somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃবিলীন বৃত্ত

১১ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস শুরু হবার কথা সকাল আটটায়। এখন বাজে সাতটা পয়তাল্লিশ। নতুন কিছু মুখের সাথে দাড়িয়ে আছে এহসান। সবাই যে ক্লাসমেট বুঝতে পারছে। কিন্তু জড়তা কাটিয়ে কথা বলতে পারছে না। ভার্সিটির প্রথম ক্লাস। কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে এখন ভার্সিটির ছাত্র এহসান। কিছু ছেলে খুব চঞ্চল। খুব সহজে মিশে যাচ্ছে সবার সাথে। মেয়ে ছেলে সবার সাথে সমান তালে কথা বলছে। একটু পর এক ছেলে এহসানের সামনে এসে বলল, তুই কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে?
- হ্যাঁ।
- আমিও। আমি লুসানুর রহমান। লুইস বলে ডাকলেই হবে। তুই?
- আমি এহসান।
- ক্লাস খুলছে। চল ক্লাসে বসি।

ক্লাসে ঢুঁকে একদম শেষ বেঞ্চে বসল এহসান। অভ্যাসটা সেই স্কুল জীবন থেকে। শেষ বেঞ্চের প্রতি মায়াটা। মায়াটা এখনও কাটেনি। ছেলেরা এক পাশে , মেয়েরা এক পাশে। ভাগ হয়ে বসেছে। ২৫ টার মত মেয়ে হবে ক্লাসে। আর ৪০ টার মত ছেলে। ইঞ্জিনিয়ারিং এ মেয়েদের সংখ্যা খুব কম। এ নিয়ে ছেলেদের মনে খুব আক্ষেপ। ক্লাসে মেয়ে না থাকলে নাকি পড়াশুনা করে মজা নেই। আই পি ই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে মেয়ে মাত্র ৪ টা। ইলেকট্রিকালে ৬ টা। এইটা কিছু হল? এই নিয়ে ঐ ডিপার্টমেন্ট গুলোর, ছেলে এবং বড় ভাইরা খুব হতাশ। সে হিসেবে কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ২৫ জন। অনেক বেশী। খানিক পরেই ক্লাসে এসে ঢুকলেন এক শিক্ষক। চেহারার মধ্যেই শিক্ষক শিক্ষক ভাব। চোখে চশমা, মাথায় আধা পাকা চুল। এসে ঢুকেই মুখ কেলিয়ে একটা হাসি দিলেন। হাসির মধ্যে বিশেষত্ব আছে। হয়ত নতুন ক্লাসে তিনি এভাবেই হাসি দেন। হাসি দিয়েই তিনি চশমার ভিতর দিয়ে পুরো ক্লাসে চোখ বুলালেন। চোখ বুলিয়ে মুখের হাসি সরিয়ে মুখের ভিতর একটা কাঠিন্য নিয়ে আসলেন। কিছু একটা ভাবছেন নিচের দিকে তাকিয়ে। মুখ তুলে একটু পরেই বললেন, তোমরা কোথাও পড় এখন?

সবাই মুখের দিকে তাকাতাকি করল। কি উত্তর দিবে হয়ত ভেবে পাচ্ছে না। আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি কলেজে পড়?
- না।
- স্কুলে পড়?
- না।
- তাহলে?
- ভার্সিটিতে।
- হ্যাঁ, ভার্সিটি। ইউনিভার্সিটি। মানে বিশ্ববিদ্যালয়। তোমরা এভাবে দুইপাশে ভাগ হয়ে বসেছ কেন? ছেলে মেয়ে আলাদা কেন? বিশ্ববিদ্যালয় মানে অনেক বড় কিছু। ছোট গন্ডি থেকে বড় গন্ডিতে এসেছ। এখানে মন বড় করার সময়। সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বের হবার সময়। এখনও হয়ত এমন চিন্তা ভাবনা নিয়ে তোমরা নেই, একটা ছেলে একটা মেয়ে পাশাপাশি বসলেই বাচ্চা কাচ্চা হয়ে যাবে। পাশাপাশি বসলেই প্রেম ভালবাসা হয়ে যাবে। এমন কেন ভাবছ? বড় হয়েছে এখন। এখন তোমরা ম্যাচিউর্ড। আমার ক্লাসে এরপর থেকে যেন ছেলে মেয়ে আলাদা না বসতে না দেখি। পাজল করে বস।

সবাই একটু অবাক তাকাল শিক্ষকের দিকে। এহসান একটু বেশীই অবাক হল। আসলেই ভাবল, বিশ্ববিদ্যালয় মানে মন মানসিকতা বড় করার সময়। সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বের হবার সময়। ছেলে মেয়েরা সব শিক্ষকের কথা মত একসাথে বসল। ছেলেদের মাঝে মাঝে মেয়েরা।
শিক্ষক আবার বলতে লাগলেন, আমি মুস্তাফিজুর রহমান। তোমাদের ইন অর্গানিক কেমিস্ট্রি ক্লাস নিব। আমাকে দেখতে বুড়ো বুড়ো লাগলেও মন কিন্তু বুড়িয়ে যায় নি। ভার্সিটি মানে, পড়া জোর করে চাপিয়ে দেয়া না। আমরা মজা করে করে পড়াশুনা করব। জানব, শিখব, তা কাজে লাগাব। পারলে পড়ব, না পারলে ফেল করব। ঠিক আছে?
এহসানের ঘোর কাটতে সময় লাগছে। মানুষটাকে হুট করেই খুব ভাল লেগে গেল। অন্য শিক্ষক গুলো কেমন হবে জানে না। তবে বুঝতে পারছে, অনেক বড় মনের কারও সাথে ইতিমধ্যেই পরিচয় হয়ে গেল। ক্লাসের বাকিটা সময়ও কাটল ঘোরের মধ্যে। অনেক গল্পের ভিতর দিয়ে পড়িয়ে দিলেন কিছু পড়া। বুঝিয়ে দিলেন, বাস্তব কিছু দিয়ে।
ক্লাস শেষে বেড়িয়ে গেলেন মুস্তাফিজ রহমান স্যার। বের হতে না হতেই ক্লাসে এসে ঢুকল এক দল ছেলে মেয়ে। এই ক্লাসের যে নয়, বেশ বুঝতে পারছে। এসে সামনে দাড়িয়ে বলতে লাগল একজন, কেমন আছ, ভাইয়া আপুরা?
- ভাল।
- আমাদের চিন?
- না।
- আমরা তোমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র। তোমাদের যে কোন সমস্যা হোক, যাই হোক, আমরা দেখব। কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট একটা পরিবার। এই পরিবারের সবাই সবার সাথে এক বন্ধনে থাকবে। আমরা একসাথে সবাই আড্ডা দিব। আমাদের ডিপার্টমেন্টের পিছনে যে টং আছে, ওখানে আমরা বসব। সবাই মিলে গল্প করব, আচ্ছা? আর র‍্যাগ ট্যাগ নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে কোন র‍্যাগ নেই। আমরা এমনিই বন্ধুর মত সবার সাথে পরিচিত হব, ঠিক আছে?
- জ্বি ভাইয়া।
- হ্যাঁ, তাহলে আসো সবাই আমাদের সাথে। আমরা টং এ গিয়ে বসি।

বড় ভাইদের কথা শুনেও খারাপ লাগল না। মনে হল অন্য সবার থেকে ভাল। ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই র‍্যাগ র‍্যাগ ভয়ে থাকা, মনটায় হঠাৎ করেই অনেক সাহস জন্মেছে। সবার মনের ভয় কেটে গেছে। টং এ যাবার রাস্তায় ভাইয়ারা অনেক হাসি ঠাট্টা করল। নাম জিজ্ঞেস করল। কয়েকজনের আবার মেয়েদের প্রতি খুব আগ্রহ। সুন্দরী মেয়েগুলোর নাম জানা, কথা বলায় চলল, অনেকটা সময়। টং এ চলে এসেছে। ছোটখাটো একটা টং। চারপাশে বাঁশের বেঞ্চ। পিছনে ধান ক্ষেত। ভার্সিটির মধ্যে ধান ক্ষেত। এই ধান কে চাষ করে একটু চিন্তার বিষয়। টং এ পলিথিনের ছাউনি দেয়া। সেই পলিথিন ভেদ করে, সকালের মিষ্টি রোদ আসছে। এই মিষ্টি রোদের মধ্যে, বড় ভাইয়া আপু গুলোর মিষ্টি কথা ভাল লাগছে শুনতে। অনেক ভাল। নিজেরা না বসে, সবাইকে বেঞ্চে বসাল। চায়ের অর্ডার দিয়ে সবাইকে চা খাওয়াল। নিজেরা কিছুই খেল না। হাতে করে ধরিয়ে দিল, চায়ের কাপ। এহসান চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে, এই ভাইয়া গুলো এতো ভাল। তবুও র‍্যাগের ভয়ে সবাই অস্থির ছিল কেন? চা শেষ করে সবাই বসে আছে। কিন্তু এক বড় ভাই, গলা কেশে সবাইকে থামতে বলল। সবাই চুপ করল, কিছু একটা বলবেন। সবাই যখন খুব মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে আছে বড় ভাইয়ের দিকে, হঠাৎ করে তার হাসি হাসি মুখে একটা কাঠিন্য চলে আসল। হুংকার রকম আওয়াজ করে বললেন,
ঐ বেয়াদব পোলাপান সিনিয়র তোরা? ঐ তোরা সিনিয়র আমাদের? বড় ভাইরা দাড়িয়ে আছে। বড় আপুরা দাড়িয়ে আছে। সবগুলা বেয়াদবের মত বসে আছিস? দাড়া। ঐ দাড়া।

সবার মুখ মলিন হয়ে গেল। একটু আগের মিষ্টি কথা, হঠাৎ করেই তেতো কথায় রূপ নিল। দাড়িয়ে গেল সবাই।
বড় ভাইটা একটু আগে তার নাম বলেছেন। নাম আপেল। আপেল ভাই আবার চিৎকার করে বলল, বেয়াদবি ছুটিয়ে দিব বদমাইশ গুলার। ঐ কান ধর সব গুলা। ধর কান।

সবাই একটু বিব্রত হয়ে হাত দিয়ে কান ধরল। আপেল ভাই আবার বললেন, এই লাইন ধরে দাড়া সব গুলা। কান ছাড়বি না কেউ। একদম ছাড়বি না।

কান ধরেই লাইনে দাঁড়াল সবাই। মেয়েরা একপাশে। ছেলেরা একপাশে। মেয়েদের ধমক দিচ্ছেন, পিংকি আপু। আর ছেলেদের আপেল ভাই। সাথে আরও অনেকেই আছে। কিন্তু এসব কেন করছে, ঠিক বুঝতে পারছে না। এহসান ভাবছে, আসলেই কেন এসব হচ্ছে। হুট করে এমন কি হল?
একজন একজন করে লাইন ধরে যাচ্ছে বড় ভাইদের কাছে। নাম ধাম জানা হচ্ছে। আর কারণ ছাড়াই ধমক খাচ্ছে। প্রথম ক্লাসে একজনকে ক্লাস রিপ্রেসেন্টেটিভ অর্থাৎ সি আর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ছেলেটার নাম শিশির। শিশিরের অপরাধ সে, সি আর হয়েছে।
- তুই সি আর?
- জ্বি ভাইয়া।
- নাম কি?
- শিশির।
- খালি শিশির? আর কিছু না?
- সাদেকুল ইসলাম শিশির।
- তা আগে বললি না কেন?
- সরি ভাইয়া।
- ঐ সরি কিরে? এক থাপ্পড় লাগাব কানের নিচে। ঐ তুই এক পা উচা কর।

শিশির এক পা উচু করে কান ধরে দাড়িয়ে আছে। এক বড় বলছেন, তুই যে সি আর হইছিস, কে বানাইছে তোকে?
- ভাইয়া, স্যার বললেন, কে সি আর হতে চাও। আমি দাঁড়ালাম স্যার আমাকে বানালেন।
- ও তোর ইচ্ছা হল, আর তুই সি আর হয়ে গেলি। তোর ক্লাসমেটের অনুমুতি নিছিস? বড় ভাইদের অনুমুতি নিছিস?
- না ভাইয়া।
- তুই কি নেতা? ঐ তুই কি নেতা? তোর যা ইচ্ছা করবি ক্যাম্পাসে।
- জ্বি না,ভাইয়া।
- যা, তুই এভাবে এক পায়ে লাফাতে লাফাতে যাবি সবার কাছে। গিয়ে তোর নাম বলে, হ্যান্ড শেক করে বলবি, তুই সি আর হতে চাস।

শিশির এক পায়ে লাফাতে লাফাতে সবার সামনে গিয়ে বলছে, আমি শিশির, আমি সি আর হতে চাই। আমি শিশির আমি সি আর হতে চাই।
এহসানের ভিতর খুব অস্বস্তি লাগছে। বুকের ভিতর ধক ধক করছে। এহসানকে না জানি কি বলে।
এহসানের সামনে লুইস। এবার লুইসকে ডেকেছে। লুইস কান ধরে দাড়িয়ে।
- নাম কি তোর?
- লুইস।
- কি নাম?
- লুসানুর রহমান।
- প্রথমে কি বললি?
- লুইস।
- লুইস কি?
- বন্ধুরা ডাকে লুইস বলে।
- ঐ তুই কি লুচ্চা, যে তোর বন্ধুরা, তোকে লুইস ডাকে আর তুই মেনে নিলি।

লুইস মাথা নিচু করে দাড়িয়ে। আপেল ভাই, লুইসের জুতার দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কি পরছিস?
- ভাইয়া কনভার্টস।
- তুই কি খনি শ্রমিক, যে এগুলা পরছিস? এসব খনি শ্রমিকের জুতা।

লুইস কিছু না বলে, আপেল ভাইয়ের পায়ের দিকে তাকাল। নিজে পরে আছেন কেডস জুতা। কনভার্টস যদি খনি শ্রমিকের জুতা হয়, কেডস কার জুতা তাই ভাবছে। তবে মুখে কিছু বলছে না।
- তুই চুপ কইরা আছিস কেন? কথা বল। তুই কি বোবা?
- জ্বি না ভাইয়া।
- তাহলে কথা বলিস না কেন? ঐ তুই মুরগি হ। মুরগি হ।

লুইস নিচে বসে মুরগি হল। এবার আসল, এহসান। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সামনে এসে দাঁড়াল। বুকের ভিতর ধক ধক শব্দটা আরও বাড়ছে।
- নাম কি?
- এহসানুর রহমান।

বড় ভাইরা কিছুক্ষণ তাকাল এহসানের দিকে। হয়ত কোন খুঁত খুঁজছে। কিছু পেল কিনা জানে না। বড় ভাই বললেন, দেখতে তো বাচ্চা পোলাপানের মত লাগছে। চেহারাও ভদ্র ভদ্র। আসলেই কি ভদ্র নাকি মিনমিনা শয়তান?

এহসান চুপ।
- তোর কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
- জ্বি না ভাইয়া।
- তাইলে কি বয়ফ্রেন্ড আছে তোর? তুই কি গে? ঐ তুই গে? হাহাহা।

বড় ভাইরা হাসছে। এহসান অপমান লজ্জায় তাকিয়ে মাথা নিচু করে আছে।
- তোর কি ফিজিক্যাল কোন সমস্যা আছে? মেয়েদের প্রতি কোন আগ্রহ নাই? গার্লফ্রেন্ড নাই তোর।

এহসান তাও চুপ।
- ঐ কথা বল। বল, সমস্যা আছে? মেয়েদের দিকে তাকাস না তুই? আচ্ছা তোকে একটা কাজ দিলাম। ঐ যে একটা আপু বসে আছে না? একটু মোটা সোটা? আপুর সামনে যাবি। গিয়ে জিজ্ঞেস করবি, আপু আপনার সাইজ কত? উত্তর জেনে আমাকে বলবি। যা।

এহসান মাথা নিচু করেই আপুটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মাথা উচু করল না।
- কি? সমস্যা কি?
- জ্বি আপু। ভাইয়ারা পাঠিয়েছেন।
- কেন?

এহসান চুপ করে আছে।
- মাথা তুলে তাকা আমার দিকে। বল কেন? কি বলছে? কি বলে পাঠিয়েছে তোকে?

এহসান মাথা তুলে তাকিয়ে বলল, আমি বলতে পারব না।
- বলতে পারবি না মানে? বল। কি বলছে?

এহসান আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আপু আবার ধমকের সুরে বললেন, কি দেখিস?
- কিছু না আপু।
- কিছু না মানে? তোকে আমি কোথায় তাকাতে বলছি?
- জানিনা আপু।
- আমি তাকাতে বলছি তোকে মুখের দিকে। তুই তাকিয়ে আছিস কোথায়?
- মুখের দিকেই তো তাকিয়ে আছি।
- আমি মিথ্যা বলতেছি তোকে? আমি বুঝি না ভাবছিস একটা ছেলে মেয়ের কোন দিকে তাকায়?

এহসান চুপ করে অপবাদ মেনে নিল।
- কি দেখতেছিলি বল?
এহসান কিছুই দেখছিল না। তাই কোন উত্তরও নেই।
আপু ধমকে যাচ্ছেন।
- অসভ্য ছেলে। বড় আপুর কোন দিকে তাকাস তুই? বল। আর তোর বড় ভাইয়া কি বলতে বলছেন সেটাও বল।

এহসানের বুকের ভিতর খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে একেকটা মিনিট অনন্ত কাল। বুকের ভিতরে জমে থাকা কষ্ট গুলো ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে কোথা থেকেই যেন, এক মেয়ে ছুটে আসল। দাঁড়াল এহসানের সামনে। কিছু বলা কওয়া নাই, হুট করে বলতে লাগল, আমি তোমাকে দেখার পর থেকে কেমন যেন লাগছে। love at first sight এর মত, তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। তুমি কি আমার হবে?

এহসান হাঁ করে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। কিছু বুঝছে না আসলে কি ঘটছে। মেয়েটা আস্তে করে এহসানের মুখের কাছে এসে বলল। প্লিজ হ্যাঁ বল। নয়ত খুব সমস্যা হবে। প্লিজ প্লিজ।

এহসানের ঘোর কাটার আগেই আস্তে করে বলল, হ্যাঁ হব।
- আস্তে না। জোরে বল, যেন আপুরা শুনতে পায়।

এহসানের বুঝার বাকি রইল না এটাও র‍্যাগের অংশ। এহসান জোরেই বলল, হ্যাঁ হব।
মেয়েটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে আসল, এহসানের সামনে দিয়ে। এহসানের সামনে থাকা বড় আপু বললেন, যা তুই।
এহসানও আসল ফিরে বড় ভাইটার কাছে। যে পাঠিয়েছিল আপুর সাইজ জানতে। সাইজ না জেনেই চলে এসেছে।
আসার পর পরই বড় ভাইটা বললেন, কিরে সাইজ জেনে আসছিস?
- না ভাইয়া?
- কেন?
- জিজ্ঞেস করি নাই।
- কেন?

এহসান চুপ করে আবার। বড় ভাইটা হঠাৎ একটু হাসি দিয়ে বলল, আরে ম্যান, এতো ভদ্র হলে লাইফ চলে? একটা জুতার সাইজ জেনে আসতে এতো অস্বস্তি?
এহসান মুখে তুলে তাকাবার আগেই বড় ভাইটা জড়িয়ে ধরলেন। ধরে বললেন, জাস্ট ফান।
এহসান শান্ত চোখে দেখছে আবার বড় ভাইগুলোর অন্য রূপ। রাগী ভাই গুলো সব জুনিয়রদের জড়িয়ে ধরে, হাত ধরে, কাঁধে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। যেন কত দিনের আপন মানুষ। আপেল ভাইয়াটা এখনও জড়িয়ে আছে এহসানকে। কেন যেন এহসানের চোখ ভিজে আসছে। বুকের ভিতর কষ্টটা আরও বাড়ছে। জানে না কারণটা। আপেল ভাই টং এর দোকানে নিয়ে বললেন, খা যা ইচ্ছা।
এহসানের কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না। তবুও জোর করে খাইয়ে দিলেন অনেক কিছু। হঠাৎ করেই মনে হল, মানুষগুলোর সাথে দূরত্ব কমে গেছে অনেক খানি। বড় ভাইয়ারা বললেন, এটা র‍্যাগ না। এটা মজা। শুধু দূরত্ব কমিয়ে দেবার জন্য। ভালবাসা বাড়ে এতে। আমাদের সাথে ফ্রি হয়ে গেলি তোরা।

ক্লাস শেষ আজ। এহসান চলে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ছোট একটা পুকুরের মত, সেটার পাশে দাঁড়াল এহসান। ছোট ছোট পাথরের কণা তার মধ্যে ছুড়ে ফেলছে। সেই পাথরের কণা পুকুরের পানিতে পড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে পানি। ছোট বৃত্ত থেকে হচ্ছে অনেক বড় বৃত্ত পানির ভিতর। আবার মিলিয়েও যাচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে কারও ডাক শুনল, এই যে?
এহসান পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল সেই মেয়েটা। র‍্যাগের সময়টাতে যে এসে ভালবাসার কথা বলেছিল। রিকশার উপর বসে বলছে, যাবে?
এহসান আস্তে করে মাথা নেড়ে বলল, না।
মেয়েটা হাত নেড়ে চলে গেল। এহসানের কানে নিঃশব্দে কিছু শব্দ ভাসছে, আবছা আবছা হয়ে। এহসান শুনছে, কেউ বলছে, তুমি কি আমার হবে?
আবার কানে বাজছে কিছু অশ্রাব্য কথা। কিছু ভারী কণ্ঠের অশ্রাব্য কথা। এই অশ্রাব্য কথার ভিড়ে ভালবাসা আসতে পারছে না। আটকে যাচ্ছে কোথাও। মনের ভিতর কোথাও এসে বাধা পাচ্ছে। কিছু ভালবাসার বৃত্ত ছোট থেকে বড় হয়ে, আবার হারিয়ে যাচ্ছে। পুকুরে ঢিল ছোড়া ছোট পাথর গুলোর মত। কেউ জোর করে আদায় করে ভালবাসা। কিছু ভালবাসা মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়। মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া কিছু, হারিয়ে যায় না এতো সহজে। জোর করে পাওয়া জিনিস, বৃত্ত গুলোর মত। হারিয়ে যাওয়া বৃত্তের মত বিলীন হয়ে যায়।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×