খুবই দ্রুততার সাথে এগোচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে আগামী ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে অভিযুক্তদের সাজা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সাথে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারসহ অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও নিষ্পত্তি করা হবে। ভারতকে আশুগঞ্জ হয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট প্রদানের বিষয়টিও এরই মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ও বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিও ফায়সালা করতে চায় এরই মধ্যে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ সদস্যের এই কমিটির প্রথম বৈঠক ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গতকাল জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ চার নেতাকে গ্রেফতার দেখাতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন। আজ এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মূলত এর মাধ্যমেই শুরু হবে মূল বিচারিক কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকার গত দেড় বছরে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে বর্তমান সময়কে কঠিন চ্যালেঞ্জের বলে মনে করছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব করা হবে না। সরকারি দলের একজন প্রভাবশালী নেতা আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার আমরা প্রথম থেকেই ইস্যু বাস্তবায়নে আছি। এ ব্যাপারে শৈথিল্য দেখানো হবে না। আগেরবারের চেয়ে আওয়ামী লীগ এবার অনেক বেশি পরিপক্ব। আগে যেসব ভুল করা হয়েছে এবার তা হবে না বলে জানান ওই নেতা।
সূত্র জানিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় অনুষ্ঠিত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতকে আশুগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের আখাউড়ার মধ্য দিয়ে আগরতলা পর্যন্ত ট্রানজিট প্রদান করবে। আগামী নভেম্বর মাসে এই ট্রানজিটের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ওভার ডাইমেনশন কার্গো বা ওডিসি চলাচল শুরু করবে। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৬০ থেকে ৮০ টনের মতো পণ্যবাহী কনটেইনার চলাচল করবে। এই কার্গো ভেহিক্যাল চলাচলের সময় ওই রুটে বাংলাদেশের কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। এ বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অন্য সব বিষয় মনিটরিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার জেলা প্রশাসককে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতকে অনুমতি দেয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচার ও সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সরকার কাজ শুরু করেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের কোনো প্রতিবাদই যাতে এ ক্ষেত্রে কাজে না আসে সে জন্য প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসে সরকারের এই কার্যক্রমের ব্যাখ্যা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে পত্র দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতাদের তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সব আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও লবিকে এ ব্যাপারে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিএনপি গত ২৭ জুন হরতাল পালনের পর এখন অনেকটাই কোণঠাসা। জামায়াত মাঠে নামতেই পারছে না। এ অবস্খায় কার্যকর কোনো প্রতিবাদ গড়ে ওঠার আগেই সরকার সবকিছু সম্পন্ন করতে চায়।
সূত্র জানিয়েছে, বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সরকারি দল মহাজোটের শরিকদের যে ১৫ জনকে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে তারা সুপ্রিম কোর্টের রায় হাতে পাওয়ার আগেই কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার এই কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেলেও স্পর্শকাতর বিধায় সংবিধানের প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এ বিষয়টি রাখা হচ্ছে। এই ইস্যুতে বিএনপি যাতে কথা বলতে না পারে সে জন্য মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে একই বক্তব্য তুলে ধরতে বলা হয়েছে। তবে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্খার বিধানটিও যাতে রহিত করা যায় সে লক্ষ্যেও সংশোধনী আনার সক্রিয় চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের নেপথ্যে থাকা বিদেশী শক্তি তাদের প্রাপ্য বিষয়গুলোও এখন দ্রুত পেতে চাইছে। তারা বলছে, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বিরক্ত বিরোধী দল কিছুটা সময় নিয়ে হলেও বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। তার আগেই যদি রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করা না যায় তবে তা সরকারের জন্য বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া সরকারের কাছে তাদের প্রাপ্যতাও এতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। সব কিছু মিলিয়ে ডিসেম্বরকে টার্গেট ধরেই এগোচ্ছে সরকার।
সূত্র: নয়া দিগন্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:০২