'চাঁদগাজী' ব্লগে বেশ পরিচিত বলে মনে হয়। রাজনীতি নিয়ে অস্থির পোষ্ট এবং ধর্ম নিয়ে বিকালাঙ্গ মন্তব্য উনাকে হয়তো বেশি পরিচিত করেছে। ব্লগে অামার প্রথম পোষ্টে উনার প্রথম মন্তব্যে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, উনি কোরঅান এবং কোরঅানে বর্ণিত কেয়ামত, হাশর, পরকাল, কবরের অাযাব, বেহেস্ত, দোযখ রুপকথার গল্প হিসাবেই মনে করেন। তারপর থেকেই উনাকে বেশ মনে রেখেছি।
তবে একটা ব্যতিক্রম বিষয় হলো, উনার এই অবিশ্বাসের ধরণটা এমনই টেকনিক্যাল যে সহজে উনাকে কেউ অানসেটিসফাই করে কথা বলতে পারেনা।
'পৃথিবী ধ্বংষের অনেক আগেই কিছু প্রজন্ম মঙ্গল গ্রহে, কিছু শনির এক চাঁদে, আরো একদলকে দুরের এক নক্ষত্রের গ্রহে বসতি ব্যবস্থা করে মানব প্রজন্মকে কোটি কোটি বছর টিকিয়ে রাখা হবে'।
এই মন্তব্য করার জন্য উনি এক ব্লগারকে বাচ্চা ছেলে বলেছেন।
দেখি, চাঁদগাজী যাদেরকে গুরু বলে মানেন তারা কি বলেছেন।
'পৃথিবী বড়জোর অারো ৩০০০ হাজার বছর টিকে থাকতে পারে। পৃথিবী ধ্বংসের অাগে অামাদের মহাকাশের অন্য কোথাও বসবাসের চিন্তা করতে হবে-স্টিফেন হকিং।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সর্বোচ্চ ২০৫০ সালের ভীতর মঙ্গলে বসতি স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এবং সেটা সম্ভব বলে জোরালো মত দিয়েছেন।
এখন কোনটা সঠিক? চাঁদগাজী না উনার গুরুরা?
অাসুন একটু অস্থির কথা বলিঃ
পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, কোন জাতি দেখেনি। পৃথিবী ধ্বংস হবে, ইহা কেউ দেখবেনা@ চাদঁগাজী।
এখানে দ্বিতীয় লাইনটি একেবারেই অনুমান প্রসূত। কেননা, পৃথিবী যেভাবেই ধ্বংস হোক; হতে পারে সেটা সংকোচন( বিজ্ঞান বলছে), হতে পারে মহাপ্রলয়( কেয়ামত)। মানুষ ডায়নোসরের মত বিলুপ্তি হবার পর পৃথিবী ধ্বংস হবে এটা অনুমাননির্ভর জ্ঞান।
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন। (সূরা হজ, আয়াত ১-২)
যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে জানতে পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে। (সূরা ইনফিতার, আয়াত ১-৫)
তোমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকারাজি আলোহীন হবে, আর আকাশ বিদীর্ণ হবে, আর যখন পাহাড়গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হবে, আর যখন রাসূলদেরকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে; কান দিনের জন্য এসব স্থগিত করা হয়েছিল? বিচার দিনের জন্য। আর কিসে তোমাকে জানাবে বিচার দিবস কি? মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ! (সূরা আল মুরসালাত, আয়াত ৭-১৫)
বোঝা গেল, পৃথিবী যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে তখন পৃথিবীতে মানুষের বসবাস থাকবে। এবং এই মহাপ্রলয়ে তাদের মৃর্ত্যু ঘটবে। এবং শুধু পৃথিবী নয়, পুরো মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।
অাল্লাহপাক এই মহাবিশ্বকে মাদুরের মত গুটিয়ে নিবেন বলে ঘোষনা করেছেন। অার এটাকেই বিজ্ঞানীরা হয়তো বলছেন, মহা সংকোচন।
এখন যারা পৃথিবীর বাইরে যেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের চিন্তা করছেন তারা সেটা কোনদিন করতে পারবেন না। কেননা, অন্যান্য গ্রহের তাপমাত্রা, অাবহাওয়া,
অক্সিজেন, খাদ্যের যোগান এটা মানুষের স্থায়ীভাবে বসবাসের উপযোগী করা স্বপ্ন থাকলেও বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। যদিও নাসা অাশার অালো দেখাচ্ছেন।
অবশ্য তারা পৃথিবী সদৃশ অনেকগুলো গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু সেটা সৌরজগতের এতটাই বাইরে যে সেকানে অালোর গতিতে পৌছাতে কয়েকশত বছর লেগে যেতে পারে।
পৃথিবী, সূর্য, অন্যান্য নক্ষত্র, উপগ্রহ, গ্যালাক্সি এগুলো কোন বৈজ্ঞানিকের গবেষণার ফসল নয়। তারা কোটি কোটি কিলোমিটার এমনকি কোটি অালোকবর্ষ দূর থেকে এগুলো পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, এবং অনেক ক্ষেত্রে অান্দাজ অনুমানের ভিত্তিতেই কথা বলছেন।
হ্যা, বৈজ্ঞানিকরা বলছেন অারো ২ থেকে ১ বিলিয়ন বছর সূর্য অালো দেয়ার মত জ্বালানী অাছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, তার অাগে সূর্য নিভে যাওয়ার সম্ভবনা নেই।
মূলত, বৈজ্ঞানিকদের ধারণা অনুযায়ী অামাদের এই দৃশ্যমান ইউনিভার্স পাড়ি জমাতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন অালোকবর্ষ লেগে যেতে পারে। (অালোর গতিতে লক্ষ্ কোটি বছর পথের দূরত্ব) সেখানে অামাদের এই পৃথিবী অস্তিত্বহীন ছাড়া কিছুই নয়।
সুতরাং এরকম অগণিত ইউনিভার্স( অসংখ্য ইউনিভার্স থাকতে পারে বলে বৈজ্ঞানিকদের ধারণা ) যিনি সৃষ্টি করেছেন তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অামাদের বাগাড়ম্বন কতখানি ন্যায় সঙ্গত বা যুক্তিসঙ্গত বা অামাদের কতটুকু যোগ্যতা অাছে সেটা বিবেচনার বিষয় নয় কি?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১