somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুলিয়া

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাফিক আফতাব

বেশ কয়েক বছর হল ঢাকা শহরে এসেছে অনুকুল । কিন্তু কোন চাকরি মেলাতে পারেনি সে। ছাত্র খারাপ ছিল না । স্যারেরা স্কুলে রোল কল করলে ওর ডাক পড়ত প্রথমে। কিন্তু রাজধানীর অথৈ সমুদ্রের বুকে ওরকম ভালো ছাত্রের দাম আর কতটুকু। তবু এই শহরে সে বেশ ক’টি টিউশনি ঠিক করে নিয়েছে। যা পায়, বেশ চলে যায় দিন। কিন্তু দিন চলে গেলে চলবে কেন- জীবন চলে যেতে হবে। টিউশনি করে তো জীবন চলে যায় না। জীবন তো ব্যাপক, বিশাল। ব্যাপক বিশাল জীবনে কাজও ব্যাপক। কাজ ব্যাপক হলেও মনের মত কাজ আর ক’জন পায়। অনুকুলও পায়নি। নাম ওর অনুকুল হলেও নিয়তি ওর প্রতিকুলে। শেষে বউ পছন্দ না হলেও কৃষ্ণ কুমারী এক ছাত্রীকে বিয়ে করে সউদি আরবে সে পাড়ি জমায়।
অনুকুল যেদিন এই শহরে আসে তার দু’সপ্তাহ পর এই ছাত্রীটিকে সে প্রথম টিউশনি পেয়েছিলো। নাম মিল্কি। মিল্কি নামটি কে রেখেছিলো জানিনা, তবে ওর শরীর এমন সুডৌল মসৃণ আর ঠাসবুননির যে দেখা মাত্র নজর ফেরা ভার । অনুকুলও তাই নজর ফেরাতে পারেনি। বিয়ে করেছে চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য।
মিল্কি। বয়স বাইশ বছর। শ্রাবণের উপচে পড়া নদীর মত যৌবন যেন বা টইটুম্বুর। একটু টোকা দিলেই যেন বারুদের পাহাড়ে আগুন জ্বলে ওঠে, আবার জ্বলে ওঠে সমস্ত আকাশ। ওর চোখদুটো যেন বনহরিণীর মতো।
মিল্কি যেদিন প্রথম স্যার হিসেবে পেয়েছিলো অনুকুলকে, অনুকুল চোখে রেখেছিলো চোখ, একটু লজ্জাও পেয়েছিলো। মিল্কি নিজেকে ভালো করে চেনে, বোঝে। অবসরে, অবকাশে যখন সে সময় পায় নির্জন বেলকুনিতে বসে তাকায় দিগন্তে, ভাবে কত বিশাল পৃথিবীতে রূপে রাজ্যে শুধু তার জন্য একটু করুণা করেনি নিয়তি। গায়র রংটা লিকলিকে কালো, নাকটা বোচা। তাই ওর দুঃখের অন্ত নেই। তখন মিল্কি বদরুন্নেছা মহিলা কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। স্যারের কাছে পড়ত ইংরেজি। নিজের ওজন মেপে সাহস পায়নি অনুকুলের সাথে ভাব জমাতে।
অনুকুলও বিয়ে করতে চায়নি। এই মহানগরীর বুকে তন্ন তন্ন করে চাকরি খুঁজেছে সে। অবশেষে ফলাফল জিরো। বৃদ্ধ মা বাবা ওকে জীবনের সবটুক শ্রম দিয়ে বি.এ পর্যন্ত লেখা পড়া শিখিয়েছে। তাদের এক বুক আশা ছিলো ছেলে লেখা পড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে। মানুষ হয়েছে ঠিকই কিন্তু মা বাবার জন্য কতটুকু কি করতে পেরেছে সে। কিছুই করতে পারেনি। অবশেষে তাই মিল্কির মা মেয়েকে বিয়ে করলে চাকরি দিয়ে বিদেশ পঠাবে বলে জনৈক ব্যাক্তির মাধ্যমে প্রস্তাব দিলে অনুকুল প্রস্তাবে রাজী হয়।
দিন তারিখ ঠিক হলো। শ্রাবণ মাসের সাত তারিখ রোজ মঙ্গল বার। বিয়ে করেই অনুকুল যাবে বিদেশে। থাকবে পাঁচ বছর। পাঁচ বছরে জমানো টাকা দিয়ে বাড়ি গাড়ি, অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বিজনেস। ভিসা পাসপোর্টের কাজ সমাপ্ত হলো যথা সময়ে। শ্রাবণ মাসের নয় তারিখ ফ্লাইট।
দেশের বাড়ি গাইবান্ধা থেকে অনুকুলের মা বাবা এলো। যথারীতি বিয়ের কাজ সম্পন্ন্ করে ফিরে গেলো ওরা। বড় ধুম ধাম হল বিয়েতে।
বাসর রাত। বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে। রিমঝিম বৃষ্টি। টিপ টিপ বৃষ্টি । বৃষ্টির রাতে বাসর হওয়া বুঝি অমরাবতীতে বসবাস। অনতিদূরে শ্রাবণ নদীর গর্জন শোনা গেলো। শোনা গেলো অজস্র ব্যাঙের ডাক। মনে হয় ওরাও কিছু বুঝেছে । তাই ডাকছে আর নাচছে, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকছে আর নাচছে, কী সুধাময় ডাক। নাচ দেখে মনে হয় নৃত্য সংগীতের ক্লাশে বেশ কিছু দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছে ওরা। বৃষ্টি ভেজা রাতে মধুময় অমরার আবেশে নীল সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসছে ওরা, অবগাহনও হল তিন তিন বার।
তারপর হল ভোর। ভোরের নির্জন নদীর মোহনায় শুভ্র জলের ভিতর স্নান সেরে এলো ওরা।
অনুকুলের চেয়ে মিল্কি সুখী হয়েছে বেশ। তার ধারণা ছিল না এমন সুদর্শন বর মিলবে তার জীবনে। তাছাড়া আধুনিক যুগের ছেলেদের মতো নষ্ট ভ্রষ্ট হয়নি সে। এক্কেবারে প্রাকৃতিক ফ্রিজের ভিতর থেকে বের হয়ে আসা অন্য রকম পুরুষ অনুকুল।
মেয়েরা নাকি হুট করে একটা সমস্ত পুরুষকে বুঝতে পারে অতি সহজে। মিল্কি অনুকুলকে বুঝতে কি পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে? কী জানি তা কে জানে। মেয়েদের নাকি বোঝা যায় না। দৌলত উজির তাই কি বলেছিলো: সুরপতি না জানে বামাজাতি মর্ম, বামকর হন্তে করে কেবা দান ধর্ম।
মেয়েদের বিশ্বাস করা যায় না, আবার বিশ্বাস না করলে বাঁচা যায় না। তাই বিশ্বাস করতে হয়। বিশ্বাসই তো প্রেম- ভালোবাসা- জীবন-ঈশ্বরের অস্তিত্ব। বিশ্বাসের ওপরেই টিকে আছে পৃথিবী।
এই মহানগরীতে পুকুর নেই। তাই নববধূর সকালের স্নানটা করা একটু অসুবিধার, লজ্জার। একই ফ্লাটে থাকতে হয় মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ছেলেবউ, জামাইকে।
মিল্কির বাবার সাইন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবসা। আয় রোজগার যেমনই হোক দু’রুমের সাড়ে চার হাজার টাকা ফ্লাট বাসা ভাড়ার বেশি সাধ্য তার নেই। ওরা থাকে গেন্ডারিয়ার ডিস্টিলারি রোডে। ফ্লাটটি ছোট। মিল্কির বাসরও হয়েছে ওই ছোট্ট ফ্লাটটির একটি রুমে।
অনুকুল মিল্কিকে বিয়ে করে কতটুকু সুখী হয়েছে তা জানা গেলো না। তবে এই টুকু জানা গেলো দেশের বেকার সমস্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে দেশে তার চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মিল্কিকে বিয়ে করেছে সে সৌদি আরবে চাকরি নিয়ে যাওয়ার জন্য। বৃদ্ধ ওর মা-বাবা। আয়-অবস্থা তেমন ভালো ছিল না অনুকুলদের। যতটুকু ছিলো তা দিয়েই ছেলেকে মানুষ করেছে। এখন শেষ বয়সে বুড়া-বুড়ি যদি দ’ুবেলা দ’ুমুঠো খেতে না পারে তাহলে ছেলেকে মানূষ করেছে কোন দুঃখে। তাই বিয়েটা অনুকুলকে করতে হলো চাকারিটার জন্য।
বিয়ে করে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে অনুকুল। সাত সমুদ্র আর তের নদীর ওপার থেকে ঘুরে এসেছে কাল রাতে।
অনুকুল এখন পৃথিবীর আকাশে। বাসরের কল্পনার আকাশে নয়। সে এখন বাস্তব পৃথিবীর আকাশে উড়ছে। নীল আকাশের নীল ছুঁই ছুঁই করে উড়ছে। অনুকুলের বাহিরের বিশ্বে এখন নীল, অন্তরের বিশ্বেও নীল। অবারিত নীল। মনে পড়ছে বাসরের রঙিন মুহূর্তগুলো, নববধূর সোহাগ সিক্ত ভালোবাসা, ঠাসবুননির শৈল্পিকতা। অতঃপর সমুদ্র ভ্রমণ-খাল খনন-নদী- বিল ইত্যাদি।
দেখতে দেখতে বিমানটি পাকিস্তানের লাহোর বিমান বন্দর পার হয়ে গেছে। বিমানবালা এসে জিজ্ঞেস করছে, কিছু লাগবে স্যার? কোন কিছুতেই খেয়াল নেই অনুকুলের। মনে পড়ছে হোয়াংহোর তীর, নায়াগ্রার প্রবাহন....।
মিল্কির চাচা আকরাম আলী সৌদি আরবের রিয়াদে থাকে। চাচা শ্বশুড়ের সাথে রিয়াদেই থাকতে হবে তাকে। তার চাকরিটার ব্যবস্থা তিনিই করেছেন।
সৌদি আরবে যাওয়ার বছর পুরে এলো অনুকুলের। কথা ছিল চাকরির বয়স এক বছর হলে সে একবার এসে দেখা করে যাবে। কিন্তু মিল্কির তো আর সইছে না। সইবে কেন? উথলে উঠেছে যৌবন, ফুঁসে উঠেছে প্রাণমন। বিয়েটা না হলে সে হয়তবা আরো বেশ কিছু দিন একাকী নিঃসঙ্গ থাকতে পারতো। সেই বাসর রাত তার কাছে যে আজ নেশার মতো মনে হয়। তার স্বাদ যেন লেগে আছে চোখে, ঠোঁটে, মুখে- সারা শরীরে। মিশে আছে তার সমস্ত অনুভূতিতে। বিড়ি-পান-সিগারেট-মদ-হিরোরোইন ইত্যাদির মতো তারও নেশা হয়েছে আজকাল ঢের। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার তেমনি প্রেম-ভালোবাসা, জৈবিক তাড়নাকে মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না? মিল্কি অনুকুলকে চিঠি লেখে: ওগো আমি আর পারছি না। তুমি তাড়াড়াড়ি আসো। চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে হলেও আসো। দেশেই যে কোন ভাবে একটা চাকরির ব্যবস্থা করা যাবে। জীবনের উর্বর সময়টুকু চলে গেলে কোথায় পাবে বলো? অনুকুল উত্তর দেয় ওগা একটু সবুর করো। জীবনের জন্য জৈবিকতা যেমন প্রয়োজন তেমনি অর্থের প্রয়োজন অধিক। একটু অপেক্ষা করো শিঘ্রই চলে আসবো।
মিল্কি মনে মনে ভাবে বাসর রাতে আবেগে কেঁদে ফেলেছিলো অনুকুল। পূর্বে নারীর কোন স্পর্শ পায়নি বলে হয়ত অমন আবেগ, কান্না। সেই আবেগ কান্না কি সৌদি আরবের উষর মরুতে উতলা করে তোলে না। আচ্ছা, ঢাকা শহরের মতো তো রিয়াদে হোটেল নেই? পশারিণীর ব্যবসা নেই? আরব দেশ। রাসূলের জন্ম স্থান। না না সেরকম সন্দেহ করা ঠিক হবে না। অনুকুল আমার ভালোই আছে। পবিত্র আছে, শুদ্ধ আছে।
নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় মিল্কির এক খালাতো ভাই আব্দুল খালেক খালার বাসায় বেড়াতে আসতো মাঝে মধ্যে। অঙ্ক কষা শেখাতো সুযোগ পেলে। দীর্ঘ দিনের যাতায়াতে মিল্কিকে আব্দুল খালেক কখন যে ভালোবেসে ফেলেছিলো সে বোধ তার ছিল না। মিল্কির বিয়ের পর সে ভালোবাসার গাঢ়তা পেয়েছে ঢের। নর মাংসের স্বাদ একবার যে পেয়েছে জীবনে তাকে কি ভোলা সহজ? অনুকুল যে স্বাদ তাকে দিয়েছে, দিয়ে গেছে মরুর দেশে তা কি সহজে ভোলা যায়। স্মৃতি নিয়ে মানুষ ক’দিন বাঁচতে পারে? স্মৃতি হৃদয়ের মনিকোঠায় দেয় একটু সুখ, তৃপ্তি- দেহে তো নয়। বাঁচতে হলে দেহকে করা চাই সবল, বলিষ্ঠচাই জৈবিক চাহিদার সবটুকু চাওয়া। মিল্কি বলে, ‘কবে যে আসবে অনুকুল আমার’।
এদিকে আব্দুল খালেক মাঝে মধ্যে খালার বাসায় আসে। বেড়াতে আসে। আসে মিল্কিকে দেখতে। ভালো করে দেখতে। আসে বিবাহের পর কেমন কাটছে দাম্পত্য জীবন মিল্কির সে খবর নিতে। সে কি বর পেয়ে সুখী হয়েছে, না পছন্দের বর পায়নি।
‘কি রে মিল্কি কেমন আছিস? কেমন যাচ্ছে তোর রঙিন জীবন? তোর কি কিছু মনে পড়ে না’? মিল্কি বলে- দূর বোকা বিবাহের পর ছেলে বেলার কথা মনে রাখতে নেই।
হঠাৎ করে আব্দুল খালেক মিল্কির ডান হাত চাপ দিয়ে বলে, তুমি না করো না মিিিল্ক। আমি তোমাকে ভুলতে পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। চলো ছাদে একবার।
-ছাড়ো, আমি বিবাহিত তুমি জানো না?
-জানি।
-তবে ছাদে গিয়ে কি হবে?
-তুমি বুঝো না?
-বুঝি, যখন আমার বিবাহের কথা চলছিল তখন তুমি কি করছিলে? প্রস্তাবটা চালাতে পারনি। এসেছো পরের স্ত্রীর হাত ধরতে।
-আমি তখন বাড়ি ছিলাম না মিল্কি। পরের স্ত্রীর হাত ধরব কেন? আমি তোমাকে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করে ঘরে তুলবো।
ছাদে গেল ওরা দু’জন। আকাশে চাঁদ উঠেছে। গোলগাল নয়। বাঁকা। কাস্তের মত বাঁকা। অজস্র তারাও আছে আকাশে। একটু শিরশিরে বাতাসও বইছে। পিছনে পড়ে থাকল শরীয়ত। আইন। বিধিবিধান। ওরা ধীরে ধীওে রাখল হাতে হাত, অতঃপর নিবিড় কাছাকাছি--- অতঃপর যমুনার জলে অবগাহন-সাঁতার-ঢেউ।
-তুমি আমার সর্বনাশ করলে কেন?
নিরুত্তর থাকে আব্দুল খালেক। কোন কথা সরে না মুখে তার।
সৌদি আরবের ভূ-প্রকৃতি আজ কেমন যেন রুক্ষ হয়ে উঠেছে। উত্তপ্ত বাতাস। ক্লান্ত অবসন্নতা অনুকুলের শরীরে করেছে আঘাত। কিছুই ভালো লাগছে না তার আজ। কোথায় কি যেন একটা হয়েছে। তারই প্রতিধ্বনি বাজছে হৃদয়ে তার। রাত একটা বেজে গেল। ঘুম আসছে না চোখে। ঘুম আসবে কেমনে। আজকে যে পৃথিবীর প্রান্তর খসে গেছে।
ভোর ভোর ঘুম থেকে ওঠে অনুকুল। প্যাড বের করে লেখে
মিল্কি,
ভালোবাসা নিও। জানিনা তুমি কেমন আছো? আমার অস্থির অস্থির লাগছে। সে যা হোক। তোমাকে তিন কিস্তিতে যে টাকা পাঠিয়েছি মা বাাবাকে কিছু দিয়ে অবশিষ্ট টাকাটা দিয়ে বারিধারায় একটি প্লট বুকিং করবে।....
প্রতি মাসে সৌদি আরব থেকে টাকা আসে ঠিক ঠিক। মিল্কি টাটকা টাকার চেক ভাঙ্গে। গ্রামের বাড়িতে পাঠায় কিছু। বাকি টাকা দিয়ে আব্দুল খালেকের সাথে যায় পার্কে, রেস্তোরায়, চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। আমদে আহ্লাদে, অতঃপর নীল সমুদ্রের হাওয়ায়।
দিন কেটে যায়। গ্রাম হলে হয়ত কানাকানি হত। শহর। এখানে কার খোঁজ কে রাখে? আধুনিক বিশ্বে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতা একটা বড় বৈশিষ্ট্য। যার যা ইচ্ছা করছে।
এরই মধ্যে ৭৩ বছর বয়সে মারা গেলেন অনুকুলের বাবা। বুড়া বড় ভালো মানুষ ছিলেন। গ্রামে কেউ কোন দিন তাকে খারাপ কিছু বলেনি। নিজের আদর্শে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছিলেন তিনি।
গ্রামের পুরনো ভিটিতে তাকে সমাধিস্থ করা হলো। সকল আতœীয় স্বজন দাফন কার্যে এসেছে। আসেনি শুধু ঢাকা থেকে বউমা।
বাবা পরলোক গমনের একমাস পর দেশে ফেরে অনুকুল। স্ত্রীর জন্য নিয়ে আসে দামী দামী গহনা, শাড়ি, ফুল, দুল আরো কত কি। আরো নিয়ে আসে বুকে করে পুঞ্জিত ভালোবাসা।
চোখে চোখ পড়ে দু’জনার। কি যেন কি একটা বুঝে ওঠে অনুকুল। তারপর আর কিছু বলে না। তার প্রেরিত টাকার হিসাব চায়। টাকার হিসাব মেলাতে পারে না মিল্কি। সমুদ্রের মত গর্জে ওঠে অনুকুল। চোখ দিয়ে রক্ত ঝরে তার। মিল্কি করজোড় হাতে কিছু বলার আগেই তার পেটে একটা চাকু ঢুকিয়ে দেয়। মুহূর্তেই রক্তে রঞ্জিত হয় ড্রইং রুম। নিথর পড়ে থাকে শত সাধনার ভালোবাসার ঠাসবুননির দেহটি। থানায় মামলা হয়। দন্ডবিধি ৩০২ ধারার মামলা। হুলিয়া জারি হয় তার নামে। নিরুদ্দেশ হয় অনুকুল। পলাতক ভীরু কাপুরুষ ঘুরে বেড়ায় দেশে দেশে। পুলিশ আব্দুল খালেককে সন্দিগ্ধ হিসেবে গ্রেপ্তার করলেও চার্জশীট থেকে তার নাম বাদ পড়ে।
আব্দুল খালেক আর বিয়ে করে না। মাঝে মাঝে মিল্কির কবরের পাশে আসে নিঝুম নিশীথে। হয়ত কবর জিয়ারত করে, হয়তবা সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তার কৃতকর্মের জন্য।
পুলিশ আর অনুকুলকে খুঁজে পায়নি। কোথায় আছে কে জানে?

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
মাতুয়াইল হাজী আঃ লতিফ ভূঁইয়া ডিগ্রী কলেজ, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
পিএইচডি গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত গ্রন্থ: এবার ধরা দাও, উচ্ছ্বাস, পরিত্যক্ত পদাবলী, এক বিকেলে, নিঃসঙ্গ নির্জন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মুঠোফোনঃ ০১৭১২২১৫০০৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×