somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদীর মত মন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাফিক আফতাব
স্ত্রী মরে যাবার পর মাস্টার সাহেবের কোন কিছুতেই মন নেই- প্রাণে প্রাণ নেই, মনে মন নেই। দিনে দিনে শুকে সে হয়েছে শীর্ণ কাঠের মতো। মুখে-চোখে ফ্যকাশে আলো তাকে গ্রাস করেছে।
মস্টার সা’বের নাম হাবিউল আলম। বয়স ৫৫ বছর, উচ্চতা ৫ফুট ৭ ইঞ্চি। গায়ের রং শ্যামলা। চুল আধাপাকা। তবে গোফেই পাক ধরেছে বেশি। হাত-পায়ের গড়ন ভীষণ মোলায়েম- আঙ্গুল যেন লাউয়ের ডগার মতো। নেশার মধ্যে পান-সিগারেট। গাল দুটি ভরাট নয়- একটু বন্ধুরতা আছে।
হাবিউলের চার সন্তান। দুই ছেলে- ইমন ও সুমন। দুই মেয়ে-মিলি ও লিলি। ইমন ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করে বিয়ে করেছে সাহিত্যের আরেক ছাত্রীকে। ইমন সাহিত্যের ছাত্র হলেও সুবোধ। কথায় ব্যবহারে যে সব গুণ থাকলে মানুষ ভদ্র বলে- সেই ভদ্র দলের মধ্যে তার নাম আছে। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ শোনা যায়নি। সিনেমা হলে কোন এক স্কুল টিচারের মেয়ের সাথে ছবি দেখতে গিয়ে মেয়ের একজন প্রেমিকের হাতে ধরা পড়ে কিছু উত্তম-মাধ্যম হয়েছে বলে শোনা গেছে। সুমন বি.এ পাশ করে পত্রিকার পাতায় চাকরি খোঁজে। সময় পেলে সকালে বিকেলে সুন্দরী মেয়ের পিছনে একটু ঘুর ঘুর শুর শুর। মিলির বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর হল। সে দুই সন্তানের জননী। লিলি বাড়িতে থাকে। লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে সে বোবা হয়। এখন তার বয়স ২৬ বছর। ওর কোন কাজ নেই। শান বাঁধা পুকুরের পাড় ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠা ছাড়া তার আর কোন কাজ নেই।
কয়েক মাস কেটে যায়। যে যার কাজে ব্যস্ত। মা মরে যাবার পর লিলি কেঁদেছে সবচেয়ে বেশি। দুঃখটা তারই বেশি অনুভব বোঝা যায়। তবু সে বাবার টুক টাক কাজ করে দেয়।
বৌমার নাম প্রিয়াংকা। সে রাজ পরিবারের সন্তান। পূর্ব পুরুষ ছিল জমিদার। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারীর বিলোপ ঘটেছে। তবুও ধ্বংসাবশেষ যা আছে পুরানো ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে। শ্বশুরের দেখাশুনা সে করে না।
সুমন নবীন যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে ভাসছে। ইমন কলেজে অধ্যাপনা করে। সংসার দেখাশোনা করে। বাকী যতটুকু সময় থাকে কৃষ্ণ সেজে রাধার কাছে না গেলে সাহিত্যের রস জমবে কেমনে?
মিলি শ্বশুড় বাড়ি। লিলি তো লিলি।
তাহলে মাস্টার সাহেবের উপায়?
কয়েক মাস মাস্টার সাহেব ভালোই ছিলো। স্ত্রী শোকে কান্নাকাটি করলেও স্কুলে ক্লাশ নিতে তার অংক কষতে ভুল হয়নি। ইদানিং তার অংক ভুল হয়। চক ডাস্টার ক্লাশের টেবিলে রেখে শিক্ষকরুমে চলে আসে।
হায় মানব জীবন! কি বন্ধন মানুষে মানুষে। একজনের অনুপুস্থিতিতে অন্যজন কেমন অসহায়। অংক ভুল হয়ে যায়!
স্ত্রী থাকতে মাস্টার সাহেব সময় মতো খেতে পেতো। স্বাস্থ্যটা ভালো ছিল। গায়ের তেলটা, সিগারেটের প্যাকেটটা, পানের ডিব্বাটা চাওয়ার আগেই সামনে হাজির হতো। রাত্রিতে বিছানা থাকতো- যেন ফুল শয্যা। বড় পরিচ্ছন্ন ছিল মাস্টার সাহেবের স্ত্রী। তা না হলে শেষ বয়সেও বিছানাকে ফুল শয্যার মতো মনে হবে কেন? সপ্তাহের সাত দিন পরতো সাত রংয়ের পাঞ্জাবী। বড় ভাব ছিলো দু’জনাতে। মানুষেরা বলাবলি করতো এমন মহব্বত তাদের লাইলী মজনুর মতো মনে হয়।
অনাহার আর অনাদরে মাস্টার সাহেবের অবস্থা এখন শীর্ণ পাট কাঠির মতো।
ছেলে বউয়ের অনাদরে অবহেলায় সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সে ভাবে- আমার কী নেই। তবে কষ্ট কেন?
আবার ক’টা দিন কেটে গেলো।
সকাল। শীতের সকাল। মিষ্টি রোদে প্লাবিত সমস্ত পৃথিবী। কুয়াশাও পড়েছে ভীষণ। একটু ঠান্ডা বাতাস। তবু মিষ্টি রৌদ্রে প্রাণে স্পন্দন জাগে। নিস্তেজ নুয়ে পড়া প্রাণেও জাগে কোলাহল। মনে হয় বসন্ত অপেক্ষা করছে যেন দরজায়-জানালায়।
মাস্টার সাহেব বাজারে যাচ্ছিল চায়ের নেশায়। তাছাড়া সকালে খিচুরীর নেশাটাও তার ঘোর।
পথে আকবর আলীর দেখা হলে বলল:
-বাড়িতে বুঝি বাহে আর চা টা হয় না? তোমার ছেলে বউ যে কি এই বয়সে তোমার একি হাল করেছে।
মাস্টার সাহেব কান্না কান্না গলায় বললো- চা টা হয় Ñ কিন্তু হয়না আমার। মানে আমার মতো হয় না।
আকবর আলী গ্রাম সম্পর্কে মাস্টার সাহেবের ভাতিজা। তাছাড়া একসাথে চাকুরিও করেছে কিছুদিন।
দুই জন একসাথে বিনোদপুর বাজারে এসে আবুলের চায়ের দোকানে বসলো। একটু পর আসলো জব্বার মাস্টার, রিয়াজুল মাস্টার আর হায়দার আলী দর্জি।
কে একজন বলে উঠলো- কি মাস্টার সা’ব আর কি কিছু হবে না? তোমার কি কিছু নেই?
মাস্টার সাহেব একটু রেগে উঠলো, বললো- হ আমার তো হাঁসে খাইছে। কিছু নাই মানে, এখনও দুই একটা হজম করতে পারুম।
রিয়াজুল বলে উঠলো- একি তোর হাল! বউটা মরে যাবার পর তুই এতিমের মতো হয়ে গেলি যে! ইংরেজি সাহিত্য পড়া বউটা কি তোর একটু খোঁজ খবর নেয়না? এভাবে চললে তুইতো বেশি দিন বাঁচবি না।
জব্বার বলে উঠলো- আরে ছেলেরা যখন শিক্ষিত হয়েও এ হাল করেছে- তবে আর একটা নিকাহ করে ছাড়ব।
মাস্টারগণ সবাই মাস্টার সাহেবের বাল্যবন্ধু।
কুয়াশা একটু একটু করে কেটে গেছে। রোদের তাপ একটু একটু করে বাড়তে লাগলো। চায়ের আড্ডা চলতে চলতে বেলা বেজে গেলো নয়টা। মাস্টার সাহেবগণ সবাই যাবেন স্কুলে। যাবার সময় জব্বার উঁচু গলায় বললো- এত ধন সম্পদ জমি দিয়ে কী হবে? বিয়ে আর একটা তোকে করিয়েই ছাড়ছি।
স্কুলে আজ ঠিকমতো ক্লাশ নিতে পারলো না। ছাত্রদের কী পড়াতে কী পড়িয়েছে, নিজেও জানে না সে। দুই দুই চার না লিখে আজ সে লিখেছে পাঁচ। সকাল সকাল বাসায় ফিরে কিছু না খেয়ে আজ সে বিকেল বেলাই দিয়েছে দিব্যি ঘুম। জীর্ণ শীর্ণ ক্লান্ত অবস্থায় লোকটি ঘুম না দিবেই বা কেন। ঘুম ছাড়া আজকাল তার আর কোন কাজ নেই। সে চায় চির অনন্ত শান্ত ঘুম। কিন্তু সে ঘুম চাইলেই পাওয়া যায় না। আবার না চাইলেও হঠাৎ করে এসে দাঁড়ায় সামনে।
মাস্টার সাহেবের আজ সেই ঘুম নাকি?
রাত বাজে নয়টা। তার শোবার ঘরে কেউ আসেনি খোঁজ নিতে। সন্ধ্যা বেলার দিকে বোবা লিলি এসে দেখেছে বাবা ঘুমাচ্ছে নাক ডেকে। বাবার দুঃখ বোঝে সে। কিন্তু বোবা অসহায় মেয়েটির পা দু’টো অবশ। আজকাল সে ঠিক মতো হাঁটতেও পারে না। বাবার জন্য সে কীইবা করতে পারে?
রাত ১টা ৩০মিনিটের দিকে মাস্টার সাহেবের ঘুম ভাঙলো। শীতের রাত। শির শিরে বাতাস। আকাশে চাঁদ চতুর্দশীর। কুয়াশায় ছেঁয়েছে প্রান্তর। কোথাও কোন আলো নেই। আলো আছে বাইরের পৃথিবীতে। মাস্টার সাহেবের আকাশ ঘন অন্ধকারে আচ্ছন্ন।
ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর মাস্টার সাহেব ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকালেন। বউমা যথারীতি খাবার টেবিলে খাবার রেখে গেছে।
মাস্টার সাহেবকে ঘুম থেকে ডেকে আদর করে আর কে খাওয়াবে?
একটা শির শিরে বাতাস শীতের এই রাতের ভিতর জানালার ভিতর দিয়ে ঢুকে মাস্টার সাহেবের বিবর্ণ শীর্ণ হৃদয়ের ভিতর গিয়ে কী যেন বলল। মাস্টার দুলে উঠলো জলোচ্ছ্বাসে যেমন দুলে ওঠে সাগর। ভোরের প্রথম সূর্য যেমন এক ঝলকেই সারা পৃথিবীতে আলোয় উদ্ভাসিত করে- তেমনি একটি মাত্র শির শিরে বাতাস তার সমস্ত দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি আনন্দ-বেদনা ভেসে উঠলো। অস্থির হয়ে উঠলো সে। রাতের খাবার খেলোনা। বড় সুগৃহীনি ছিলো আলেয়া। আলেয়াকে আজ আলেয়ার মতো মনে হয়।
রাত বাড়ছে। সমস্ত পৃথিবী নিরব নিস্তব্ধ। কোথাও কেউ নেই যেন। জেগে আছে মাস্টার সাহেব, আর শিশির পড়ছে। টপ টপ শিশির। সমস্ত শিশির উন্মুখ করে তুলছে মাস্টার সাহেবকে। সে আলেয়ার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
-তুমি আমাকে একা ফেলে রেখে চলে গেলে! তোমার একটুও দয়ামায়া নেই। একটুও------।
আর কিছু জানা যায়নি।
ভোর রাতে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদ্বয় স্নানে এসে দেখে বাবা, মার কবরের পাশে অচেতন পড়ে আছে।
ধরাধরি করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। মাস্টার সাহেব জ্ঞান হারিয়েছে। বোবা লিলি হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। পোষা কুকুর পাশে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে। সে বুঝতে পারছে একটা কিছু হয়েছে।
সকাল হলো। ডাক্তার এলো। জুম্মু ডাক্তার। পাশের বাড়ির আরো লোকজন। কয়েক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো মাস্টার সাহেবের। থার্মোমিটারে তার জ্বর উঠেছে ১০৩ ডিগ্রী। সেদিন জ্বর কমলোনা। তার পরের দিনও না। স্কুল থেকে হেডমাস্টার সাহেব এবং অন্যান্যরা এসে তাকে দেখে গেলো।
ছেলেদের অনাদর আর অবহেলায় বড় অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো মাস্টার সাহেব। তার কী নেই- সবই আছে। আছে অঢেল সম্পত্তি। মানব জীবন আর ক’দিনের। ক্ষণভঙ্গুর পৃথিবীতে ধন সম্পদের বড়াই যেন বালির বাঁধের মতো। নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও বাকীর খাতায় শূন্য থাক। কথাটা কী উড়িয়ে দেওয়ার মতো। হয়তবা নয়? মাস্টার সাহেব বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুরু হলো কনে দেখার পালা।

২.
পৃথিবীটা একটা বিরাট খেলাঘর। এই দু’দিনের খেলা ঘরে কেউ চায় সমস্ত পৃথিবীটাকে কাঁপাতে। আবার কেউ চায় একটু আহার- দু’ বেলা দু’ মুঠো ভাত। দু’ বেলা দু’ মুঠো ভাত পেলে চাওয়ার কিছু থাকবেনা তাদের। যেমন থাকেনা বিনোদপুরের কাদের ব্যপারীর। এক সময় পাটের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সা কামিয়েছিলো লোকটি। টাকাগুলো গেলো কোথায়? যাবে আর কোথায়। সংসারে তার সমস্যার সংখ্যা তো কম নয়। কোন ছেলে নেই। ছয় মেয়ে। স্ত্রী মারা গেছে সপ্তম বাচ্চা প্রসব করার সময়। সেই সময় লোকটা যে উদাসীন হয়েছে ব্যবসায় আর মন দিতে পারেনি ভালোমতো। পিতা পিতার মতো হয়েÑ কখনো মাতার মতো হয়ে ছয় সন্তান মানুষ করেছে সে। স্ত্রী মারা যাবার সময় প্রথম মেয়ে শিউলিকে বিবাহ দিয়ে যেতে পেরেছে। এখন দ্বিতীয় মেয়ের বয়স ২৪ বছর। তৃতীয়টির ২০। চতুর্থটির ১৭। তিনটিই মোটামুটি বিবাহের উপযুক্ত হয়েছে। বিয়ের ঘর এসেছিলো বেশ কয়েক জায়গা থেকে। এ চাই, ও চাই। কাদের ব্যপারীর সামর্থ নেই ‘এ’ ‘ও’ দেয়ার। তাহলে কে তার মেয়েদের বিনা পয়সায় বিয়ে করবে?
কারও জন্য কেউ কি আটকে যায়? জীবনের গতি কি কোন দিন থামে? নদীর স্রোত যেমন- মানুষের জীবনও তেমন। বয়ে যাওয়া চলে যাওয়াÑ। কোন না কোন ভাবে চলেÑ। মানুষের জীবন চলে। চলবেই। সেই অনাদি থেকে চলছেÑ। অনন্তকাল পর্যন্ত চলবেÑ।
ব্যপারী সাহেবের সংসার পালহীন নৌকা। আয় উপার্জন নেই। যৌতুক দেয়ার মতো কোন সামর্থ নেই। তাই বলে তার মেয়েদের বিয়ে হবে না? হবে । হয়ত মনের মতো হবে না। সব কিছুই কি মনের মতো হয়? হয়। সব হয় না। এই তো নিয়ম।
বিয়ের বয়স নাকি পার হতে চলছে জরিনার। গ্রামের মানুষ অনেকে অনেক কিছু বলে। বললে আর কী হয়।

* * * * * * * * *
আমাদের মাস্টার সাহেবের শ্বশুড় বাড়ি এই বিনোদপুরে। কাদের ব্যপারী সম্পর্কে গ্রামের সম্পর্কে শ্বশুর হয়। মাস্টার সাহেবের আসা ছিলো মাঝে মাঝে এই বাড়িতে। বউ বেঁচে থাকতেও দ্বিতীয় বিবাহ এক সময় আগ্রহ করেছিলো মাস্টার। স্ত্রী মরে যাওয়ায় আগ্রহ বেশ জোড় দিয়েছে জোড়ে শোরে।
দেরি না করে মাস্টার সাহেব ঘটক পাঠায় জব্বার মাস্টারকে। সেই জব্বার মাস্টারÑ বন্ধু জব্বার।
কাদের ব্যপারী পৌষের সকালে গায়ে পুরানো চাদরটা মুড়িয়ে পুকুরের পাড়ে রোদ খাচ্ছিলো। এমন সময় জব্বার এসে হাজির। জব্বার কে দেখে কাদের ব্যপারী হতবাক।
মাস্টার সাহেবের বিয়ের পাত্রী দেখা চলছে জোড়ে শোরে।
কয়েক দিন পর একদিন মাস্টার সাহেবের বাড়িতে ঝগড়া বিবাদের আওয়াজ শোনা গেলো। বোঝা গেলো ঝগড়াটা বিবাহ সংক্রান্ত।
একটু এগিয়ে গিয়ে শোনা গেলো মাস্টার সাহেবের দ্বিতীয় ছেলে সুমন বাপকে বলছে ‘বিয়ে যদি তোমাকে করতেই হয়Ñ আমরাই তোমাকে বিয়ে দিবো। আমাদের পছন্দের মেয়েকে বিবাহ করতে হবে।’
ওরা চাচ্ছিলো স্বামী পরিত্যক্তা কোন মহিলার সাথে বাপের বিয়ে হয়ে যাক।
কিন্তু মাস্টার সাহেবের শরীরে একটু ধ্বস পড়েছে, মনে তো ধ্বস পড়েনি। এই সব স্বামী পরিত্যক্তা কোন মহিলাকে সে বিয়ে করবে না। করবে এক ষোড়শী, অষ্টাদশী কিংবা বিংশতি। সে যে ঘরের মেয়েই হোক না কেনÑ হোক না দিন আনে দিন খায় এমন ঘরের। দুঃখ নেই তার।
ও দিকে কাদের ব্যপারীর মেয়েরও কোন দুঃখ নেই। শুধু দু’ বেলা দু’ মুঠো ভাত চাই। চাই একটা নির্ভরতা। একটু আশ্রয়। তাই তার উচ্চাকাংখা করা দুরাশা মাত্র।
যথা সময়ে মাস্টার সাহেবের বিয়েটা হয়ে যায়। আজ মাস্টার সাহেবের বাসর রাত। জ্যোস্নায় প্লাবিত সমস্ত পৃথিবী। কোথাও কোন শব্দ নেই যেন, বুঝি পৃথিবীর কেউ নেই। একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে এক পশলা। পৃথিবীর সকল কলংক মুছে দিয়ে গেছে যেন। তাই বলে মাস্টার সাহেবের হৃদয়টা হয়তবা আজ মুছে দিয়ে গেছে ব্যাপক বিপুল। তা না হলে প্রথম স্ত্রীর সাথে বাসর রাতে হাতে হাত রেখে এই মাস্টার সাহেব শপথ করে বলেছিলো, ‘এই হাতে হাত থাকবে চিরদিন।’
যতদিন বেঁচে আছি তোমাকে ভালোবেসে যেন মরতে পারি। স্ত্রী বলেছিলো- আমি মরে গেলে তুমি আর বিয়ে করবেনা?
মাস্টার সাহেব বলেছিলো- না গো না। ইহ জীবনে কেন- পর জীবনেও আমি আর তোমাকে ছাড়া কাউকে চাইনা।
মাস্টার সাহেব সেই বাসর রাতে একটা কবিতা আবৃত্তি করে।
তুমি আমার হৃদয়েÑ
ফুটন্ত পুষ্পের অপূর্ব সুরভীর বন্যা,
আমার গানে নিত্য বাজানো একটা সুরের আকাশ।
তুমি আমার তটিনীর উচ্ছ্বিত উর্মির ঝিলমিলÑ
হাসির জোয়ারে ভরে দেয়াÑ
অনেক প্রণয়ের প্রজ্বলতা।
আটাশ বছর পরে আরেক বাসর রাতে সে আরও আবৃত্তি করে,
তুমি আমার,
চলার ছন্দÑকবিতার শব্দ
গানের সুর
তুমি আমার সুখের নীড়Ñশান্তির আবাস
স্বপ্ন মধুর।
হায় মানুষ! Ñমানুষের মন। নদীর স্রোতের মতো মন। মন সময়েÑ অসময়ে বদলায়। তা না হলে মাস্টার সাহেব আজ সকালে ঈষৎ ঠান্ডাজলে স্নান সেরে, সকালের নাস্তা সেরে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবীটা পরে স্কুলের পথে পা বাড়িয়েছে। কী সুন্দর ফুরফুরে মেজাজ!
লোকে বলে, আধা মরা মানুষটা কী তাগড়া হয়ে উঠলো! সুখেই আছে সে। ভালোই কাটছে বুঝি তার দিন।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×