somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার কলকাতা ২

১৪ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার উত্তর শুনে ড্রাইভার রঘু দাসকে একটু চিন্তিত মনে হল। ঝাড়খন্ডে বৌ বাচ্চা রেখে কিছুদিন হল সে কলকাতায় এসেছে। কলকাত্তা এখনও পুরোপুরি চেনা হয়ে ওঠেনি। লালবাতিতে গাড়ি থামার সাথে সাথে মোবাইলে কার সাথে মাতৃভাষায় কথাবার্তা শুরু করলো সে। সামাঝ গিয়া বলে ফোণ বন্ধ করে আমার দিকে ফিরলো, হাসিতে মাখামাখি তার মুখ, ‘কলকাত্তার রাস্তার লাফড়া হলো বাবু একই রাস্তার ওনেক নাম বুঝলেন এই যেমন পার্ক স্ট্রিটের একদিকের বোর্ডে দেখবেন মাদার তেরেসা রোড লেখা আছে, আবার আপনি যদি ফ্রি সকুল রোড বলতেন আমি বিলকুল বুঝে নিতুম। মির্জা গালিব স্ট্রিট তো ওই রাস্তারই দুসরা নাম আছে। চিন্তা কোরবেন না, তিস মিনিটে পৌছে দেবো, এই যে ওভার ফ্লাই আছে এই ওভার ফ্লাই সিধা এজেসি রোড তক লিয়ে যাবে সেখান থেকে বায়ে মোড়’।

কলকাতার রোদে ভাজা ভাজা হয়ে রঘু দাসের ভ্যাজর ভ্যাজর শুনতে শুনতে ফ্লাইওভার পেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে আটকে গেলাম।এম্বসাডার গাড়ির কাঁচ পর্যন্ত গরম হয়ে যাচ্ছে রোদে, মেজাজ ঠিক রাখা যাচ্ছে না। বাইরে তাকিয়ে দোকানের সাইন বোর্ড পড়তে থাকলাম। জায়গার নাম লেখা বেলেঘাটা, বললাম, আপনি না এজেসি রোডে ঢোকার কথা বললেন। মাথা চুলকাতে চুলকাতে রঘু বলল, বাবু ভুল রাস্তা দিয়ে নেমে গিয়েছি। নতুন তো, বুঝলেন না। পেছন থেকে বৌ বাচ্চারা খোঁচাতে লাগলো, এর মানে হচ্ছে, ‘মুখ বন্ধ রাখো, তোমার ধমকা ধমকির জ্বালায় আরও ভুল কোথাও নিয়ে যাবে’। মুখে কুলুপ এটে বসে রইলাম। অনেক কসরতের পর আমদের গাড়ি যখন হোটেল হাউসেজ ফরটি থ্রির সামনে থামলো ততক্ষণে দেড়ঘন্টা হয়ে গেছে। ভাগ্যিস এয়ারপোর্ট গাড়ির জন্যে ২৮০ টাকা দিতে হয়েছিলো, নাহলে সে যে পথে এসেছে ভাড়া ৪০০ ছাড়িয়ে যেত।

হাউসেজ ফরটি থ্রি আমাদের পুরনো হোটেল। মির্জা গালিব স্ট্রিট বলা যায় বাংলাদেশি ট্যুরিস্টদের জায়গা। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রুম পাওয়া যায় এই রাস্তায়।আগের দু’বারের অভিজ্ঞতায় আমি জানি এর মধ্যে হাউসেজ ফর্টি থ্রিই আসলে হোটেল বাকি গুলি এক সময় বাড়ি ছিলো আস্তে ধীরে হোটেল হিসেবে গড়ে উঠেছে। ইন্টারনেটে দেখতে মোটামুটি ভালো হলেও থাকার জন্যে তেমন নয়। এর আগে ২৭০০ টাকায় উঠেছিলেম এখানে। এবার ইন্টারনেটে বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম। ভাড়া ৩১২৫। হোটেলের পুরনো কাউন্টার ম্যানেজার আমাদের দেখেই খুশি হয়ে উঠলো। বললাম ভাড়া বেড়ে গেলো যে। বলল, স্যার booking.com এর মাধ্যমে এসেছেন, ভাড়া তো বেশি হবেই। ট্যাক্সসহ ভাড়া আসবে ৩৬৬৯ রুপি। বললাম ঠিক আছে ৭ দিনের বদলে একদিন বুক করেন, কাল রুমছেড়ে দিয়ে আবার উঠবো আগের ভাড়ায়। ম্যানেজার বিনয়ের অবতার হয়ে গেলেন, বললেন স্যার আপনি বুকিং এর শর্ত দেখেন নি? এখন ছাড়তে গেলেও তো আপনাকে শুধু শুধু একদিনের পয়সা দিতে হবে। রাগে গজগজ করতে করতে করতে বললাম তাহলে আর আপনাদের এখানে এসে কী লাভ হল?তিনি বললেন স্যার একদিনের বুকিং দিয়ে চলে আসতেন বাকিটা আমরা দেখতাম। বললাম সবচেয়ে ভালো হলো বুকিং না দিয়ে আসা।

আমাদের জন্যে ২১০ নম্বর রুম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লাগেজ টাগেজ সব ওয়েটাররাই নিয়ে গেল। জেলখানার মত লিফটে চড়ে রুমে গিয়ে মন খারাপ হল, এর আগে আমরা ২০৩ নম্বর রুমে ছিলাম। তার তুলনায় এই রুমটি ছোট। এসির বাতাস সরাসরি বুকে লাগে। বঊ বলল এখনই রিসেপসনে ফোন কর। আমরা ২০৩ চাই।
ফোনে কথা শুরু করেছি, হঠাত করে সোরগোল শুরু হল। টেলিফোনে হুড়ো হূড়ির শব্দ শুনছি, কে যেন বলছে হিল রাহাহে'।আমার খাট নড়ছে।শ্রেয়া জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো বলল, বাবা সব মানুষ রাস্তায়, ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×