somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারাবো বলে পা টিপে এগোতে গেলেই গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক...

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন ধরেই চিন্তাটা মাথায় ছিলো, আজকে মনে হল ব্লগে দিয়ে দেখি... আমি জানি অনেকের মধ্যেই এটা আছে...

সকালে প্রিয় শিল্পী অর্ণবের হারিয়ে গিয়েছি গানটা শুনছিলাম।

হারাবো বলে পা টিপে এগোতে গেলেই গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক...পায়ে পায়ে হারাবার জায়গা খুঁজে মরি...
এই লাইনটাতে এসে আটকে গেলাম। আসলেই তো! শহরে আটকে গেছি। পালানোর কোনো পথ নেই। জোর করে ভুলে থাকা চিন্তাটা আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো...এই দম বন্ধ করা শহরে আর কত! দিন যত যাচ্ছে শহরের অবস্থা আরো খারাপই হচ্ছে...

আমি ছোটবেলা থেকে পুরান ঢাকায় বড় হয়েছি। এখানকার বাড়িঘর, মানুষ, দোকানপাট, জীবন যাপন আমি ছোট বেলায় যেরকম দেখতাম, আর এখন যা দেখি, খুব কষ্ট লাগে! আমাদের পাশের বাড়িগুলার কথাই বলি, আগে আমাদের বাসা, আর পাশের দুইটা বাসার মাঝে ৩ ফুট উঁচু দেয়াল দেয়া ছিলো, আমরা ছোটো থাকতে অনায়াসে দেয়াল টপকে পাশের বাসায় খেলতে যেতাম (ওদের সুন্দর একটা উঠান ছিলো, বেশ বড়...)। আশেপাশের বাসার পিচ্চিপাচ্চিরা সবাই দল বেধে খেলতাম...কত মজার ছিলো সময়টা! এখন এমন সময়, বাচ্চারা পাশের বাড়িতে খেলতে যাবে কি, ওখানে কে থাকে তাও ঠিক মত জানেনা!

আমাদের বাসার দক্ষিনের বাড়িটা ভেঙে ৬ তলা এ্যাপার্টমেন্ট হচ্ছে, পশ্চিমের বাড়িটাও ভাঙছে, ওটাও ৬ তলা হবে... আগে একটা সময় মাঝে মাঝে ছাদে বসে বিকালে সময় কাটাতাম, এখন ছাদে উঠলে মনে হয় উঁচু বিল্ডিং গুলা তাকিয়ে আছে! বিকালের রোদ ছাদে পৌছানোও বন্ধ হয়ে যাবে, পাশের বাড়িটা উঠে গেলে... আর দক্ষিনের বাতাস তো আগেই বন্ধ! :(
নতুন ঢাকাতেও একই অবস্থা...তবে পুরান ঢাকার চেয়ে ভালো। এখানে কেউ এক ফুট যায়গাও ছাড়েনা বাড়ি করার সময়। আর যত দিন যাচ্ছে তত মানুষ বারছে, বাড়িঘর উঁচু হচ্ছে, আরো ঘিন্জি হচ্ছে, শহর কুৎসিত হচ্ছে...

আগে আমরা কত মজার মজার রূপকথার গল্প শুনতাম, পড়তাম। ঠাকুরমার ঝুলি নামটাই এখনকার বাচ্চারা শোনে না। ওরা দেখে পোকেমন, বেনটেন, ব্যাকুগন আরো কত কি! আমি পারসোনালি ফ্যান্টাসি কার্টুন অপছন্দ করি না, মিয়াজাকির প্রায় সব গুলা মুভি আমি দেখেছি, এবং অনেক গুলা আমার কালেকশনেও আছে। কিন্তু আমাদের ফ্যান্টাসী গুলা কি ওদের চাইতে কোনো অংশে কম ছিলো? আমরাই যদি নিজেদের জিনিস নিজেরাই ফেলে দেই, পরের প্রজন্ম পোকেমন দেখবেনা তো কি দেখবে?? হতাশ লাগে ইদানিংকার ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চা পড়ানোর ধুম দেখলে... পরিচিত একজনকে দেখলাম "বাংলা সাহিত্য" কে "বেংগালি লিটারেচার" নামে নিজের বাচ্চাকে শেখাচ্ছে। এই বাচ্চাটা যদি বড় হয়ে দেশকে নিয়ে নাক শিটকায়, সেটাকি তার দোষ হবে না তার বাবা/মার? এগুলা নিয়ে অন্য একটা পোস্টে বলবো, এই পোস্ট টা মূলত এই বিষয়ের জন্য লিখছি না...আমি ঢাকা শহরের জীবন ধারনের মান নিয়ে চিন্তিত। আমরা যেভাবে বেঁচে আছি সেটাকে টিকে থাকা বলা যায়, বাঁচা বলা যায় না।

দিন দিন শহরটা পিপিলিকার শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে। পিপড়ার মত মানুষ গিজ গিজ করছে শহরময়। যেখানে যেতে ১০ মিনিট লাগার কথা সেখানে যাচ্ছি ১ ঘন্টা লাগিয়ে... আজ থেকে ১০ বছর পরে কেমন হবে এই শহরের চেহারা? যানযট, বিদ্যুত সমস্যা এগুলো নিয়ে নাহয় সরকারকে একচোট গালাগালি করলামই, কিন্তু দিন দিন মানবিক গুনাবলী গুলা যে উঠে যাচ্ছে সেগুলার জন্য কাকে দোষ দেব? ভালো কিছু করার সময় আমরা এক হতে পারিনা, কিন্তু খারাপ কাজের জন্য "সিন্ডিকেট" কত সহজেই না হয়ে যাচ্ছে...
স্বাধীনতার ৩৮ বছর হয়ে গেল, আজো আমরা সামান্য বাসের লাইনে দাড়ানো শিখতে পারলাম না!

গত মাসের ২৫ তারীখে একটা ডানাকাটা পরীর বাবা হয়েছি, আমার জীবনের সবচে আনন্দের দিন ছিলো সেটা। ও যখন ঘুমায়, আমি মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকি আর আপনা আপনি চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে টপটপ করে... বড্ড ভুল সময়ে পৃথিবীতে আসলি মা...




_____________________________________________
বি: দ্র: আমি বানান ভুল করি অনেক, দয়া করে শুধরে দিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×