ক্ষুদ্র একটি পতঙ্গমাত্র
নদীর ধারের নরম কাঁদামাটিতে যার বাস
বেশ সুখেই কাটছিল তার জীবন।
কিন্তু যেদিন থেকে নগরের মানুষেরা নদীর এই কুলটির সন্ধান পেল
সেদিন থেকেই শুরু হলো তার জীবনের যত উৎপাত।
নদীর জলে সাতার কাটতে আসা নর-নারীরা
তার কষ্টের কারণ।
কারো লুঙ্গি, কারো ধূতি, কারো গেঞ্জি, কারোবা শারির আঁচল
আছড়ে পড়ে তার নরম শরীরের ওপর।
নদী পারাপারে কতজন কতবার তার শরীরের নানা অংশ থেতলে দিয়েছে তার হিসেব নেই।
একবার অভিসারে আসা এক যুবকের প্যান্টের আঘাতে কোমড় ভেঙ্গে গিয়েছিল তার।
মনে মনে ভেবেছিল সঙ্গে থাকা সুন্দরী যুবতী হয়তো তার কোন ক্ষতিই করবে না
কিন্তু ক্ষণিক পরেই সে ভুল ভাঙল।
যুবতীর অন্তর্বাসের প্রচ- আঘাতে তার মাথাই থেতলে গিয়েছিল।
বেশ কষ্ট পেয়েছিল সেবার।
রাগে, কষ্টে, দুঃখে আর অভিমানে নদীর কুল থেকে গাছের একটি ডালে বাসা বাধল সে।
মনে মনে ভাবল এইবার তার জীবনে আর কোনো দুঃখ আসবে না, যন্ত্রণা আসবে না।
মনের সুখে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
যখন ঘুম ভাঙল, নিজেকে আবিষ্কার করল এক কাঠুরের রান্না ঘরে।
কাঠুরের স্ত্রীর হাতে লোহার তৈরি বড় একটি বটি
সামনে জলন্ত উনুন
বিপদ আঁচ করতে পেরে চিৎকার করে উঠল সে
রাগতস্বরে কাঠুরের স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল ‘এখানে কেন এসেছিস তুই?
তোর তো নদীর ধারের ময়লা নোংরা কাদামাটিতে থাকার কথা।’
পতঙ্গ বলল, ‘আমি কষ্ট থেকে বাঁচতে চেয়েছিলাম, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম,
তাই বৃক্ষের আশ্রয় নিয়েছিলাম।’
কাঠুরের স্ত্রী বলল, ‘সকলে তোকে কষ্ট দিয়েছে, যন্ত্রণা দিয়েছে, কেউ স্বাধীনতা দেয়নি।
এবার আমি তোকে স্বাধীনতা দেব।’
তারপর হাতের বটিটি উঁচিয়ে কাঠুরের স্ত্রী জিজ্ঞেস করল
‘বটির আঘাতে গর্দান দিয়ে শহীদ হবি
নাকি উনুনের আগুনে জ্যন্ত পুড়ে ছাই হবি?
তোকে মরতে হবে, এবার মরণের স্বাধীনতা তোর।’
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:০২