somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

No Mercy : বেস্ট কোরিয়ান রিভেঞ্জ থ্রিলার :)

০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





সিনেমার নামঃ No Mercy ( নো মারসি)
বাংলা অর্থঃ কোন ক্ষমা নাইক্কা! :P
সিনেমা সম্পর্কে অনেক কিছু বলার আগে একটা পরিস্কার সতর্কবাণী দিয়ে দিতে চাই, তানাহলে পড়ে আমাকে খামোখাই গালিগালাজ করতে পারেন। সতর্কবাণী হল, এই সিনেমা সবার জন্য না, এই সিনেমা সবার হজম হবে না।

বেশ নামডাকওয়ালা একজন বিখ্যাত ফরেনসিক ডাক্তার, নিজের কাজে সিদ্ধহস্ত বলে বেশ সুনাম তার। স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন, এক মেয়ে আছে, সেও বোর্ডিং স্কুলে। খুশির খবর হল ১৩ বছর পর তার মেয়ে তার কাছে ফিরে আসছে। ডাক্তার ভাবছেন- “মৃত” শরীরের সাথে তো অনেক বছরই কাটানো হল, এবার নাহয় শুধু “জীবিত” মেয়ের সাথে সময় দেবেন। এমন সময়ই একটা খুনের ঘটনা ঘটে। জঙ্গলে একটি মেয়ের লাশ পাওয়া যায়, যার শরীর থেকে তার মাথা, দুটি পা এবং দুটি হাত বিচ্ছিন্ন করে অত্যন্ত নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ডাক পড়ে সেই ফরেনসিক ডাক্তারের। এই কেসের ইনভেস্টিগেশন এর দায়িত্ব পড়ে এক সদ্য জয়েন করা লেডি পুলিশ অফিসারের ঘাড়ে, যিনি কিনা আবার এই ডাক্তারেরই প্রাক্তন ছাত্রী। খুনিকে বের করতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়না তাদের, নিজের দোষ স্বীকারও করে নেয় খুনি। খুনির সাথে ডাক্তার যখন প্রিজন সেলে একা দেখা করতে যান, তখন তিনি জানতে পারেন, খুনি আগেই তার একমাত্র মেয়েকে অপহরণ করেছে, নিজের মেয়েকে বাঁচানোর একটাই উপায় ডাক্তারকে বাতলে দেয় খুনি- “আমার বিরুদ্ধে যত প্রমাণ পেয়েছ, তার সবগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে আমাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তি হিসেবে জেল থেকে বের করো, তানাহলে তোমার একমাত্র মেয়ের চেহারা তোমার আর জীবনেও দেখা হবে না!” রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে দিশেহারা হয়ে যান ডাক্তার! কি করবেন এখন তিনি? নিজে আইনের লোক হয়ে কীভাবে তিনি একজন দোষী ব্যক্তিকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন? কিন্তু না করতে পারলে যে নিজের মেয়েকে আর ফিরে পাবেন না! এই খুনি তার সাথেই শুধু এমন করছে কেন? এত সহজে আইনের কাছে নিজেকে ধরা দেয়ার পিছনে কি তার কোন উদ্দেশ্য আছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে নো মারসি দেখলে :)

ভালো স্ক্রিপ্ট, ভালো অভিনেতা, মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সর্বোপরি একজন ভালো পরিচালক থাকলে যে কতটা দুর্দান্ত একটা টানটান উত্তেজনার সিনেমা বানানো যায়- তার উদাহরণ হল নো মারসি। ভিলেনের অভিনয় কেন জানি মনে হয়েছে আর “এক ডিগ্রী” বেশি ভালো হতে পারতো, তারপরেও যা করেছেন- মন্দ নয়। অভিনয়ে সবাই ভালো- তবে ফাটিয়ে দিয়েছেন ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয়কারী।

এবার আসি আসল কথায়- এটি একটি রিভেঞ্জ থ্রিলার। রিভেঞ্জ বা প্রতিশোধ কীভাবে নেয়া হল সেটি উন্মোচন হয় সিনেমার শেষে এসে, এটা সিনেমার টুইস্ট। আপনি যত বেশি সিনেমা দেখেন না কেন না সিনেমা সম্পর্কে আপনার আইডিয়া অনেক উঁচু লেভেলের হলেও- এই সিনেমার টুইস্ট আন্দাজ করা আপনার পক্ষে অসম্ভব পর্যায়ের। আপনার নার্ভ যতই শক্ত হোক না কেন- সিনেমার শেষে আপনার মুখ হা হয়ে যাবে, ফিনিশিং সহ্য করা কষ্টের হবে। যারা ফ্রান্সের সিনেমা Incendies বা আরেক “বস” কোরিয়ান টুইস্টের সিনেমা Oldboy দেখেছেন, তাদেরও ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগবে। প্রতিশোধ যে কি পরিমাণ নির্মম হতে পারে, কতটা ভয়ানক আর নির্মম হতে পারে, কোরিয়ানদের থিঙ্কিং লেভেল যে কোন পর্যায়ের তা কোরিয়ান রিভেঞ্জ থ্রিলার গুলো দেখলেই বুঝবেন- নো মারসি এক্ষেত্রে আপনার জন্য হবে মাস্ট সি একটি সিনেমা। “প্রতিশোধ” শব্দটা সম্ভবত নিজেও ভয় পেয়ে যাবে কোরিয়ান সিনেমার প্রতিশোধের নির্মমতা দেখলে!

কিছু কথাঃ কোরিয়ান সিনেমা দেখার কিছু সমস্যা হচ্ছে-
১. এদের সবার চোখ ছোট ছোট, নাক চ্যাপ্টা- নায়ক, নায়িকা, কাজের বুয়া, ভিলেন- সব দেখতে একইরকম :P চেহারা মনে রাখা কষ্টের!
২. চেহারার চেয়েও যেটা মনে রাখা কষ্টের, সেটা হল এদের নাম! “অং চিং পং”, “লি সুমাতি ভং” টাইপের নাম যদি সবারই হয় তাইলে ক্যামনে কি?!
৩. রেটিং এর কোন চিন্তা করতে হয়না বিধায় কোরিয়ান সিনেমাতে ভায়োলেন্স বা নৃশংসতা এবং নুডিটি বা নগ্নতার কোন সীমা থাকে না। নো মারসি সিনেমার প্রায় শুরুর দিকেই নগ্নতার দৃশ্য রয়েছে। সুতরাং, এটা মাথায় রেখেই সিনেমা দেখতে বসবেন।
৪. বেশিরভাগ সময় সাবটাইটেলের দিকে নজর রাখতে হয় বলে ( যদিনা আপনার কোরিয়ান ভাষা জানে থাকে :P ) অভিনেতাদের মুখের এক্সপ্রেশনের দিকে নজর দেয়া অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে।
উপরের সমস্যাগুলো আপনার কাছে “কুনু বেফারি না!” হয়, তাহলে কোরিয়ান সিনেমা আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে, যেই মুগ্ধতার শুরু আছে- শেষ নেই। বাই দ্যা ওয়ে, কোরিয়া কিন্তু শুধু থ্রিলার না, সিনেমার অন্যান্য জনরাতেও দুর্দান্ত যেমন- রোম্যান্টিক, ইমোশনাল এবং যুদ্ধের সিনেমা।
হ্যাপি সিনেমা ওয়াচিং!

পুনশ্চঃ কোরিয়ান সিনেমা দেখার পর থেকে হলিউড, বলিউড- সব “পানসে” না, একদম “তিতা” লাগে!
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×