'গনতন্ত্র হলো মূর্খের শাসন ব্যবস্থা' -প্লেটোর কথাটি বলার একটি বড় দিক ছিলো।
সেটা পরে বলছি।
তার অাগে বলি, উনার শিষ্য এরিষ্টটল কিন্তু গনতন্ত্রকে এভাবে দেখেননি। মূলত রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদিকে তিনি খারাপের তালিকায় রেখেছেন। অার এই খারাপের মধ্যে ভালোটি হলো গনতন্ত্র।
প্লেটো মূলত বলতে চেয়েছেন,
বুদ্ধিমানের চেয়ে মূর্খ ও অবিবেচকের সংখ্যা অধিক। সুতরাং সংখ্যাধিক্যের শাসন বলে এটা প্রকারান্তরে মূর্খের শাসন।
জন লেকি অবশ্য বলেছিলেন , ‘গণতন্ত্র দারিদ্র্য পীড়িত, অজ্ঞতম ও সর্বাপেক্ষা অক্ষমদের শাসন ব্যবস্থা; কারণ তারাই রাষ্ট্রে সংখ্যায় সর্বাপেক্ষা অধিক।
এরিষ্টটল এটাও বলছেন,
'যে শুধু নিজের স্বার্থ দেখবেনা, সমগ্র জনগোষ্ঠীর মঙ্গল সাধানায় কাজ করবে সেই ভালো সরকার'।
অাধুনিক গনতন্ত্রের প্রবক্তা হিসাবে অামরা এখন যাদের অনুকরণ, অনুসরণ করছি তারা গনতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদটা অনুভব করছেন। প্রকারন্তে অামরা পাচ্ছি তিক্ত একটা স্বাদ। এজন্যই হয়তো-
ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেছেন, ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বের সর্বত্র সামাজিক অশান্তির অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল প্রচলিত এই নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা। কেন্দ্রে ও স্থানীয় সংস্থা সমূহের সর্বত্র এই নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সর্বত্র নেতৃত্বের লড়াই, পারস্পরিক হিংসা-হানাহানি এবং সামাজিক অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপ্তি লাভ করেছে’।
যেহেতু এখন সমগ্র বিশ্বে গনতন্ত্র একটি উকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা বলে বিবেচিত হয়; সেখানে বিষয়টি নিয়ে বেশি কিছু না বলাই ভালো।
একজন মুসলিম হিসাবেঃ
গণতন্ত্রের মূল কথা জনগণের সার্বভৌমত্ব। অর্থাৎ সকল ক্ষমতার মালিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি শিরক। সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক কখনো জনগন হতে পারেনা। এটা শুধু একজন মুসলমান নয় কোন ধর্মের লোকই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেনা। সুতারাং যারা বুঝে -শুনে কথাগুলো বলেন তারা স্পষ্টত শিরক করেন।
প্রকৃত পক্ষে-
পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স দেওয়া, মদের লাইসেন্স দেওয়া, সূদের বৈধতা দেওয়া, ১৮ বছরের পূর্বে বিয়ে নিষিদ্ধ করা, যাত্রা, সিনেমাহলে প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার চর্চাকে অনুমোদন দেওয়া । এগুলো একজন মুসলিম হিসাবে মেনে নেয়া খুবই বিপদজনক। অার এগুলো জবাবদিহিতা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদেরই দিতে হবে।
বলছিলাম গনতন্ত্রের কথা। এখানে বাকস্বাধীনতা, ভোটাধীকার , নিরাপত্তা এবং অারো অন্যান্য বিষয় জড়িত অাছে । সেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটুকু সম্ভব হচ্ছে অার কতটুকু সম্ভব হচ্ছেনা সেটা জনগন ভালো ভাবেই বোঝার দিন এসেছে।
একদিকে একদল উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। অন্যদল খালি হাতে তবলা বাজাচ্ছে।
একদল ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া; অন্যদল অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে।
একদল ফুরফুরে মেজাজে দিন পার করছে; অন্যদল নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
প্রচার-প্রসারে সরকারী দল অ্যাডভ্যান্স লেবেলেই অাছে। সেখানে বিরোধীরা কেঁদে কেটে মরছে। ধড়পাকড় অার মার খেয়েই দিন যাচ্ছে।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে লাশের স্তুপ হবে ; ওবায়দুল কাদের যদি এমন কথা শোনান তবে বুঝতে হবে অামাদের দেশের গনতান্ত্রিক অবস্থা মোটেই ভালো নেই।
পরিশেষে প্রচারেই প্রসার; এই লাইনটি সরকারী দলকে অারো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়ন তো হয়েছেই; এটা বিরোধীদল কেন সাধারণ জনগন অস্বীকার করতে পারবেনা। দূর্নীতি যাই থাক সেটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে । ক্ষমতায় এলে অাস্তে অাস্তে এগুলো ভ্যানিস হয়ে যাবে।
কিন্তু যে পদ্ধতিটা অামাদের গনতন্ত্রে অ্যাপ্লাই হচ্ছে সেটা ভবিষৎ বাংলাদেশের জন্য মোটেই কল্যানকর হবেনা। হবার সম্ভাবনা নাই।
ক্ষমতায় অাসার জন্য গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাকে প্রাধ্যান্য না দিয়ে অন্য কিছুর উপর ভর করা-সেটা যে দলই করুক; ফলাফলটা সাময়িক অানন্দের হলেও পুরো জাতির জন্য একদিন সেটা বেদনাদায়ক হয়ে উঠবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৯