সময়টা খুব সম্ভবত ২০১৪ হবে। একটা প্রতিষ্ঠানের সিরিজ ওয়েব সাইট (তাদের মোট ৮টা বিজনেস; আগে ৩টার সাইট করেছিলাম) তৈরী প্রোজেক্টের অংশ হিসাবে একটা ওয়েব সাইটের কাজ হাতে ধরলাম। ওয়ার্ক ওয়ার্ডার দেবার সময় তারা মোট ২০টা জিনিষ ওয়েব সাইটে চাই-ই চাই এর লিষ্ট দিলেন। এর মধ্যে ৫টি তাদের ৭দিনের মধ্যে লাগবে; কারণ তাদের একজন বিদেশী পার্টনারকের কাজের অগ্রগতি দেখাতে হবে। কাজের রিপোর্টিং বস ২জন! একজন মূল গ্রুপের পক্ষ থেকে; অন্যজন ঐ স্পেসিফিক বিজনেসের পক্ষ থেকে।
তাদের কাজের ধরণ, চয়েজ ইত্যাদি আগে থেকে জানা ছিলো বলেই দেরী না করে দ্রুত কাজ শুরু করে দিলাম। আজ দুপুর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় বলা চলে টানাই কাজ করলাম। জরুরী ২০টির ১৮টি শেষ; অতি জরুর ৫টি তো শেষই... মেইল দিলাম। ঘুমাতে গেলাম। বিছানায় শুয়েছি; এর মধ্যে মেইল রিপ্লাই পেলাম; বস কাজে সন্তুষ্ট! বললেন বাকি ২টি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে। হিসাব করলাম ঘুম থেকে উঠেই এই দুইটা কাজ নিয়ে বসতে হবে। যেহেতু তাদের কাজের ধরণ জানি; আজকে শেষ করলে আগামীকালই সব টাকা পেয়ে যাবো!
প্রথম মেইলটি এসেছিলো গ্রুপের পক্ষ থেকে; ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দ্বিতীয় মেইল ইনবক্সে! ২য় রিপোর্টিং বস মেইল দিয়েছেন; ভাষা কিছুটা এমন, কিচ্ছু হয় নাই; কাজ পুরা না করে কেন বিরক্ত করছেন? ইত্যাদি ইত্যাদি! ভয়ে ভয়ে ফোন দিলাম, কাজে কোন সমস্যা কি না। তিনি জানালেন কাজ দেওয়া হয়েছে ২০টা; করেছেন ১৮টা! তাহলে হুদাই মেইল দিচ্ছেন কেন?
কোথায় ভেবেছিলাম ঐ দিনেই কাজ শেষ করে ফেলবো; মেজাজ খারাপ হয়ে বাকি ২টা কাজ শেষ করতে আরও ৪দিন লেগে গেলো!
================
এর পর কেটে গেছে বহু সময়। পরিবর্তন হয়েছে বহু কিছু। এখন আমি বিদেশে! কাজ করছি একটি প্রতিষ্ঠানে।
================
এই প্রতিষ্ঠানে আছি আজে প্রায় সাড়ে ৩মাস। গত কয়েকদিন থেকেই অফিসে বস লাপাত্তা! শুনলাম এমন নাকি হয়। গতকাল এক ভাইয়ের বাসায় থাকা টেবিল টেনিস খেলতে গিয়ে রাত ২টায় বাসায় ফিরেছি। মাত্র ২ঘন্টা ঘুমিয়ে সারা দিন পার করতে হবে। সময় মত অফিসে ঠিকই এসেছি; কিন্তু বুঝতে পারলাম এভাবে বেশিক্ষণ বসে থাকা সম্ভব নয়। বস যেহেতু নাই; সাড়ে তিন মাসের মধ্যে প্রথমবার কাজ ফাঁকি দিয়ে গেলাম ঘুমাতে। তার আগে অবশ্য বসকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেইল পাঠিয়ে দিলাম। প্রায় ২ঘন্টা ঘুম থেকে উঠে দেখি অফিসের বাকি ৩জন হাতপা ছুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাজে তেমন একটা সাহায্য করতে পারলাম না।
এর মধ্যে বসের ফোন; তিনি আমাদের ৪জনের মধ্যে ২জনকে খুব ঝাড়লেন যে তারা নাকি সকাল থেকে কোন কাজই করে নাই! আর আমার এবং ৪র্থ একজনের খুব খুব প্রসংসা করলেন; এবং বললেন, বি লাইক শফিউল এন্ড আবু সামি! মজার বিষয় হচ্ছে আবু সামি আমার চাইতে বড় রসিকতা করেছেন; তিনি আজ অফিসে এসেছেন মাত্র ২.৫ ঘন্টা পরে; অর্থাৎ আমি ঘুম থেকে ওঠার মাত্র কয়েক মিনিট আগে।
ব্যাস, লাঞ্চের পর অফিসে এসে দেখি ঐ যে দুইজন সকালে জান-প্রাণ দিয়ে খাটছিলেন আমাদের ২জনের কাজ এগিয়ে রাখতে, তারা ঝিমুচ্ছেন! তারা অলরেডি শফিউল - আবু সামির মত হয়ে বসে আছে!
** যারা ভাবছেন অফিসে গিয়ে ২ ঘন্টা ঘুমায় দিলাম, কাজ তো ফাঁকি দেওয়া হলো। হ্যাঁ মানছি ফাঁকি দিয়েছি; কিন্তু আমি ভাই সৎ মানুষ। সিগনেচার সীটে লিখে রেখেছি যে ২ঘন্টার ব্রেক নিয়েছিলাম। এবং সেটার ১ঘন্টা লাঞ্চের পরে অলরেডি পুশিয়ে দিয়েছি; বাকিটা ইন শা আল্লাহ আগামী কাল!
তো, যা বলছিলাম। মাঝে মধ্যেই এই ধরণের বসদেরকে চোখে পড়ে, বা তাদের গল্প শুনি। খুব অবাক লাগে, যখন দেখি বসেরাই আসলে কর্মোঠদের শত্রু হয়ে তাদের কর্মস্প্রিহা কমায় দেন। ক্যামনে পারেন বসেরা?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৪