ইয়া বড় একটা চাঁদ, আর সবই ঠিকঠাক সাইজের। এমন ছবি দেখে আমরা মোবাইল কিংবা ক্যামেরা চাঁদের দিকে তাক করালে দেখি চাঁদ ইট্টুস খানি! আমরা মুখ ভ্যাঙ্গচায় বলি; সব ক্যামেরার কারসাজি, না হয় ফটোশপ। কিন্তু ঘটনা কি?
আপনি যখনই এই ধরণের ছবি দেখে বলেন যে ফটোশপ, কিংবা ক্যামেরার কারসাজি, কেঁদে উঠে ফটোগ্রাফারের মন!
এমন ছবি তোলার পিছনে একজন ফটোগ্রাফারকে কত শত কষ্ট যে করতে হয় তা আপনি নিজে এমন ছবি তুলতে না পারলে বুঝবেন না কখনোই। এমন একটা ছবি তুলতে একজন ফটোগ্রাফারকে কখনও কখনও অপেক্ষা করতে হয় বছরেরও বেশী সময়। তারপরও এমন সব ছবি সবার ভাগ্যে জুটে না। তাই আমরা সচরাচর সকল ফটোগ্রাফারের কাছে এমন ছবি দেখি না।
যা লাগেঃ
১. দামী লেন্সঃ লাখ টাকা দামের লেন্স দিয়েও এমন ছবি তোলা কষ্টের। অনেক অনেক জুম ওয়ালা লেন্স লাগবে এই ছবি তুলতে; যা অনেক ফটোগ্রাফারই ম্যানেজ করতে পারে না।
২. লোকেশন লোকেশন লোকেশনঃ এই ছবির জন্য এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হয়, যেখান থেকে পরিস্কার ওয়েদারে কোন একটা শহর বা যে জায়গাটার ছবি তোলা হবে সেই জায়গাটা দেখা যাবে। এর জন্য সাধারণত যেই জায়গার ছবি তোলা হবে তার থেকে উঁচু জায়গা হওয়া লাগে। যেমন উপরের ছবিতে এমন জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে যেন মক্কা শহরের একটা অংশ, ক্লক টাওয়ার ও চাঁদ দেখা যায়। যাদের ধারণা এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া সহজ, তারা চরম ভুলের মধ্যে আছেন।
৩. ক্লিয়ার ওয়েদারঃ এইটা যে ভাই কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝানোর মত না। আপনি দিনক্ষণ গুনে হাজির হলেন জায়গা মত, গিয়ে দেখলেন সেদিনের ভিজিবিলিটি খুব কম; ছবি তুললেও ক্লিয়ার কিছু আসবে না! ব্যাস, ঐ মাস শেষ; কারণ মাসের মধ্যে পূর্ণিমা একদিনই হয়। এজন্যই বলেছিলাম যে বছরের উপরে অপেক্ষা করেও এমন ছবি না পেতে পারেন। ঢাকা, মুম্বাই, রিয়াদ, মক্কা, যেদ্দা ইত্যাদি ইত্যাদি শহরে এমন ক্লিন ও ক্লিয়ার ভিজিবিলিটি পাওয়া খুবই কষ্টের।
এবার আসুন যেভাবে তুলতে হয় বা যেভাবে ফটোশপ ছাড়াই এমন ছবি সম্ভব সেটার বিষয়েঃ
প্রথমেই আপনি এমন একটা দৃশ্য চিন্তা করেন যেখানে এই চাঁদটা নাই। কল্যানপুরের খুব উঁচু কোন বিল্ডিং এর ছাদ থেকে আপনি কারওয়ান বাজারের দিকে তাক করে ছবি তুললেন; বা শ্যাওড়া পাড়ার দিকে তাক করে ছবি তুললেন।
যেহেতু আগেই বলেছি দামি জুমলেন্স লাগবে, তাই আপনি সহজেই বুঝতে পারছেন যে দূরের বিল্ডিংয়ের ছবিও তখন কাছের মনে হবে; সাধারণ চোখে বা সাধারণ মোবাইলে যেখানে ঐ বিল্ডিং হয়ত ঠিক ভাবে বোঝাই যাবে না; সেখানে দামী লেন্স হওয়ায় আপনি বিল্ডিংটাকে খুব কাছে মনে হবে।
এবার চাঁদ সহ ভাবুন। যদি একই লোকেশনের জায়গায় একই ছবি তুলেন, সাধারণ চোঁখের দেখা চাঁদ ঐ জুম লেন্সের কারণে তখন বড় মনে হবে। আর অন্য বিল্ডিং গুলি মনে হবে সাধারণ মাপের।
ধরতে পেরেছেন বিষয়টা? আশাকরি আমি ক্লিয়ার করতে পেরেছি। অনেকেই হয়ত বলবেন সাধারণ একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে এত পাড়াপাড়ি কেন করলাম; উত্তর একটাই; আপনাকে সঠিক বুঝটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
ফটোগ্রাফারের মন কাঁদে যে কারণেঃ
একজন ফটোগ্রাফার এত কষ্ট করে ছবিটা তুলেছে; অন্য ফটোগ্রাফার সেটা বুঝে। কিন্তু কেউ যখন না জেনে ফটোশপ বলে চালিয়ে দেয়; মন কাঁদাটাই স্বাভাবিক।
এত ঝামেলায় না যেতে চাইলে মোবাইল নিন; একটা শহর, আর একটা চাঁদের ছবি ডাউনলোড করুন; ফ্রিতে বহু এ্যাপ পাবেন; সেগুলি ডাউনলোড করে সহজেই এডিট করে নিন। ঝামেলা শেষ; তবে কোন ফটোগ্রাফারের তোলা ছবিকে ক্যামেরার কারসাজি বা ফটোশপ বলেন না; ফটোগ্রাফারের কারসাজি বলুন, তাতেও একটু হলে মানায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:২৯