somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিছানাকান্দির বিছানায়" পর্ব - ১

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাথার উপর মেঘ থইথই আকাশে বৃষ্টির আঁশটে গন্ধ। ঘন সবুজ ছোট ছোট টিলাগুলোর গায়ে আটকে থাকা সজল মেঘ যেন গ্রাম্য বালিকার ভীরু চোখের মতো টলটলে, এই বুঝি ঝরে পড়বে একরাশ অভিমান নিয়ে। রিমঝিম ভরা বর্ষায় বিছানাকান্দির সবুজ টিলাগুলো আরও সবুজ। টিলার নরম সবুজ ঢালে যতদূর চোখ যায় প্রকিতি তার রূপের ডালী সাজিয়ে রেখেছে নিজ খেয়ালে।
ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১০.১০ । মুন্নি আপুর ফোন। কই তোমরা? আমরা তো চলে আসছি। আপু আর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব। আমাদের সাথে মুন্নি আপুর এটা প্রথম ট্রিপ। সাথে আমাদের একমাত্র ভাগ্নে মুয়াজ। তাদের সাথে আমরা আরও ৯ জন। সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছে গেলাম ফকিরাপুলের ইউনিক বাস কাউন্তারে। রুমা আপু আর সুমন ভাই এখনও রাস্তায়। আমাদের বাস ছাড়বে ১০.৪৫ এ।
ভোর ৫ টায় বাস আমাদের নামিয়ে দিল সিলেটে। সেখানেই ফ্রেশ হয়ে আমরা রওনা হলাম আম্বরখানার উদ্দেশে। আম্বরখানা থেকে সি এন জি নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেল বিছানাকান্দির পথে। কিছুদূর যেতেই রাস্তার দুপাশে চোখে ধরা পড়ল বিস্তীর্ণ চা বাগান। বৃষ্টিতে চায়ের প্রতিটি পাতা যেন চির যৌবনা। চা বাগান পেরিয়ে সিলেট বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে আমাদের সি এন জি ছুটে চলেছে সাঁ সাঁ করে। রাস্তা এখন পর্যন্ত বেশ ভাল। চারপাশটাও চমৎকার। এই সাত সকালেই মনটা ভাল হয়ে গেল।



বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর শুরু হল খারাপ রাস্তা। সি এন জি তে চরে রোলার কোস্টারের স্বাদ। তবে খারাপ রাস্তার পরিমাণ খুব একটা বেশি বলা যাবে না। চলতে চলতে এক সময় পৌঁছে গেলাম বঙ্গবীর নামের এক বাজারে। বাজারের পাশেই একটি স্কুল। দেখলাম একটি গরুর পাল স্কুলের মাঠে ঢুকছে। মুয়াজ কে বললাম, “এখানকার গরুগুলো কত শিক্ষিত দেখ, স্কুলে যাচ্ছে” এই কথা শুনে মুয়াজ হাসতে হাসতে শেষ। ছোটদের হাসাতে পারলে বেশ মজা লাগে। নাহ, আজকের দিনটা মন্দ যাবে না।



বঙ্গবীর থেকে বামে যে রাস্তা চলে গেছে সেটাই হল হাদারপার যাওয়ার রাস্তা। দূর থেকে মেঘালয়ের পাহাড়ের গায়ে আটকে থাকা মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছি সেদিকে। সি এন জি ড্রাইভার এর চোখ রাস্তার দিকে। প্রায় ৭ টা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম হাদারপারে।


ভাড়া মিটিয়ে চলে এলাম স্থানীয় এক হোটেলে। কি আছে জিজ্ঞাসা করতে হাসি মুখে হোটেল মালিক জানালো কাচ্চি বিরিয়ানি আছে। বাহ! ভালই তো। কি খাবে জিজ্ঞাসা করতে মোটামুটি সবাই কাচ্চিই খেতে চাইল। আগেই বলে দিয়েছি দুপুরে কোথায় এবং কি খাওয়া হবে তার কোন ঠিক নাই। এই ভেবেই সাবই একটু ভারি খাবার খেয়ে নিতে চায়। একটু পরেই হাজির হল কাচ্চি। কিন্তু একি ! এটা যদি কাচ্চি হয়, তাহলে তেহেরি কোনটা? আর এটা যদি তেহেরিই হয়, তাহলে মাংস কোথায়? এটা যদি কোন ঝোলের তরকারি হত, তবে মাংস খুজতে নাহয় ডুবুরী নামাতে পারতাম। কিন্তু এই ঝরঝরা কাচ্চিতে(!) মাংস খুজতে আমি মরুভূমির বেদুইন পাই কোথায়? ভাবলাম যা আছে তাই দিয়ে কাজ সারতে হবে কিন্তু সাথে একটা করে ডিম ভেজে নিলেই তো আর ঝামেলা থাকে না। হোটেলের মালিক মহোদয়কে ডিম ভাজতে বললাম। কিন্তু হায়! উনার কাছে ডিম যে নাই। আর এই সাত-সকালে অন্যান্য দোকান পাটও খুলেনি। অগত্যা নিজেই বের হলাম ডিমের সন্ধানে। ডিম আজকে আমরা খাবই। দরকার হলে মুরগির হাতে পায়ে ধরে ডিম পারয়ে নিব। যা হোক ডিম যোগাড় করে ফিরে এসে দেখি সবাই মোটামুটি খাওয়া শেষ করে চা নিয়ে বসে আছে। মনের দুঃখে ডিমগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, যার জন্য ডিম পাড়ি, সেই খায় চা। তবে শেষ পর্যন্ত চারটা ডিম উদরস্থ করে আমি আর জামাল কোরেশী ভাই চলে এলাম ঘাটে। নৌকা ঠিক করে উঠে পরলাম । আমাদের প্রথম গন্তব্য বিছানাকান্দী।


নৌকায় চড়ে বসতেই পুরনো প্রেমিকা এসে হাজির! বৃষ্টির কথা বলছি। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। পুরনো প্রেমিকা বলছি কারণ এখন আমার প্রেম ক্যামেরার সাথে।

আর এই দুই প্রেমিকার রেষারেষিতে আমি বাকরুদ্ধ। মাঝে মাঝে ফুয়াদ ভাইয়ের ঐ গানটার কথা মনে পরে, “দুই দুইটা গার্ল-ফ্রেন্ড লইয়া পরছি আমি ফান্দে, বড় জনরে মায়া করলে ছোট জনে কান্দে”। যাক দুইজনকেই ম্যানেজ করে চলতে হবে। কিছুই করার নাই। হাতে ছাতা, গায়ে রেইনকোট, ক্যামেরাতে পলিথিন মুড়িয়ে আমরা চলেছি বিছানাকান্দি। হাদারপার থেকে ২০ মিনিটের নৌকা ভ্রমণ। অসাধারন কিছু ল্যান্ডস্কেপ ছুয়ে আমরা যখন বিছানাকান্দি পৌঁছলাম ততক্ষণে বৃষ্টির রাগ রীতিমত ঝরে পড়ছে আমার উপর। কেন আমি ক্যামেরাকে বুকে আগলে ধরে রেখেছি।


মেঘালয় হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঝিরির ঝকঝকে স্বচ্ছ শীতল পানি, সামনে সবুজে ঘেরা উঁচু পাহাড়, পানির কূল কূল ধ্বনি আমদের বিমোহিত করে তুলছিল। ঘোর ভাঙ্গতেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই স্বচ্ছ পানিতে। স্বচ্ছ পানিতে অলংকারের মতই যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পাথর। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কচ্ছপের পিঠ।


পাথরের বিছানায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ঝিরির কূল কূল ধ্বনি ওস্তাদ গোলাম আলীর গজলের চেয়ে কোন অংশে কম মনে হবে না। দূর হতে বেড়াতে আসা মেঘ বিশ্রাম নিচ্ছে তিন পাহাড়ের ভাঁজে। সবকিছু মিলিয়ে পুরো এলাকা যেন এক মায়াবী সৌন্দযের্র গল্প বলে। এপারের জল যেন গভীর মমতায় মিতালী পেতেছে ওপারের পাহাড়ের সাথে। পাহাড়ের একটা অংশ দেখে বান্দরবানের টেবিল মাউন্টেন এর কথা মনে পরে গেল। অনেকটা একই রকম দেখতে। আরও বেশ কিছুখন আয়েশ করে কাটিয়ে দিলাম জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য লক্ষণছড়া।

ছবিঃ আমি, জামাল ভাই, মেহেদী ভাই।:DB-);)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪২
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×