এক দেশে এক আজব শহর ছিল,
সেখানে ভিক্ষে করতে হলে এক কোটি টাকা দিয়ে লাইসেন্স কেনা লাগত।
ওদিকে পকেট সাইজ এটম বোমা গড়াগড়ি খেত রাস্তায়
কেউ ফিরেও তাকাত না।
বাচ্চাদের খেলনার দোকানে বিক্রি হত মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, বোইং ৭০৭
নকল নয়, এক্কেবারে লাইফ সাইজ যাকে বলে!
পোর্ট্রেট আঁকাবে বলে পেইন্টারের পায়ে ধরত সবাই
ওদিকে আর্টিস্ট তখন কোমরে বাধা দড়িতে ঝুলে
৭৭ তলায় রং করতে ব্যস্ত।
প্রেমিক তার প্রিয়তমার জন্য নিয়ে যেত মানব শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
মেয়েটির চোখে ফুটে ওঠা ঘৃণায় হত ভালবাসার মাপজোক।
প্রতিদিন নির্বাচন, ভোটাভুটি, সরকার, রাস্ট্রযন্ত্র পরিচালনা ইত্যাদি ইত্যাদি
নিয়ে ঝড় উঠত রাস্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়ের দোকানে
দোকানদার তখন বসে বসে ক্যাশে জমা হওয়া টাকা গুলো পুড়িয়ে চা বানাচ্ছে।
একদিন এই আজব দেশে ততোধিক আজব একটা ঘটনা ঘটে গেল।
কোন এক নামগোত্রহীন পূর্ণিমায় মাতাল করা জোছনায়
উলিঝুলি চুলের এক তরুণ ভিখারী নিবন্ধন অফিসের সামনে গিয়ে
ছেঁড়াখোঁড়া পাঞ্জাবীটাকে আরও ছিড়ে ফেলে
ময়লা আঙুল গুলো দিয়ে ঘ্যাস ঘ্যাস করে রুক্ষ দাড়ি চুলকিয়ে
ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল,
এক কোটি টাকাই যদি দেব তবে আমি ভিখারী কেন হব?
সাথে সাথে পুরো দেশ একসাথে নিশ্চুপ হয়ে গেল
নিস্তব্ধ হয়ে গেল, হতবাক হয়ে গেল
রংমিস্ত্রী পোর্ট্রেট আঁকতে আঁকতে বেখেয়ালে
মহিলার ছবিতে আকিয়ে ফেলল একটা পেল্লায় গোফ
বাচ্চা ছেলেটার হাতে গর্জনরত বোয়িং এর ইঞ্জিন হয়ে গেল নিঃশব্দ!
তারপর নীরবতার ভার সইতে না পেরে পকেট সাইজ এটম বোমাগুলো
ফাটতে শুরু করল একে একে,
আর প্রতিটা বিস্ফোরনে জন্ম নিল এক সহস্র বায়োহ্যাজার্ডাস নীলচে গোলাপ।
সেই গোলাপের বিষাক্ত ঘ্রাণে প্রতিটা মানুষ মাটিতে মিশে গেল
শহর মাটিতে মিশে গেল
নগর-বন্দর-গ্রাম-রাজপথ-ফুটপাত-নিয়ন আলো-দোকানপাট-গাড়িঘোড়া-রাস্তাঘাট-কলকারখানা
সবকিছু মাটিতে মিশে গেল।
শুধু ৭৭ তলার সেই আর্টিস্ট দড়িতে ঝুলতে ঝুলতে তাকিয়ে দেখল সব,
তারপর বিল্ডিং এর শরীরে কংক্রিটের ক্যানভাসে আঁকল তার শেষ ল্যান্ডস্কেপঃ
জোছনায় নিভে যাওয়া নির্বাক শহর।