আগেই ঠিক করা ছিল আমরা মানে আমি ,কন্যা এবং জামাই ফরিদপুর বেড়াতে যাব । ১৬ই মার্চ আমরা সায়দাবাদ থেকে বাসে চড়লাম । যাত্রাবাড়ীর নতুন এক্সপ্রেসওয়ে বেশ তাজ্জব বানাচ্ছিল আমায় । মাওয়ায় পদ্মা সেতুর আগ পর্যন্ত চওড়া রাস্তা বেশ উপভোগ্য ছিল । একটা ট্রেন কটা বগি লাগিয়ে ধীরে সেতুর নিচের অংশে ঢুকছে , বুঝলাম ট্রায়াল চলছে । এবার সেতুতে উঠলাম । সেতুতে কাজ চলছে । আমি বাদিকে থাকায় শুধু পুব দিকটা দেখতে পাচ্ছিলাম । খুব দ্রুত সেতু পার হল বাস । আবার এক্সপ্রেসওয়ে । বাদিকে ছোট একটি সেনানিবাস বানানো হয়েছে । এরপর ভুমিদস্যুদের সাইনবোর্ড দেখতে দেখতে চমৎকার ভিউ পেলাম গ্রামের । প্রায় পাঁচটা গুচ্ছ গ্রাম পশ্চিমে বাঁশ ঝাড় আর প্রচুর গাছপালায় ঘেরা শান্তির নিবাস পেলাম । বাসের গ্লাস টিনটেড হওয়ায় ছবি তুল্লাম না । আসলে আমি জাজিরা প্রান্তে গুচ্ছ গ্রাম আর বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত স্মৃতিতে ধরে রাখতে চাইছিলাম । ওই গ্রামগুলো যাতে হাতবদল না হয়ে আধা শহুরে রুপ না নেয় তাই পরিকল্পনা আঁটছিলাম কাদের সাথে কথা বলব যে গ্রামকে আর শহর না বানানোই শ্রেয় ।
এবার বাস ফরিদপুরের দিকে টার্ন নিল । রাস্তার দুপাশে গাছগাছালি আমায় আশার বানী শোনাচ্ছিল । ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে বেশ অবাক হলাম । ১০ বছর আগের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে । ব্যাটারি ভ্যানে যেতে যেতে ফরিদপুরের বহুতল ভবন দেখে বেশ অবাক হলাম । সাম্য আর লিটা । সাম্য আমার প্রয়াত মেজ ভায়রার ছেলে , আর্কিটেক্ট । পাশাপাশি টেরাকোটা নামে একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছে । সাম্য রেস্টুরেন্টের সাম্নেই একটা দশ তালা দালানে ভাড়া থাকে । ওয়াশিপ্ত টাওয়ারে আমরা নামলাম । সাম্য পায়চারি করছে আমাদের জন্য । ৮তালায় উঠে দেখি লিটা নাস্তার আয়োজনে ব্যাস্ত। আমরা ১০/০৫ মিনিটে যাত্রা করে ১১/৩০ মিনিটে ফরিদপুর নেমেছি । আগে পাটুঁরিয়া হয়ে ফেরিতে ফরিদপুর পৌছতে আধাদিন লেগে যেত । সাম্য ঘরে বসেই অফিসের কাজ সারে একটা ল্যাপটপে । মিটিং সারে রেস্টুরেন্টেই বসে । বিকালে ছাদে উঠলাম এবং হা হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে রইলাম দশতালা বিল্ডিঙের সমাহার দেখে । লিটা আমায় বিভিন্ন দিকে আঙ্গুল তুলে পরিচয় করাচ্ছিল । নাহ , ঝিলটুলির ১০ তালায় দাড়িয়ে আমি ভাবছিলাম নগরায়ন কিভাবে ছোট শহরগুলিকে খেয়ে ফেলছে । এত দালান ! সাম্যর ডিজাইন আছে ? লিটা বলল এখানে ১০০ উপরে বাড়ির প্লানিং এবং ডিজাইন সাম্যর করা। বুকটা গর্বে ভরে উঠল । লিটা অনলাইনে তৈরি পোশাকের ব্যাবসা করে । সাম্য স্বাগত অল্প বয়েসেই মা বাপ হারা । রাতে রেস্টুরেন্টে ঢুকে সব দেখলাম । নিচতালায় ১০০ জনের বসার ক্যাপাসিটি আর দোতালায় ১৫০ জনের পার্টি ব্যাবস্থা । বিয়ে , জন্মদিন , মিটিং সবই এখানে চলে । করোনার মধ্যে বেচা কেনা নেই কিন্তু রেস্টুরেন্ট বন্ধ করেনি । সাম্য এক পার্টির সাথে মিটিং করল ডিজাইন শিট নিয়ে । আমরা সুপ খেলাম বসে বসে ।
পরবর্তী অংশ খুব শিঘ্রি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৪০