আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন পাড়ার লোকদের শয়তানে (ভূত-পেত্মীতে) আছর করলে বাড়িতে ফকির এনে ঝাঁড়ফুক দেয়া দেয়া হতো। ঝাঁড়ফুকের সময় ফকির ব্যাটা মুখে বিড়বিড় করে মন্ত্র পাঠ করতেন এবং ভূতে ধরা মানুষকে বিভিন্ন রকম ছাওয়াল জবাব করতেন। ছাওয়াল জবাবের সময় আছরকৃত ব্যক্তি থেকে বিভিন্ন রকম গুপ্ত কথা প্রকাশ পেত। লোকে বিশ্বাস করত, এই গুপ্ত কথা হলো শয়তানের। এখানে ভূতে ধরা ব্যক্তিটি মাধ্যম হিসেব কাজ করেছে। গুপ্ত কথা প্রকাশের সময় উপস্থিত দর্শকদের মাঝে হাসির রোল উঠত, তবে কিছু সংখ্যক ভয়ও পেতেন অবশ্য ।
ভূত-পেত্মীর মাঝে কিছু কিছু দুর্বল প্রকৃতির ভূত আছে, যারা ফকির ব্যাটাকে দেখা মাত্রই পেরেশানীতে ভুগতেন। তাদের নিয়ে ফকিরের তেমন কোনো সমস্যা ছিলোনা। তবে কিছু ঝাউড়া প্রকৃতির ভূত ছিল, যাদেরকে ফকির ব্যাটা সহজে বাগে আনতে পারতো না। কোন উপায় না দেখে ফকির ব্যাটা ভূতকে বশে আনার জন্য ভোগের লোভ দেখাতো । শয়তান ভোগের লোভে ইলিশ মাছের বায়না ধরত। ফকির এক বাক্যে তাতে রাজী হয়ে যেতেন।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোগীর আত্মীয় স্বজন বা ফকির আমাবশ্যার রাতে বাঁশঝাড়ে, তিন রাস্তার মোড়ে, বিলের মাঝে কিংবা কালভার্টে ইলিশ মাছ ভাজা রেখে আসতেন। ভোগ পেয়ে সব শয়তান যে খুশি হতো এমন কিন্তু না। কিছু শয়তান ছিল যারা অধিক ভোগের আশায় দ্বিতীয় বার রোগীর উপর আক্রমণ করত। ফলে পরিবারের লোকজন পুনরায় আবার ভোগ দিতেন। এভাবে কিছু দিন চলার পর এরে হেরে দেখানো হতো কিন্ত রোগী আর ভালো হতো না। উপায় না দেখে পরিবারের লোকজন ভালো হওয়ার আশা প্রকৃতির উপর ছেড়ে দিতেন । ফলে শিকল বন্ধী অথবা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ছিল তার শেষ পরিণতি ।
কিন্তু ফকির ব্যাটা গ্রামে গ্রামে শয়তান ছাড়ানোর নামে ভোগপূর্ণ জীবন যাপন করতেন, তার সাথেসাথে পাব্লিককে ভূতের লম্বা হাতের কথা বিভিন্ন এঙ্গেলে বুঝাইত। পাব্লিক বেশি বুঝতে চাইলে ভয় দেখাতেন। বেশি বুঝা পাব্লিকের কেউ কেউ আবার ঘুমের শিকার হয়েছেন ।
মাঝেমধ্যে শয়তানের ঘাড় একটু বাঁকা হলেই ফকিরের জন্য ভোগ দেওয়াটা ছিল বাধ্যতামূলক। এখানে শয়তান আর ফকির ছিল পরীক্ষীত বন্ধু। অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মতো। আমরা পাব্লিকরা না বুইঝাই ভূতের বিরোধিতা করছি। মাফ কইরা দে ভূত ভাই।
ছবিঃ অনলাইন থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:০১