলশ্রেণীতে তার জনপ্রিয়তার প্রসার ঘটতে খুব বেশি সময় লাগবে না- এটা শাকিব যত দ্রুত বোঝেন, ততই তার জন্য মঙ্গল। :)
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×