somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সামনে তুলে আনার হয়তো অনেক সময় পাওয়া যাবে, কিন্তু মূল্যবোধকে জাগ্রত করার সময় পাওয়া যাবে না!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কবি তারঁ শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালে নিখিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ সাহেবের বঙ সফরের বর্ণনা প্রদান করেন। সেই কবির নাম নাইবা বললাম। কারণ তার নামটা তেমন একটা পরিচিত না হলেও তিনি বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটির কর্মকর্তা ছিলেন এটুকু বলে রাখি।

সেই সময় কবি অনেক ছোট ছিলেন। বয়স প্রায় ১১ কি ১২ হবে। তিনি তার মামার সঙে রেসকোর্স ময়দানে যান কায়েদে আযমের বক্তব্য শোনার জন্য। তার মামা বলেন, সামনে না বসলে জিন্নাহ সাহেবের মুখখানাই দেখা যাবে না। আর আজ দেখতে না পারলে ভবিষ্যৎ এ আর হয়তো দেখার সুযোগ মিলবে না। কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মঞ্চে উপস্থিত হলেন। সঙে ছিল তাঁর ভগ্নি। কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ সাহেব তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন। প্রথমেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বললেন। তারপর বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বললেন,“ উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা!” রেসকোর্স ময়দানে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা্। হঠাৎ ময়দানের এক কোন থেকে ভেসে এলো কয়েকটি শব্দ! শেম! শেম! কি লজ্জা! কি লজ্জা! এরপর পর্যায়ক্রমে ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠল।

আজ হয়তো অনেকেই নতুন করে আর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে ব্লগপোষ্ট তৈরী করবেন। আজ আমি কোন ইতিহাস লিখব না। ইতিহাসকে সামনে তুলে আনার সময় হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু মূল্যবোধকে জাগ্রত করার সময় হয়তো পাওয়া যাবে না!

জাতি হিসেবে আমরা যে বদ্ধ উন্মাদ আর পাগল তার অনন্য নজির প্রতিবছর ২১ ফ্রেব্রয়ারী তে দেখা যায়(!)
আজ ভাষা দিবস না হওয়া স্বত্বেও পুরো জাতি ভাষা দিবস পালনে ভয়ানক ব্যস্ত আর ভাবখানা এমন যে,শহীদদের শোকে তারা পাথর(!) প্রথম ভাষা দিবস মূলত পালন করা হয় ৮ ফাল্গুন।আর ৮ ফাল্গুন ছিল গতকাল।অর্থাৎ গতকালকের দিনটি ছিল আমাদের অহংকার, ভাষা দিবস।সালাম, রফিক,জব্বার প্রমুখরা ফাল্গুনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জীবন দিয়েছিল ফেব্রয়ারীকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়।

আজ যদি আমরা ফেব্রয়ারীকে পালন না করে ফাল্গুনকে পালন করতাম তবে জাতিসংঘ সারাবিশ্বে ঘোষনা দিত ৮ ফাল্গুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।তখন পুরো বিশ্ব জানতে পারত বাংলাদেশের একটি মাসের নাম ফাল্গুন।আর আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালনের জন্য সারাবিশ্ব ফাল্গুন নামটির মাধ্যমে বাংলাদেশকে চিনতে পারতো। তবেই সালাম,রফিক,জব্বারের আত্নত্যাগ সার্থক হতো।
কিন্তু ভাষা আন্দোলনের সার্থকতা শুধুমাত্র একটাই, উর্দুকে তাড়িয়ে তার স্থানে হিন্দিকে বসিয়ে দিয়েছে! অতীতে বাংলার জনগন যেমন উর্দু ভাষা পুরো বুঝতে পারলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলতে পারতো। আজও তেমনি বাংলার জনগন হিন্দিকে পুরোপুরি বুঝতে পারে এবং বেশ পরিষ্কার হিন্দিও বলতে পারে।

সালাম,রফিক,জব্বার প্রমুখরা যদি আজ দেখতে পারতো যে ভাষার জন্য তারা আন্দোলন করছে তার কি করুন অবস্থা, তবে আমি নিশ্চিত এইবার তারা নিজেরাই নিজেদের গলায় রশি দিয়ে গাছের মগডালে ঝুলে পড়তো(!) চারদিকে এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের আধিক্যে বাংলা মিডিয়ামদের অবস্থা ৭৩ এর কঙ্কাল সার। শহর অঞ্জলে কেউ মামুনি,মাম্মি ছাড়া 'মা' ডাকে বলে আমি শুনিনি। অথচ ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাতই ছিল বাংলা ভাষায় প্রানভরে 'মা' বলার স্বাধীনতা নিয়ে।

হিন্দি সিরিয়ালের কল্যানে বাংলার নারীকূল আজ পরভাষায় দারুন এক্সপার্ট! তাদের মুখের ভাষা এখন এই রকম, "ভাবিসাব আপ খানা খায়েঙ্গে না"!আর তরুনীদের গায়ে শোভা পায়, চিকিনি চামেলী, ঝিলিক,পাগলু,আর পাখি নামক পোষাক সমূহ। এই সবই আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে ধার করা সংস্কৃতি।

বাংলাদেশের অফিস আদালতে আজও চলছে ইংরেজির আধিক্য! আদালতে দাড়িয়ে আছে আধামুর্খ এক আসামী। জজ ঘোষনা দিয়ে দিল, উক্ত আসামীকে আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার হুকুম দেয়া হল। তখন কাঠগড়ায় দাড়ানো আসামী তার উকিলকে জিজ্ঞেস করে, জজ বুড়া মিয়া ইংলিশে ফটর ফটর কইরা ঐগুলা কি কইয়া গেল (!)

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যানে গড়ে উঠেছে অনেক মিডিয়া। তার মধ্যে অন্যতম এফএম চ্যানেলগুলো। এই এফএম চ্যানেলগুলোতে যেহারে হিন্দি গান বাজানো হয় তাতে মনে হয় আমরা যেন হিন্দুস্থানের কোন এক শহরে বাস করছি। আর এফএম চ্যানেলের আরজেদের বাংলিশ উচ্চারণ শুনে মনে হয়, বাংলা ভাষাটা কি এত্তোটাই গরীব যে তাকে ইংরেজির সাপোর্টে উচ্চারণ করতে হবে??
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×