somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরৈবেতি : চলাই জীবন

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোল পেতে রই - তবু তুমি ধুলায় লুটাও নিস্পাপ শৈশব!
(পৃথিবীর তাবৎ দুঃস্থ ও পথশিশুদের)

প্রারম্ভিকা
বৈশাখের আকাশে মাদল মেঘে বজ্র / আর নিচে ফুটপাতে গরীবের এক জীবন কাহিনী - /এক সাথে বাজে। / পৃথিবী উতল - শান্তি নেই - স্বস্তি নেই - জীবনে অনল!/
খোদা জানে কে যে কার দরিদ্র জন্মের জন্য দায়ী! / কোনো এক মা শুধু দুটি শিশু বুকে ধরে কাঁদে অবিরত/ আকাশে বিদায়ী বৈশাখের মেঘ/ বিদ্যুৎ আর বজ্র শব্দে, / কাকতারুয়ার মতো ভয় ছড়িয়ে ছড়িয়ে হাকে - "যা যা দূর হয়ে যা ।"/

হঠাৎ বাতাসের তোড়ে আকাশের মেঘ ভেঙে পড়ে রোষে,/ বাস্তবে আছাড় খেয়ে খোসা ভেঙে জীবন গড়ায় পথে।/ কর্মহীন গ্রাম্য জীবনের ধুলিপথ এসে থামে/ থমকে যায় বড় বড় শহরের রাজপথে, অলিতে-গলিতে/ ভরণপোষণের জন্য কতো শত পরিবার প্রতি বার রাস্তায় নামে!/

ফকফকা পোষাকের মধ্য থেকে বের হয়ে আসে/ নখছাটা সুশোভন নাগরিক হাত।/ হাতগুলো নড়ে ওঠে - বৈদ্যুতিক পাখার মতো ভীষণ জোরে।/ কাকতারুয়ার মতো নেতিবাচ্য হাত নেড়ে নেড়ে/ নাগরিক লোকগুলো বলে - "যা যা এখান থেকে দূর হয়ে যা ...।"/

শহুরে বাড়ীর পেছনে পড়ে থাকে আবর্জনা/ ভাঙ্গারী কুড়াতে গিয়ে ছোট বুকগুলো কেঁপে কেঁপে ওঠে .../ প্রতিটি কম্পনে অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে - চোর!/ আংতকের ঝড় উড়িয়ে নিয়ে ফেলে ভাঙ্গারী দূরে।/ সুযোগ সীমিত হয়ে যায়/ - তবু বাচাঁর লড়াই সহজাত রূপে/ ঠেলে নিয়ে যায় এই জীবন - সমুখে।/

ক্ষুধার পৃথিবী ক্ষুরধার। নিমিষে সাবার লজ্জা।/ একটা ভিক্ষার হাত অপুষ্টি পীড়িত -/ নোংরা /- অবারিত সকলের সামনে,/ সন্ধ্যার অস্পষ্ট ছায়াঘন তেজহীন নম্র আলো / অবারিত রুগ্ন হাত ঘুরে ফেরে এলিফ্যান্ট রোডে/ আজিজ মার্কেটে, শাহবাগের মোড়ে/ পাবলিক লাইব্রেরী আঙ্গিনায়/ রোকেয়া হলের সামনে/ - জীবন চলছে তবু- এইভাবে।/ নিস্পাপ শৈশব তার বনবাসে/ ...দ্বারে দ্বারে হাত পেতে শিশু সকলের সামনে ঘুরে।/ মুখ নাড়ে কাকতারুয়ার দল/ - খরের শরীরে লাউ-মাথা - তেড়ে ওঠে ভীষণ গর্জনে:/ "যা যা দূর হয়ে যা, কাম করে খা ।" /

রাজধানী ঢাকা এক ঝলমলে ফেরিঅলা,/ আর তার হাতে রসনার তাবৎ তৃপ্তি লুকিয়ে রয়েছে মিষ্টি এক মোয়ার ভেতরে।/ জীবনের মায়াবী মোয়ার পিঠে যতো দাঁত দাবে/ ততো নিসিন্দার স্বাদে তীব্র কষ্টে ফিরে আসে রুহু।/ রাস্তার জীবনে কতো ভুল পথঘাট,/ ভুল সব পারাপার,/ প্রলোভন হাত ছানি দেয়।/ দুর্বলের উপরে বেফাস্ উৎপাত করে ভ্রষ্ট ছ্যারাগুলি/ - চৈতনের ঘুন্টি জেগে থাকে তাই মেয়েদের ঘুমের শিয়রে।/ খেলার বয়স তবু মেয়ে খেলার পুতুল ফেলে/ হঠাৎ চেয়ে দেখে নিস্পাপ শৈশব তার চুরি হয়ে গেছে/ দুঃস্বপ্নের কোনো এক অন্ধকার রাতে।/


উপহংসারিকা
পথচারীদের পায়ে পায়ে শত যাদুকর পথ হাটে
ফুটপাতে শুয়ে শিশু ক্লান্ত চোখে দেখে রাজপথ:
হলুদ সবুজ লাল বাতি মোড়ে মোড়ে পথকে থামায়,
উন্মত্ত ঘোড়ার দ্রুতগামী পায়ে তাকে
হটিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে যায় কত দূরে -
যখন অলীক স্বপ্ন সব গাড়ী হয়ে মাথার ভেতরে ঘুরে
ধুলি আর ধুয়ার রাস্তার ধারে সুপ্ত হাহাকারে
ফুটপাতে পথশিশু দেখে পথভরা ঘুপচি গলি
শহরের সারা দেহে এক অজগর হেলে দুলে হাটে।
শত রিক্সা রাস্তায় দিনভর পেডেল মারে,
শুধু তার পা পৌঁছে না পেডেলের ঘাড়ে!
চায়ের দোকান থেকে শহরের কাঁচা বাজারের মোড়ে
কাজের খোঁজে শিশুটি ঘোরে কারখানা থেকে লঞ্চ ঘাটে,
সব যেন সদরঘাটের লালজামা কুলি
প্রতিদ্বন্দ্বী দেখে রক্তজবা চোখে হেকে ওঠে জোরে - যাহ ভাগ!

সবখানে বিতাড়িত হতে হতে বাংলার শৈশব বিস্ফারিত
চোখ মেলে হঠাৎ দেখে - সমুখে জুয়েল আইচের যাদু ।
যাদুর পাগড়ীর মাঝে এক সাথে ঘুমিয়েছে শহরের লোক।
ঘুমের ঘোরে মঞ্চের মাঝে হাটে তারা সম্মোহিত নাগরিক
যাদুর আসর ভাঙে করতালি মুখরিত দর্শকের হাতে,
তবু কারো ডাকে আর কখনো ভাঙেনা কারো ঘুম।

সমগ্র দেশের ক্ষুধার্ত শৈশব ঢাকা গেটে বসে আছে
তার ম্লান মুখে অশ্রুধারা গাঢ় ভেজা একটা রেখার মতো
আনমনে শুকিয়ে রয়েছে।
মরা নদীর তীরে আজ মরে আছে সভ্যতার গরু -
কাক শোকুনের ভোজন আসরে মানুষের ভাষা কারা বোঝে!
কারো কান্না মানবের কানে কেন পৌঁছেনি এখনো ?


যতো নামে ডাকো - ঢাকাবাসী, সুশিক্ষিত, মানুষের বোধ -
এইসব র্নিবোধ কখন জেগে উঠবে নিজের চেতনে !

সভ্যতার পার্ক থেকে দূরে যদি মানুষের স্থান
মানুষের কন্ঠে যদি স্তদ্ধ এই জীবনের জয়গান,
নিজ গ্রহে যদি নিম্নবর্গী পথের মানুষ তুমি
তবে জেনো ওই পৃথিবীতে কেউ নই আমি।
কেউ না বাধুক আমাদের হাতে সম্প্রীতির রাখি
পথ আর পথিক শৈশব - তুমি আমি বন্ধু দুইজনে -
চলো আমরা আমাদের মতো ভালো থাকি।

পথ চলতে যদি দেখো পথের জীবনে উপদ্রব -
রাস্তার উপরে পরে আছে খাদ্যহীন ছেঁড়া বাক্স, খালি টিন,
পথরোধ করে যদি মাদকের হাসি,
রাষ্ট্রের বখাটে রাজনীতি - সমাজ-বিরোধী,
শোভন পোষাকে অসৎ শিক্ষিত সন্ত্রাসী,
ধর্ম ব্যবসায়ী, পিডোফ্যালিয়ার বিষাক্ত জীবানু
যদি পথরোধ করে
তবে
এই সব
আর দুনিয়ার কপালে লাত্থি মাইরা
আসো বন্ধু আমরা পথে হাটি।
৩২টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩২

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১০ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামে যে দল গঠন করেছিলেন, তা থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দুরত্বে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সুশাষন প্রতিষ্ঠিত না করলেও বিএনপির বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×