ডাক্তারি পেশা একটি অত্যন্ত সম্মানিত পেশা। কিন্তু অনেক ভালো ডাক্তারদের ভীরে গুটি কয়েক খারাপ ডাক্তারের কারণে অনেক সময় এই পেশার দুর্নাম হয়। এছাড়া কিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আছে যারা অনেক বেআইনি ও অনৈতিক কাজ করছে। সারা বিশ্বেই কম বেশী এই সমস্যাগুলি আছে। কিন্তু বাংলাদেশে মনে হয় দুর্নীতি ও নজরদারির অভাবে বেশী হচ্ছে। Encyclopedia of World Problems and
Human Potential এর তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমি নীচের লেখাটি লিখেছি। ব্লগাররা আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত।
১। অতিরিক্ত ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখাঃ
অতিরিক্ত ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখা সারা বিশ্বে একটি বিশাল জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক ওষুধের মিথস্ক্রিয়া ওষুধের কার্যকারিতা কমাতে পারে এমনকি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ওষুধ কম্পানির চাপ , রোগীর প্রত্যাশা, ওষুধটার প্রতি ডাক্তারের অপ্রয়োজনীয় ভালো ধারণা ইত্যাদি কারণে ডাক্তাররা অনেক সময় অতিরিক্ত ওষুধ দিয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফার্মাসিতে ৪.২৫ বিলিয়ন প্রেসক্রিপশনের (গড়ে প্রতিটিতে ৩০ টি বড়ি) বিপরীতে ওষুধ বিক্রি হয়েছে। এর অর্থ হ'ল আমেরিকানরা বার্ষিক প্রায় ১২৭ বিলিয়ন পিল খায়। কেউ কেউ একদিনে কয়েক মুঠো বড়ি গিলে খায়, বয়স্কদের মধ্যে এটি আরও বেশি বোঝা যায়: বয়স্কদের ৪০% দিনে পাঁচ বা ততোধিক ওষুধ গ্রহণ করে যা গত দুই দশকে ৩০০% শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বয়স্কদের প্রায় ২০% দিনে দশটি ওষুধ গ্রহণ করে।
অনুমান করা হয় যে আমেরিকার রোগীরা যা ওষুধ খায় তার মাত্র ৫০% চিকিত্সাগতভাবে ন্যায়সঙ্গত। চিকিত্সকরা সর্দির রোগীদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক লিখে থাকেন যদিও তারা জানেন যে এগুলি সাধারণ সর্দিগুলির বিরুদ্ধে অকার্যকর। এই ধরণের অতিরিক্ত ওষুধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং নতুন রোগের মহামারী তৈরি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এধরণের ওষুধসৃষ্ট রোগের দ্বারা মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি বছর ৩০,০০০ থেকে ১৩০,০০০ এর মধ্যে অনুমান করা হয়। অনুমান করা হয় যে ড্রাগ Resistance এর কারণে ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা বছরে প্রায় ১ লাখ রোগীর মৃত্যু হয়। কিছু রোগ সনাক্ত করা হচ্ছে যা ২০ বা ৩০ বছর আগের চিকিৎসা জনিত কারণে ( অতিরিক্ত ওষুধ সৃষ্ট) সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি রোগীর মায়ের চিকিত্সার কারণে বাচ্চা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০ বছর আগে গর্ভাবস্থায় যদি তার মায়ের diethylstilbestrol দ্বারা চিকিত্সা করা হয়ে থাকে তবে সন্তানেরও (মহিলা) জরায়ুর ক্যান্সার হতে পারে।
২। সার্জিকাল ভুলঃ
সার্জন এবং anaesthetists দের দ্বারা অপারেটিং থিয়েটারের ত্রুটির ফলে যুক্তরাজ্যে বছরে কমপক্ষে ১০০০ রোগী মারা যায়। অপারেশনের সময় ভুল বা অপারেশনের আগের প্রস্তুতির ভুলের জন্য সাধারণত এরকম ঘটে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সিনিয়র সার্জনের তদারকি ছাড়াই জুনিয়র ডাক্তার কর্তৃক অপারেশন করা বা জুনিয়র চিকিৎসক কর্তৃক তার বিশেষত্বের বাইরে অস্ত্রোপচার। রোগীর শরীরের মধ্যে যন্ত্রপাতি, স্পঞ্জ ইত্যাদি রেখে দিয়ে অপারেশন শেষ করার ঘটনা একদম বিরল না। অনুমান করা হয় যে পেটের অপারেশনের ক্ষেত্রে প্রতি ১৫০০ জনে এরকম ঘটনা ১ টা ঘটনা ঘটে থাকে। অপারেশনের ভুল কয়েক রকমের হতে পারে। যেমন রোগীর দেহের ভুল জায়গায় অপারেশন করা, ভুল রোগীকে অপারেশন করা ( অনেক সময় দুর্ঘটনার একাধিক রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে ), ভুল পদ্ধতিতে অপারেশন করা।
৩। ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে প্রেসক্রিপশনের বিনিময়ে অর্থ গ্রহনঃ
এ ধরণের ঘটনা অন্য দেশে ঘটে কিনা জানি না তবে আমাদের দেশে অনেক ডাক্তার এভাবে টাকা নিয়ে থাকেন। এটাকে অনেক ডাক্তার অনৈতিক মনে করেন না। আবার অনেকে এটা থেকে বিরত থাকেন।
৪। প্যাথলজিকাল টেস্টের রোগী পাঠিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টাকা নেয়াঃ
৩ নং পয়েন্টের মত এটাও শুধু আমাদের দেশেই সম্ভবত চলছে। এটাকেও অনেক ডাক্তার অনৈতিক মনে করেন না। আবার অনেকে এটা থেকে বিরত থাকেন।
৫। রোগীর অনুমতি না নিয়ে রোগীকে শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য ব্যবহারঃ
১৯৯৩ সালের এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে ঐ বছর যুক্তরাজ্যের টিচিং হাসপাতালগুলিতে অপারেশনের অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার চেতনাহীন মহিলাকে তাদের অজান্তেই শিক্ষার্থীদের শেখার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের একটি জরিপে দেখা গেছে ৬৫% ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দ্বারা নারীদের গোপন অঙ্গের পরীক্ষার সময় রোগীর অনুমতি নেয়া হইনি। এধরণের ঘটনা আমাদের দেশেও অনেক ঘটে।
৬। লাইফ সাপোর্টের নামে ব্যবসাঃ
আমাদের দেশে অনেক বড় বড় হাসপাতাল মৃত্যু জানার পরও তা গোপন করে আরও কয়েকদিন সেই মৃত দেহকে লাইফ সাপোর্টের নামে আইসিইউতে রাখে ও মোটা অংকের বিল করে।
৭। সাইকোথেরাপিতে অনৈতিক চর্চাঃ
একটি সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে ৭০% সাইকোথেরাপিস্ত বলেছেন যে তারা তাদের পেশা জীবনে অন্তত ১ জন রোগী পেয়েছেন যে আগের থেরাপিসট কর্তৃক যৌন হয়রানির স্বীকার হয়েছেন। এই ধরণের যৌন হয়রানকারীর মধ্যে 96% ছিলেন পুরুষ সাইকো থেরাপিস্ত।
আশা করি আইন প্রয়োগ ও নৈতিকতার চর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববাসী এ সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পাবে।
সূত্রঃ Encyclopedia- UIA
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩১