যাক সে কথা
স্বপ্নের মায়াজাল একদিন না একদিন কেটে যায় হতে হয় বাস্তবতার মুখোমেুখি, ভালোলাগার সেই মুহূর্তে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে পারে না বোঝাতে- এ মায়াজাল। ভাগ্যের কাছে এ আমাদের দৈনতা। জীবনে স্বপ্নের শুরু ঠিকই হয় কিন্তু তার সুন্দর সমাপ্তি কি হয় কখোনো ? গল্পে হয়তো হয় কিন্তু বাস্তবে তা বড় কঠিন, অনাবিল সুখ বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। তবু থেমে থাকা নয় শুধু ছুটে চলা তার সহজাত প্রবৃত্তিতে সুখের সন্ধানে।
চার বান্ধবী মিলে এস, এস, সি পরীক্ষার পর কোচিং করছিলো প্রত্যাশা নামে এক কোচিং সেন্টারে কলাবাগান। ঐ বয়সে যা হয় কয়েক বান্ধবী এক সাথে হলে দুষ্টুমী অকারণে হাসাহাসি, অযথা খুশি সবকিছুতে- জানা অজানা কথা নিয়ে যত কথা আর ভালোলাগা, কি সুন্দর সে সময়টা, জানা অজানার নাগরদোলায় বাঁধা।
ক্লাশ শুরু হলো। তিনজন স্যার ছিলো- যাদের বয়স খুব বেশি না, পড়াশোনার পাশাপাশি কচিং করাতো। সাইফুল অংক ক্লাস নিতো, টিটো ইংলিশ ক্লাশ নিতো এবং রিংকু বুয়েটের স্টুডেন্ট ক্যামেস্ট্রি ক্লাস নিতো। তিন জনই ভালো ছিলো তবে তিন জন তিন রকমের, মানুষের প্রকারভেদতো থাকবেই। রিংকু নামের স্যারটি ছিলো অদ্ভুত সবার সাথে আপনি করে কথা বলতো। তাই নিয়ে ক্লাসের মধ্যেই ওদের মধ্যে একটা চাপা হাসি ঘুরপাক খেত। খুব মুড নিয়ে থাকতো সে তা নিয়েও চলতো যথারীতি হাসাহাসি। চার বান্ধবী রুমা, শিখা, রিপন, সীমানা, এর মধ্যে তিন জনেরই ধারণা ছিলো রিংকু সীমানাকে পছন্দ করে। যাক সে কথা সেটা তেমন প্রয়োজনীয় কিছু না। আর সাইফুল ছিলো সব কিছুতেই অতি মাত্রায় উৎসাহী, আর টিটো সাধারন তথাকথিত বিশিষ্ট ভদ্রলোক।
হাসি ঠাট্টা দুষ্টুমি আর ছোট খাটো অনেক ঘটনার মধ্যে দিয়ে কেটে যাচ্ছে দিন। রিংকু যে সীমানাকে পছন্দ করতো তা তার বিভিন্ন কার্যকলাপে সবাই বুঝতে পারতো। সব কিছুতেই সীমানার ভুল ধরার ব্যার্থ একটা চেষ্টা করতো সব সময়, ক্লাসে আসতে একটু দেরি হলে সেটা নিয়েও ঝামেলা করতো, অনেক কিছুতেই বিভিন্ন রকমের জেরা করা, যার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। প্রতিটা বিষয়ে পিছে লেগে থাকতো সীমানার, ঐ বয়সে যা হয় ব্যাপারটা বেশ এনজয় করতো বান্ধবীরা, তার অগোচরে তাকে নিয়ে অনেক মজার মজার কথা বলতো ওরা, এমনি করে কেটে যায় দুষ্টুমী ভরা দিনগুলো। আর তার আপনি করে বলাটাতো ওরা ধরে নিয়েছিলো এটা তার একটা ভাব। অবশ্য পড়ানোর ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস ছিলো সে। প্রতিটা চ্যাপটার শেষ হলে একটা পরীক্ষা নিতো - পরীক্ষার ডেট দিলো, চার বান্ধবীই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলো এবং যথালীতি চারজন একই লিখলো, কিছুটা দেখা দেখিতো হয়ই। কোনো কারণে সীমানার লেখা শেষ করতে একটু দেরী হলো, গভীর মনোযোগের সাথে সবাই রক্ষ্য করলো রিংকু ভাই কিছু বলছে না, নীরবে ওর লেখা শেষ করতে দিলো, কিন্তু সাধারণত উনি সময় শেষ হয়ে গেলে লিখতে দেন না। সবার হাসি পাচ্ছে দম আটকে সবাই অপেক্ষা করঝে শেষ হবার। পরীক্ষা শেষে রিংকুভাই বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো, সীমানাও হাসলো তবে মনে মনে কিছুটা বিব্রত বোধ করলো। একদিন পরই খাতা দিলো সীমানার মার্কস সবচেয়ে বেশী। ক্লাস শেষে সবার খাতা মিলানো হলো- একই লেখা সীমানা বেশী কেনো পেলো! ঐ যে কিছুটা একতরফা ভালোলাগা, হয়তো তাই।
চলবে.....