আর যখন নবী তার এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন; অতঃপর যখন সে (স্ত্রী) অন্যকে তা জানিয়ে দিল এবং আল্লাহ তার (নবীর) কাছে এটি প্রকাশ করে দিলেন, তখন নবী কিছুটা তার স্ত্রীকে অবহিত করল আর কিছু এড়িয়ে গেল। যখন সে তাকে বিষয়টি জানাল তখন সে বলল, ‘আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’ সে বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন। (সুরা আত–তাহরিম, আয়াত–৩)
বুখারি এবং মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা) সম্পর্কে। রসূল (সা) হজরত হাফসাকে (রা) বলেছিলেন “না, আমি মধু পান করেছি, কিন্তু আমি শপথ করছি আর কখনও মধু পান করবো না। সুতরাং তুমি আর কাউকে এই কথা বলিও না।“ হজরত আয়েশা বর্ণনা করেন যে রসূল (সা) উম্মুল মুমিনিন হজরত জায়নাবের (রা) গৃহে গিয়ে মধু পান করতেন। এই ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হয়ে হজরত আয়েশা (রা) এবং হজরত হাফসা (রা) ঠিক করেন যে রসূল (সা) তাদের গৃহে আসলে তারা রসুলকে (সা) বলবেন যে তার মুখ থেকে মাঘাফিরের গন্ধ আসছে (এটা এক ধরণের গাছ নিঃসৃত মিষ্টি আঠাল খাদ্য কিন্তু গন্ধটা একটু উৎকট)। রসূল (সা) হজরত হাফসার (রা) গৃহে গেলে তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী রসুলকে (সা) এই প্রশ্ন করেন। রসূল (সা) তখন বলেন যে “না, আমি মধু পান করেছি, কিন্তু আমি শপথ করছি আর কখনও মধু পান করবো না। সুতরাং তুমি আর কাউকে এই কথা বলিও না।“ কিন্তু হজরত হাফসা (রা) এই কথা হজরত আয়েশাকে (রা) বলে দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপরের আয়াত নাজিল হয়।
উপরের আয়াতে একটা ধাঁধার মত ব্যাপার আছে। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে। অনেক মনে করেন রসূলের (সা) কাছে কোরআনের আয়াত ছাড়া আর কোন অহি আল্লাহতায়ালা পাঠান নাই। কিন্তু উপরের আয়াতটা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে যে কোরআনের আয়াত ছাড়াও রসুলের (সা) কাছে আল্লাহর অহি আসত। হজরত হাফসা (রা) যে নিষেধ সত্ত্বেও রসুলের (সা) কথা ফাস করে দিয়েছিলেন সেটা আল্লাহ রসূলকে (সা) জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোরআনের অন্য কোন আয়াতে এই জানানোর বর্ণনা নাই। তারমানে হোল রসূলের (সা) কাছে কোরআনের আয়াত ছাড়াও আল্লাহর অহি নাজিল হোত এবং বিভিন্ন বিষয় তাকে জানিয়ে দেয়া হত।
এই কারণেই ইসলামের বিধান সংক্রান্ত রসুলের (সা) কথাকে অহি গায়ের মাতলু বলা হয়।
৩। আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। ৪। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়। (সুরা আন নাজম, আয়াত ৩-৪)
এভাবেই কোরআনের বাইরেও অনেক বিষয় তাকে অহির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হত। আরেকটা উদাহরণ হোল কিবলা পরিবর্তন সংক্রান্ত।
( হে নবী!) আমি তোমার চেহারাকে বারবার আকাশের দিকে উঠতে দেখছি। সুতরাং যে কিবলাকে তুমি পছন্দ কর আমি শীঘ্রই সে দিকে তোমাকে ফিরিয়ে দেব। সুতরাং এবার মসজিদুল হারামের দিকে নিজের চেহারা ফেরাও। এবং তোমরা যেখানেই থাক নিজের চেহারা সে দিকেই ফেরাবে। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা জানে এটাই সত্য, যা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এসেছে। আর তারা যা কিছু করছে আল্লাহ সে সম্বন্ধে উদাসীন নন।(সূরা বাকারা-১৪৪)
ইসলামের প্রথম দিকে কিবলা ছিল মসজিদ আল আকসা বরাবর। উপরের আয়াতের মাধ্যমে কিবলা পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু প্রথম কিবলার ব্যাপারে কোরআনে কিছু পাওয়া যায় না। তারমানে এটাই বোঝা যায় যে রসুলকে (সা) আল্লাহতায়ালা পৃথক অহির মাধ্যমে আগেই প্রথম কিবলা সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কারণ রসূল (সা) নিজের খুশি মত নিশ্চয়ই প্রথম কিবলা নির্ধারণ করেন নি।
উপরের দুইটা উদাহরণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে কোরআনের বাইরেও অনেক বিষয় তাকে অহির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হত। রসূল (সা) এই ধরণের অহিকে নিজের মত করে বর্ণনা করতেন। প্রকৃতপক্ষে হাদিস সমুহের বাণীই এই ধরণের ওয়াহি গাইরে মাতলু। এই ধরণের অহি সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায় হোল রসুলের (সা) হাদিস অধ্যয়ন করা। শুধু কোরআন মানলে এই ধরণের অহি সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ থাকবো। ফলে ধর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারবো না। তাই ইসলামে হাদিস অপরিহার্য একটা বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ ভোর ৬:০৫