somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিরসখা হে...

২০ শে মে, ২০১১ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাগর পাড়ে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্ত বেশি সুন্দর না সূর্যোদয়? সাগরের নোনা জল থেকে একটু দূরে ঝাউ গাছের নীচে বসে ভাবে শাই। সুর্যোদয় নতুন আশার গল্প শোনালেও সূর্যাস্তকেই বেশি আপন মনে হয় শাইয়ের। কি যেন সেই বিষন্নতা, কি ছিল সেই না বলা কথা, কি যেন বাকী থেকে গেল...করা হলনা শেষ সেই অসমাপ্ত কাজটা! অথচ ফুরিয়ে গেল আরেকটা দিন! ঠিক যেন ওর জীবনের প্রতিচ্ছবি!

তেত্রিশটা বছর পেরিয়ে গেল...কিন্তু আজও ও সেখানেই আছে যেখানে ছিল কিছু কাল আগে...একা, সঙ্গীহীন। বাতাস সামলে গুছিয়ে নেয় পড়ে থাকা সাদা তাঁতের শাড়ির পাড়, এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলে হাত বুলাতেই মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা...ছ’বছর আগের মধুচন্দ্রিমার কথা...এই এখানেইতো ওরা এসছিল বিয়ের দুরাত পর! কত গল্প, একে অপরকে জানা, অকারণ হাসি, ঘন্টার পর ঘন্টা সাগরের পাড় ঘেঁষে হেঁটে যাওয়া, সারা রাত জেগে থাকা, ভালবাসায় ডুবে থাকা...ভালোবাসা, ভালবাসা...আকাশে, বাতাসে, জমিতে কোথায় ছিল না ভালোবাসা! কি প্রচন্ড উন্মাদনা!

মধুচন্দ্রিমার কোন এক রাতে ওরা মেতে উঠেছিল এক তর্কে। কিণা ক’টা বাচ্চা নেবে। শাই বলছিল একটা বাবুই যথেষ্ঠ...কিন্তু সাব্বির মানবেই না...নিতান্তই দু’টো বাচ্চা না হলে আর বাবা কি হলো! কি অকারণ তর্ক! কিন্তু কই তখনতো একবারও বিরক্ত লাগেনি! বরং মনে হয়েছিল বাহ বেশতো, সাংসারিক আছে মানুষটা! তো আজ কেন...আজ কেন অসহ্য মনে হয় সব? ঠিক শাইয়ের মনের মতোই সাগর পাড়েও বইছে দমকা বাতাস... বর্তমানে ফিরে আসে শাই!
কিন্তু ঝাউ গাছের ওপাশ থেকে কে তাকাচ্ছে বার বার? শাইয়ের ষষ্ঠ ইন্দ্রয় বলে কেউ একজন তাকে ফলো করছে। শাই কি ঘাড় ফিরিয়ে দেখবে? কি দরকার! দেখছে তাকে, দেখুক...কি এসে যায়! উটকো লোকতো আর কম নেই এই সাগর পাড়ে! পাত্তা দিলেই পেয়ে বসবে। ইনিয়ে বিনিয়ে জমাতে চাইবে গল্প। কি দরকার বাবা!

উঠে যায় শাই, বিষে বিষ ক্ষয় করতে সেই একই সাগর পাড়ে এতো বছর পর এসে এখন এই সুন্দর সন্ধ্যাটাকে কেমন বিষাক্ত মনে হয় শাইয়ের। তাছাড়া এই দমকা বাতাস আর তার বয়ে আনা ধুলোয় কিরম অস্বস্তি লাগছে! শাওয়ার নিতে হবে, লম্বা শাওয়ার...ধুয়ে ফেলতে হবে সারাদিনের ক্লান্তি...আহা, এভাবেই যদি ধুয়ে ফেলা যেত সবকিছু! শাই পা বাড়ায় হোটেলের দিকে...




সাগর পাড় থেকে হোটেলে ফিরেই লম্বা শাওয়ার নেয় শাই। তৈরী হয়ে নেয় ডিনারের জন্য। পড়েছে সোনালী চওড়া জরি পারের অফহোয়াইট সিল্কের শাড়ী, সাথে কফি রঙের স্লিভলেস। মুক্তোর হালকা গয়না, চোখে ডার্ক আইশ্যাডো ও স্নিগ্ধ মেক-আপে অনন্য শাই। ব্রাউন ক্লাচ হাতে শেষবারের মতো আয়না দেখে নেয় শাই। কি যেন একটা বাকী আছে...কি আছে বাকী? আসলেইতো, হাসি কোথায়? মুখে একটু হাসি না পরলে কি আর পরা হলো! হেসে ফেলে শাই!

লিফট থেকে নামতেই চোখে পড়ে বুফ্যে রেস্টোরেন্টের ভীড়। এই হোটেলের সব গেস্টই কি ওর মতো হাফ-বোর্ড বেসিসে আছে! হোস্ট এগিয়ে এসে শাই আর ওর পাশের ষাটোর্ধ ভদ্রলোককে জানাল এই মুহূর্তে দু’টো টেবিল খালি নেই, একজন আগে পরে বসতে পারে অথবা যেহেতু আমরা দুজনেই একা, চাইলে একই টেবিল শেয়ার করা যেতে পারে। ভদ্রলোক জানালো, “ক্যারি অন ইয়াং লেডী” উনার ওয়েট করতে আপত্তি নেই। কিন্তু শাই দিলো অন্য প্রস্তাব।

“আসুননা আমরা একই টেবিলে বসি, আপনারও নিশ্চয়ই ক্ষুধা পেয়েছে...” শাই জানালো স্মিত হেসে।
‘না, না ঠিক আছে...আমার অতোটা...’ শেষ করতে পাড়ে না ভদ্রলোক।
“এবার আপনি কিন্তু অপমান করছেন। আমি কি দেখতে অতোটাই খারাপ!” আরো বড় করে হেসে বলল শাই।
ভদ্রলোক লজ্জা পেলেন, এগিয়ে গেলেন শাইয়ের সাথে, টেবিলের দিকে।

বুফ্যে ঘুরে খাবার নিয়ে টেবিলে ফিরে আসতেই শাই দেখল ভদ্রলোক খাবার সামনে বসে আছেন। শাই একটা স্মিত হাসি দিয়ে বসলে, ভদ্রলোক ‘বন-অ্যাপেটিট’ বলে খাবারে ছুরি-চামচ চালাল। বেশ লাগল শাইয়ের, ম্যানার জানেন ভদ্রলোক। সরগরম রেস্টোরেন্টে ওদের এই টেবিলে আবার নেমে এলো নিরবতা। মাঝে মাঝে শুধু ছুরি-চামচের টুক-টাক শব্দ। কিন্তু সেই শব্দও ছাপিয়ে যাচ্ছে ওদের অস্বস্তি...

“আচ্ছা আমিই শুরু করি, আমি শাই, আপনি?”
‘ও আচ্ছা, হ্যাঁ... আমি আবরার, আবরার চৌধুরী’।
“বেড়াতে এসছেন? নাকি কাজ?”
‘আসলে কোনটাই না... আপনি?’
“আচ্ছা? আমিও অনেকটা তাই...বেড়াতে এসছি কিণা জানিনা, কিন্তু কাজেতো নয়ই” হেসে বলে শাই।
এক আধমিনিটের নীরবতা... “আমি কিছুকাল আগে এখানে প্রথম এসছিলাম সাব্বিরের সাথে, আমার হাসবেন্ড, হানিমুনে...কিন্তু এবার আমি একা, আমরা সেপারেশনে আছি”।
‘বিষে বিষ ক্ষয়?’
“বাহ, দারুণ বলেছেনতো! আমিও ঠিক এই শব্দটাই ভাবছিলাম আজ বিকেলে” হেসে বলে শাই।
“কিন্তু আপনিতো বললেন না, কেন এসছেন এখানে?”
‘গত মাস দুয়েক আগে লন্ডনে যখন আমার স্ত্রী চলল, হঠাৎ একদিন, ভাইরাল ফ্লুতে...সবকিছু কেমন অসহ্য মনে হল...ছেলে-মেয়ে ফিউনারেলের সপ্তাহ খানেক পর ফিরে গেল যে যার জীবনে। কিন্তু আমার সময়তো কাটে না! সেই ঘর, সেই বাড়ী, কিন্তু কোথাও ও নেই...শুধু আছে উপচে পরা স্মৃতি। চলে এলাম এখানে, সাগর পাড়ে, মিতা বড় ভালোবাসতো এই সাগর পাড়।’
“সেইতো একই হলো, আবরার সাহেব...বিষে বিষ ক্ষয়!” শাই আড় চোখে তাকায় ভদ্রলোকের দিকে!
ছুরি-চামচ থামিয়ে কি যেন ভাবেন ভদ্রলোক, কিন্তু কিছু বলেন না, আমার মন দেন প্লেটে।
“সরি! আমি হার্ট করতে চাইনি...” অস্বস্তি লাগে শাইয়ের।
‘আরে না, সেরকম কিছু না, এই মাঝে মাঝে পুরোনো স্মৃতি টেনে নিয়ে যায়’।

“তবে যাই বলুন, ফিশ ফ্রাইটা কিন্তু দারুণ হয়েছে” উঠে দাড়ায় শাই। “আমি আরেকটা নিচ্ছি, আপনার জন্যে কি একটা আনবো?”
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১১ রাত ৯:৪৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×