তাসলিমা খানম বীথি(সিলেট এক্সপ্রেস): কবিতার মাঝে জীবনবোধকে গভীরভাবে অন্বেষণ করা কবি শফিকুল ইসলামের নিরন্তর সাধনা। জীবনের আশা-নিরাশা,হতাশা-বঞ্চনা কবিকে আন্দোলিত করলেও কবি তার কাব্য ভাবনায় কখনও বিচলিত হননি......তা তার কাব্যে সুষ্পষ্ট।প্রকৃতি ও প্রেম তার কাব্যে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তরুণ হৃদয়ের অব্যক্ত আবেগ কবি তার কবিতায় বাণীবদ্ধ করেছেন যা সার্বজনীন আবেগের বহিঃপ্রকাশরূপে মূর্ত হয়েছে। স্মৃতিময় অতীত, প্রেম ও বিরহ বিচ্ছেদ চেতনাসমৃদ্ধ তিনি কবিতা ধারন করে রেখেছেন তার কাব্যগ্রন্থ।
কবি শফিকুল ইসলামের ভাষায়....ছন্দ বলতে যারা অন্ত-মিলকেই বুঝেন, তারা মানতে চান না গদ্য কবিতায়ও ছন্দ রয়েছে যে কোন কবিতারই একটি নিজস্ব ছন্দ থাকে। বিশেষ করে রবীন্দ্র-নজরুল-সত্যেন্দ্রনাথের অন্তমিল সমৃদ্ধ কবিতার ছন্দে যাদের আসক্তি তাদের ভাল লাগার জন্য আমার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থ। মানব হৃদয়ের প্রেম-বিরহ, অনুরাগ-বিরাগ, আশা-হতাশা এসব বিচিত্র অনুভূতির ছন্দময় প্রকাশে ঋদ্ধ আমার পংক্তি মালা।
সিলেটের কৃতি সন্তান কবি শফিকুল ইসলাম ১০ই ফেব্রুয়ারী নগরীর শেখঘাটস্থ খুলিয়াপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। মরহুম মন্তাজ আলী, মরহুমা শামসুনাহারের একমাত্র পুত্র সন্তান তিনি। চার বোন এক ভাই এর মধ্যে তিনি তৃতীয়।প্রিয় সিলেট শহরে কেটেছে তাঁর শৈশব কৈশোর। ছোটবেলা থেকে কখনো চিকিৎসক, কখন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে স্বপ্ন দেখতেন। একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ায় মা-বাবা কখনো চাইতেন না তাদের প্রিয় সন্তানটি চোখের আড়াল হক। সেজন্য তার শেষ স্বপ্নকে তিনি স্পর্শ করতে পেরেছেন। তার স্বপ্ন ছিলো একজন সফল সরকারি কর্মকতা হওয়া। বর্তমানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ছাত্র জীবন থেকে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও সমাজ কল্যাণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকেইসলামিক স্টাডিজ এ মাস্টারস ডিগ্রী অর্জন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরষ্কার’ লাভ, আন্তর্জাতিক লেখক দিবসে ‘লেখক সম্মাননা পদক’ এবং স¤প্রতি তিনি নজরুল স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত গীতিকার তিনি।
কবি শফিকুল ইসলামের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলো হলো: ‘দহন কালের কাব্য’ (২০১১), ‘তবু ও বৃষ্টি আসুক’ (২০০৭), ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’(২০১০), ‘মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুর’ (২০০৮) ‘একটি আকাশ অনেক বৃষ্টি’ (২০০৪), ‘এই ঘর এই লোকালয়’ (২০০০), ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ (২০১২) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত। এছাড়াও বিভিন্ন ই-বুক পাবলিশার্স কর্তৃক তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
বর্তমানে http://www.smashwords.com, kaljoyee.com, digitallibrary.com.bd, http://www.grontho.com, sheiboi.com, http://www.chorui.com, bengaleboi.com এবং http://www.eakash.com সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে এবং banglapdf.net, http://www.boighar.com, kazirhut.com, http://www.boilovers.com ও http://www.boierdunia.in সহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে তার রচিত বইসমূহ ডাউনলোড করা যায়। http://www.rokomari.com থেকে অনলাইনে তার সকল বই সংগ্রহ করা যায়।এছাড়া গুগোল প্লে-ষ্টোরে রয়েছে তার রচিত বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার, যা তাৎক্ষণিকভাবে ডাউলোড করে পাঠ করা যায়। ইউটিউবেও রয়েছে তার রচিত কবিতা আবৃত্তি ও গানের অসংখ্য ভিডিও। বর্তমানে http://www.rokomari.com থেকে অনলাইনে সরাসরি তার সকল বই সংগ্রহ করা যায়।
সিলেটের প্রথম অনলাইন দৈনিক সিলেট এক্সপ্রেস ডট কম-এর পক্ষ থেকে কবি শফিকুল ইসলাম’র একটি সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়।২৪ আগষ্ট ২০১৪ সালে সুরমা নদীর পারে, ক্বীনব্রীজের পাশে অবস্থিত সিলেট সার্কিট হাউজে বসে তিনি সাক্ষাৎকারটি প্রদান করেন । সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সিলেট এক্সপ্রেস-এর স্টাফ রিপোর্টার তাসলিমা খানম বীথি এবং সাথে ছিলেন সিলেট এক্সপ্রেসের স্টাফ রিপোর্টার ও আলোচিত্রী মাহমুদ পারভেজ।
বীথি: কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন? প্রথম লেখা কী ছিল এবং কত সালে?
শফিকুল ইসলাম: লেখালেখি শুরু করেছি ছাত্রজীবন থেকে। সেটি ছিল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমি কাব্যচর্চা দিয়ে লেখালেখি শুরু করি। মদন মোহন কলেজে পড়াকালিন নিজে একটি ম্যাগাজিন বের করি। আর সেই ম্যাগাজিনে আমার প্রথম লেখা বের হয়। ম্যাগাজিনের নাম ছিল ‘স্পন্দন’।।
বীথি: লেখালেখিতে কার উৎসাহ ছিলো বেশি?
শফিকুল ইসলাম: লেখালেখিতে আমার উৎসাহই ছিলো বেশি। তবে পরিবার থেকে মা-বাবা-চাইতেন না লেখালেখি করি। পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে তারা নিষেধ করতেন।
বীথি: কবিতা বলতে আপনি কী বুঝেন ?
শফিকুল ইসলাম: আমার নিজের একটি সংজ্ঞা আছে। যেমন কবিতা হচ্ছে মনের অভিব্যক্তি। যা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে অন্যের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
বীথি: আপনার কবিতায় মাধ্যমে পাঠকের উদ্দেশ্যে আপনি আসলে কি বলতে চেয়েছেন মানে আপনার কাব্যের মূল মেসেজ কী?
শফিকুল ইসলাম: আমার কাব্যগ্রন্থ ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’-এর প্রথম কবিতায় আমি আমার কাব্য ভাবনার মূল মেসেজ তুলে ধরেছি। কবিতার মাধ্যমে মানুষে মানুষে স¤প্রীতি, সহমর্মিতা, বিবেক বোধকে আমি উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। কিছু পংক্তিমালায় আমার কাব্য চেতনার মূল মেসেজ খুঁজে পাওয়া যাবে যেমন--
‘তার ও আগে বৃষ্টি নামুক
আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে
সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক
আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা, হৃদয়ের গ্লানি"।
(কবিতা:তবুও বৃষ্টি আসুক)
বীথি: সম্প্রতি কবিতা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না, এর মূল কারণ কী?
শফিকুল ইসলাম: যারা কবিতা লেখছে তারা মনে করে বাক চাতুর্য। কেউ মনে করে কবিতা অন্ত্যমিল মিলে গেলেই সেটা কবিতা। সেটা কিন্তু কবিতা না। যেমন- গাছের সাথে মাছ মিললেও কবিতা হবে না। কবিতা এমন একটি বিষয় যা তার ভাব বা বক্তব্যকে ছাড়িয়ে যখন আরো কিছু প্রকাশের ইঙ্গিত দেয় তখনই সেটা কবিতা হয়ে ওঠে। উদীয়মান কবিদের কবিতায় অন্তর্নিহিত যে ছন্দ বা সুর আছে কবিতা লেখতে তা বিষয়টা উপলব্ধি করতে হবে।
বীথি: কবিতাকে পাঠকের কাছে নিয়ে যাবার জন্য কবিতা কেমন হওয়া উচিত?
শফিকুল ইসলাম: সাহিত্যে শুধু লেখার জন্য না, মানুষের জীবনের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন থাকতে হবে। যেহেতু লেখক তো শুধু নিজের জন্য লেখেন না, পাঠকের জন্য লেখেন। সেজন্যে কবিতার পাঠক তার জীবনের সুখ-দু:খের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেলে কবিতাটি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবে।
বীথি: কিসের তাড়না আপনাকে কবিতা লেখতে বাধ্য করে?
শফিকুল ইসলাম: মনের ভেতর থেকে একটা তাগিদ আসে লেখার জন্য। বাস্তবজীবনে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত যখন হৃদয়ে নাড়া দেয় তখনি সাহিত্য সৃষ্টির প্রেরণা পাই, প্রেরণা জাগায় ।
বীথি: আপনার কবিতার মধ্যে প্রেম কতটুকু আছে?
শফিকুল ইসলাম: প্রেম হচ্ছে হৃদয়ের একটা প্রবল অনুভূতি। যা জীবনের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবে আমার কবিতায় প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। যা আমার কাব্যগ্রন্থের অনেকাংশই জুড়ে আছে।
বীথি: সাহিত্য চর্চা আপনার মূল লক্ষ্য কী?
শফিকুল ইসলাম: শুধু মাত্র সাহিত্যের জন্য সাহিত্য চর্চা আমার মূল লক্ষ্য নয়। মাটি ও মানুষকে আমি ভালোবাসি। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছাকাছি পৌছার লক্ষ্যে সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। তাই আমার কাব্য শুধূ প্রেম নয়, আছে মানুষের দূর্বার সংগ্রাম আন্দোলনের কথা।
বীথি: আপনার শখ কি?
শফিকুল ইসলাম: সাহিত্য চর্চা, গান শোনা ও ভ্রমন করা।
বীথি: এ পর্যন্ত কতগুলো দেশে ভ্রমন করেছেন?
শফিকুল ইসলাম: চাকুরী সূত্রে ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং স¤প্রতি ফিলিপাইন গিয়েছি।
বীথি: বর্তমানে আপনি কোথায় কর্মরত আছেন? আপনার কর্মজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
শফিকুল ইসলাম: বর্তমানে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে কর্মরত আছি। এর পূর্বে মনপুরা উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের সিনিয়র সহকারি সচিব, সিএমএম কোর্টে মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, ব্রা²ণবাড়িয়ার এডিসি, ত্রান অধিদপ্তরে উপপরিচালক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম।
বীথি: বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা সর্ম্পকে আপনার মূল্যায়ন কী?
শফিকুল ইসলাম: আমি মনে করি সামাজিক বৈষম্য সমাজ জীবনে অস্থিরতার মূল কারণ। যদিও অন্যান্য আরো কারণ থাকতে পারে। সমাজে সম্পদের সুসম বন্টণ সমাজ জীবনে উন্নতি আনতে পারে।
বীথি: জীবনের শেষ হচ্ছে কী?
শফিকুল ইসলাম: আমার জীবনে শেষ ইচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলি.....
‘সংসার মাঝে দু’একটি সুর
রেখে দিয়ে যাবো করিয়া মধুর
দু’একটি কাটা করি দিব দূর
তারপর ছুটি নিব।
বীথি: নতুন লেখকের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শফিকুল ইসলাম: লেখক হবার আগে প্রচুর পড়তে হবে। ভালো লেখকদের বই বেশি করে পড়তে হবে।
বীথি: অবসর সময় কী করেন?
শফিকুল ইসলাম: বই পড়ি, সাহিত্য চর্চা করি আর গান শুনি।
বীথি: বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখতে চান?
শফিকুল ইসলাম: শান্তি সমৃদ্ধি ও শোষনমুক্ত দেশ হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে বাংলাদেশের জনতা অর্থনীতিক মুক্তি পাবে।
বীথি: দেশ ও জাতিকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
শফিকুল ইসলাম: দেশ ও জাতিকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্মজীবন শেষে আমি সিলেটবাসি তথা দেশের জনগণের সেবায় আরো জোরালোভাবে আত্মনিয়োগ করতে চাই।
বীথি: আপনাকে সিলেট এক্সপ্রেস এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ
শফিকুল ইসলাম: তোমাকে এবং সিলেট এক্সপ্রেসকে ধন্যবাদ।
তাসলিমা খানম বীথি(সিলেট এক্সপ্রেস): কবিতার মাঝে জীবনবোধকে গভীরভাবে অন্বেষণ করা কবি শফিকুল ইসলামের নিরন্তর সাধনা। জীবনের আশা-নিরাশা,হতাশা-বঞ্চনা কবিকে আন্দোলিত করলেও কবি তার কাব্য ভাবনায় কখনও বিচলিত হননি......তা তার কাব্যে সুষ্পষ্ট।প্রকৃতি ও প্রেম তার কাব্যে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তরুণ হৃদয়ের অব্যক্ত আবেগ কবি তার কবিতায় বাণীবদ্ধ করেছেন যা সার্বজনীন আবেগের বহিঃপ্রকাশরূপে মূর্ত হয়েছে। স্মৃতিময় অতীত, প্রেম ও বিরহ বিচ্ছেদ চেতনাসমৃদ্ধ তিনি কবিতা ধারন করে রেখেছেন তার কাব্যগ্রন্থ।
কবি শফিকুল ইসলামের ভাষায়....ছন্দ বলতে যারা অন্ত-মিলকেই বুঝেন, তারা মানতে চান না গদ্য কবিতায়ও ছন্দ রয়েছে যে কোন কবিতারই একটি নিজস্ব ছন্দ থাকে। বিশেষ করে রবীন্দ্র-নজরুল-সত্যেন্দ্রনাথের অন্তমিল সমৃদ্ধ কবিতার ছন্দে যাদের আসক্তি তাদের ভাল লাগার জন্য আমার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থ। মানব হৃদয়ের প্রেম-বিরহ, অনুরাগ-বিরাগ, আশা-হতাশা এসব বিচিত্র অনুভূতির ছন্দময় প্রকাশে ঋদ্ধ আমার পংক্তি মালা।
সিলেটের কৃতি সন্তান কবি শফিকুল ইসলাম ১০ই ফেব্রুয়ারী নগরীর শেখঘাটস্থ খুলিয়াপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। মরহুম মন্তাজ আলী, মরহুমা শামসুনাহারের একমাত্র পুত্র সন্তান তিনি। চার বোন এক ভাই এর মধ্যে তিনি তৃতীয়।প্রিয় সিলেট শহরে কেটেছে তাঁর শৈশব কৈশোর। ছোটবেলা থেকে কখনো চিকিৎসক, কখন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে স্বপ্ন দেখতেন। একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ায় মা-বাবা কখনো চাইতেন না তাদের প্রিয় সন্তানটি চোখের আড়াল হক। সেজন্য তার শেষ স্বপ্নকে তিনি স্পর্শ করতে পেরেছেন। তার স্বপ্ন ছিলো একজন সফল সরকারি কর্মকতা হওয়া। বর্তমানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ছাত্র জীবন থেকে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও সমাজ কল্যাণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকেইসলামিক স্টাডিজ এ মাস্টারস ডিগ্রী অর্জন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরষ্কার’ লাভ, আন্তর্জাতিক লেখক দিবসে ‘লেখক সম্মাননা পদক’ এবং স¤প্রতি তিনি নজরুল স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত গীতিকার তিনি।
কবি শফিকুল ইসলামের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলো হলো: ‘দহন কালের কাব্য’ (২০১১), ‘তবু ও বৃষ্টি আসুক’ (২০০৭), ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’(২০১০), ‘মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুর’ (২০০৮) ‘একটি আকাশ অনেক বৃষ্টি’ (২০০৪), ‘এই ঘর এই লোকালয়’ (২০০০), ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ (২০১২) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত। এছাড়াও বিভিন্ন ই-বুক পাবলিশার্স কর্তৃক তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
বর্তমানে http://www.grontho.com, sheiboi.com, http://www.chorui.com, bengaleboi.com এবং http://www.eakash.com সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে এবং banglapdf.net, http://www.boighar.com, kazirhut.com, http://www.boilovers.com ও http://www.boierdunia.in সহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে তার রচিত বইসমূহ ডাউনলোড করা যায়। http://www.rokomari.com থেকে অনলাইনে তার সকল বই সংগ্রহ করা যায়।এছাড়া গুগোল প্লে-ষ্টোরে রয়েছে তার রচিত বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার, যা তাৎক্ষণিকভাবে ডাউলোড করে পাঠ করা যায়। ইউটিউবেও রয়েছে তার রচিত কবিতা আবৃত্তি ও গানের অসংখ্য ভিডিও। বর্তমানে http://www.rokomari.com থেকে অনলাইনে সরাসরি তার সকল বই সংগ্রহ করা যায়।
সিলেটের প্রথম অনলাইন দৈনিক সিলেট এক্সপ্রেস ডট কম-এর পক্ষ থেকে কবি শফিকুল ইসলাম’র একটি সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়।২৪ আগষ্ট ২০১৪ সালে সুরমা নদীর পারে, ক্বীনব্রীজের পাশে অবস্থিত সিলেট সার্কিট হাউজে বসে তিনি সাক্ষাৎকারটি প্রদান করেন । সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সিলেট এক্সপ্রেস-এর স্টাফ রিপোর্টার তাসলিমা খানম বীথি এবং সাথে ছিলেন সিলেট এক্সপ্রেসের স্টাফ রিপোর্টার ও আলোচিত্রী মাহমুদ পারভেজ।
বীথি: কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন? প্রথম লেখা কী ছিল এবং কত সালে?
শফিকুল ইসলাম: লেখালেখি শুরু করেছি ছাত্রজীবন থেকে। সেটি ছিল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমি কাব্যচর্চা দিয়ে লেখালেখি শুরু করি। মদন মোহন কলেজে পড়াকালিন নিজে একটি ম্যাগাজিন বের করি। আর সেই ম্যাগাজিনে আমার প্রথম লেখা বের হয়। ম্যাগাজিনের নাম ছিল ‘স্পন্দন’।।
বীথি: লেখালেখিতে কার উৎসাহ ছিলো বেশি?
শফিকুল ইসলাম: লেখালেখিতে আমার উৎসাহই ছিলো বেশি। তবে পরিবার থেকে মা-বাবা-চাইতেন না লেখালেখি করি। পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে তারা নিষেধ করতেন।
বীথি: কবিতা বলতে আপনি কী বুঝেন ?
শফিকুল ইসলাম: আমার নিজের একটি সংজ্ঞা আছে। যেমন কবিতা হচ্ছে মনের অভিব্যক্তি। যা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে অন্যের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
বীথি: আপনার কবিতায় মাধ্যমে পাঠকের উদ্দেশ্যে আপনি আসলে কি বলতে চেয়েছেন মানে আপনার কাব্যের মূল মেসেজ কী?
শফিকুল ইসলাম: আমার কাব্যগ্রন্থ ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’-এর প্রথম কবিতায় আমি আমার কাব্য ভাবনার মূল মেসেজ তুলে ধরেছি। কবিতার মাধ্যমে মানুষে মানুষে স¤প্রীতি, সহমর্মিতা, বিবেক বোধকে আমি উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। কিছু পংক্তিমালায় আমার কাব্য চেতনার মূল মেসেজ খুঁজে পাওয়া যাবে যেমন
‘তার ও আগে বৃষ্টি নামুক
আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে
সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক
আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা, হৃদয়ের গ্লানি"।
(কবিতা:তবুও বৃষ্টি আসুক)
বীথি: সম্প্রতি কবিতা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না, এর মূল কারণ কী?
শফিকুল ইসলাম: যারা কবিতা লেখছে তারা মনে করে বাক চাতুর্য। কেউ মনে করে কবিতা অন্ত্যমিল মিলে গেলেই সেটা কবিতা। সেটা কিন্তু কবিতা না। যেমন- গাছের সাথে মাছ মিললেও কবিতা হবে না। কবিতা এমন একটি বিষয় যা তার ভাব বা বক্তব্যকে ছাড়িয়ে যখন আরো কিছু প্রকাশের ইঙ্গিত দেয় তখনই সেটা কবিতা হয়ে ওঠে। উদীয়মান কবিদের কবিতায় অন্তর্নিহিত যে ছন্দ বা সুর আছে কবিতা লেখতে তা বিষয়টা উপলব্ধি করতে হবে।
বীথি: কবিতাকে পাঠকের কাছে নিয়ে যাবার জন্য কবিতা কেমন হওয়া উচিত?
শফিকুল ইসলাম: সাহিত্যে শুধু লেখার জন্য না, মানুষের জীবনের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন থাকতে হবে। যেহেতু লেখক তো শুধু নিজের জন্য লেখেন না, পাঠকের জন্য লেখেন। সেজন্যে কবিতার পাঠক তার জীবনের সুখ-দু:খের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেলে কবিতাটি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবে।
বীথি: কিসের তাড়না আপনাকে কবিতা লেখতে বাধ্য করে?
শফিকুল ইসলাম: মনের ভেতর থেকে একটা তাগিদ আসে লেখার জন্য। বাস্তবজীবনে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত যখন হৃদয়ে নাড়া দেয় তখনি সাহিত্য সৃষ্টির প্রেরণা পাই, প্রেরণা জাগায় ।
বীথি: আপনার কবিতার মধ্যে প্রেম কতটুকু আছে?
শফিকুল ইসলাম: প্রেম হচ্ছে হৃদয়ের একটা প্রবল অনুভূতি। যা জীবনের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবে আমার কবিতায় প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। যা আমার কাব্যগ্রন্থের অনেকাংশই জুড়ে আছে।
বীথি: সাহিত্য চর্চা আপনার মূল লক্ষ্য কী?
শফিকুল ইসলাম: শুধু মাত্র সাহিত্যের জন্য সাহিত্য চর্চা আমার মূল লক্ষ্য নয়। মাটি ও মানুষকে আমি ভালোবাসি। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছাকাছি পৌছার লক্ষ্যে সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। তাই আমার কাব্য শুধূ প্রেম নয়, আছে মানুষের দূর্বার সংগ্রাম আন্দোলনের কথা।
বীথি: আপনার শখ কি?
শফিকুল ইসলাম: ভ্রমন করা।
বীথি: এ পর্যন্ত কতগুলো দেশে ভ্রমন করেছেন?
শফিকুল ইসলাম: চাকুরী সূত্রে ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং স¤প্রতি ফিলিপাইন গিয়েছি।
বীথি: বর্তমানে আপনি কোথায় কর্মরত আছেন? আপনার কর্মজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
শফিকুল ইসলাম: বর্তমানে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে কর্মরত আছি। এর পূর্বে মনপুরা উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের সিনিয়র সহকারি সচিব, সিএমএম কোর্টে মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, ব্রা²ণবাড়িয়ার এডিসি, ত্রান অধিদপ্তরে উপপরিচালক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম।
বীথি: বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা সর্ম্পকে আপনার মূল্যায়ন কী?
শফিকুল ইসলাম: আমি মনে করি সামাজিক বৈষম্য সমাজ জীবনে অস্থিরতার মূল কারণ। যদিও অন্যান্য আরো কারণ থাকতে পারে। সমাজে সম্পদের সুসম বন্টণ সমাজ জীবনে উন্নতি আনতে পারে।
বীথি: জীবনের শেষ হচ্ছে কী?
শফিকুল ইসলাম: আমার জীবনে শেষ ইচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলি.....
‘সংসার মাঝে দু’একটি সুর
রেখে দিয়ে যাবো করিয়া মধুর
দু’একটি কাটা করি দিব দূর
তারপর ছুটি নিব।
বীথি: নতুন লেখকের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শফিকুল ইসলাম: লেখক হবার আগে প্রচুর পড়তে হবে। ভালো লেখকদের বই বেশি করে পড়তে হবে।
বীথি: অবসর সময় কী করেন?
শফিকুল ইসলাম: বই পড়ি, সাহিত্য চর্চা করি আর গান শুনি।
বীথি: বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখতে চান?
শফিকুল ইসলাম: শান্তি সমৃদ্ধি ও শোষনমুক্ত দেশ হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে বাংলাদেশের জনতা অর্থনীতিক মুক্তি পাবে।
বীথি: দেশ ও জাতিকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
শফিকুল ইসলাম: দেশ ও জাতিকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্মজীবন শেষে আমি সিলেটবাসি তথা দেশের জনগণের সেবায় আরো জোরালোভাবে আত্মনিয়োগ করতে চাই।
বীথি: আপনাকে সিলেট এক্সপ্রেস এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ
শফিকুল ইসলাম: তোমাকে এবং সিলেট এক্সপ্রেসকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৯