‘অনুধ্যান’
(মেডিটেশন্স)
- মার্কাস অরেলিয়াস
- ২য় শতকে লিখিত
এক কথায় পুরো বই
---------------------
তুচ্ছ বিষয় বা সংকীর্ণতার মাঝে নিজেকে আটকে রেখো না; নিজের জীবনকে আরো বড় প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে আস্বাদন করো।
৭টি উদ্ধৃতি
-----------
“প্রতিটি দিন নিজেকে একথা বলে দিনটি শুরু করো: আজ আমি বাধাবিঘ্ন, অকৃতজ্ঞতা, ঔদ্ধত্য, বিশ্বাসঘাতকতা, বিদ্বেষ ও স্বার্থপরতার মুখোমুখি হবো – এ সব কিছুর পেছনে কোনটি ভালো বা দুষ্ট সে বিষয়ে দোষী ব্যক্তিদের বোধগম্যহীনতা কাজ করে। তবে আমি অনেক আগেই ভালত্বের প্রকৃতি ও এর মহত্ত্ব এবং দুষ্টের প্রকৃতি ও এর হীনতা হৃদয়ঙ্গম করেছি- এবং সেই সাথে দোষী ব্যক্তির প্রকৃতিও অনুভব করেছি। দোষী ব্যক্তি তো আমারই ভাই, রক্তের সম্পর্কের নয় অবশ্যই, তবে যুক্তি ও দিব্যগুণের একাংশের অধিকারী একই শ্রেণির প্রাণী হিসেবে। সেহেতু এসবের কোনোকিছু আমাকে আহত করবে না, কারণ অধ:পাতিত করে এমন কোনো কিছুতেই কেউ আমাকে জড়াতে পারবে না।”
“তোমার কাছে নিয়তির আবর্তনে যা কিছু আসে এর বাইরে কোনো কিছুকেই ভালবেসো না। তোমার চাহিদা মেটানোর জন্য এরচেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?”
“সবকিছুই – একটি ঘোড়া, আঙুর লতা – কোনো কার্যপালনের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এতে তো আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই: এমনকি সূর্যদেবতাও তোমাকে একথা বলবে, ‘আমি তো একাজ করার জন্যই এখানে এসেছি,’ এবং সব উর্ধ্বলোকবাসীই এমন সুরে কথা বলবেন। তাহলে কোন কার্যপালনের উদ্দেশ্যে তোমার সৃষ্টি হয়েছে? আনন্দের জন্য? এমন চিন্তা কি আসলেই সহ্য করা যায়?”
“যতক্ষণ আমার মনের উপর আমার নিয়ন্ত্রণ আছে, বাইরের কোনো কিছু আমাকে প্রভাবিত করতে পারবে না। বাইরের কোনো কিছু আমাকে ততটাই বেদনা দিতে পারবে যতটুকু আমি অনুমোদন করব। আমি যখনই বেদনা দেওয়ার অনুমোদন বন্ধ করব, আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে যখনই আমি এমন ভাবনার সমাপ্তি ঘটাব, বেদনা শূন্যে মিলিয়ে যাবে।”
“বদলোকেরা দুষ্ট কাজ করবে না, এমন প্রত্যাশা করা আর আম গাছ থেকে আম ফলবে না এমন ভাবা একই। এটি যেন নিশ্চিত মনোভঙ্গের কারণ হবে জেনেও অসম্ভবকে চাওয়া।”
“প্রতিটি বিষয় ও বস্তুই প্রকৃতিগত ভাবেই অনিত্য ও পরিবর্তনশীল। জীবন খুবই স্বল্পায়ুর, চোখের পলকে এ শেষ হয়ে যায়। শীঘ্রই আমরা দেহত্যাগ করব, আমরা যেসব ব্যক্তির সমর্থন আর প্রশংসা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকি তারাও। আর তাই সস্তা খ্যাতি বা প্রশংসার খোঁজ আসলে অর্থহীন- এসবে কিছু্ই যায় আসে না!”
“অনিষ্টকারীর চেয়ে ভিন্ন হওয়াটাই শ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ।”
গ্রন্থ পর্যালোচনা
---------------
মার্কাস অরেলিয়াস অ্যান্টোনিয়াস ১৬১ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট হয়ে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ১৯ বছর রোম সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। তিনি যখন রোমের শাসনভার গ্রহণ করেন তখন রোম সাম্রাজ্য বিভিন্ন দিকে হুমকির সম্মুখীন। সীমান্তে ‘বারবারিয়ানদের’ সাথে যুদ্ধ চলছিল। এছাড়াও সৈন্যদের সাথে বিভিন্ন রোগ আর মহামারীও প্রবেশ করে এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের ঘটনাও ঘটে। একটা কথা ভাবুন, এমন এক ক্রান্তিকালে এক বিশাল সাম্রাজ্যের সম্রাট দার্শনিকের মতো চিন্তাভাবনা করছেন। তা কি সম্ভব? মার্কাস অরেলিয়াস এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন এবং তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পরে রোমানরা তাঁকে আদর্শ সম্রাট হিসেবে পূজো করার পাশাপাশি তাঁকে দার্শনিক রাজার মর্যাদা দেয়। তবে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সন্তান কমোডাস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে এবং এরপর তৃতীয় শতকের নৈরাজ্য রোমকে পিষে ফেলে।
স্টয়িক বা নিস্পৃহবাদী দর্শনের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি জীবনের ও সাম্রাজ্যের হাজার দুর্দশার মাঝেও ভেঙে পড়তে চাননি। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ এর দিকে গ্রীসে এই দর্শনের জন্ম। সহজ কথায় বলা যায়, মানুষের বেঁচে থাকার উচিৎ উপায় যে মহাবিশ্বের বিধানের কাছে আনুগত্য করা সেটি এই দর্শন শিখিয়েছে। সেই সাথে কর্তব্য পালন, সুখভোগকে এড়ানো, যুক্তি ও মৃত্যুভীতিহীনতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্টয়িকদের ক্ষেত্রে নিজ কর্মের জন্য পূর্ণ দায়িত্বশীলতা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং নিজ স্বার্থের বাইরে উচ্চতর কল্যাণের জন্য সচেষ্টতার সংমিশ্রণ ঘটে। সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস আসলে বর্তমানের জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন কারণ এখানে সামষ্টিক প্রচেষ্টার সুযোগ আছে। স্টয়িকদের মূলত আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং তারা সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাস করত। স্টয়িকরা যে শুধুমাত্র জাগতিক বিশ্বকে ছাড়িয়ে যেত তা নয়, তারা সময়কেও ছাড়িয়ে যেত: “সব কিছু্ই অতীতের কাহিনী হয়ে যায়, আর এসবের কিছু আবার বিস্মৃতিতে হারিয়ে যায়। এমনকি যাদের জীবন মহিমামন্ডিত তারাও হারিয়ে যান। বাকিদের ক্ষেত্রে, শেষ নি:শ্বাস ত্যাগের সাথে সাথেই, হোমার যেমন বলেছিলেন, তারা ‘দৃষ্টি ও জনরবের অগোচরে চলে যায়।’ তাহলে অমর খ্যাতির পরিশেষ কী? অসার, শূন্য বস্তু। তাহলে আমরা কিসের জন্য প্রচেষ্টায় থাকব? ন্যায় চিন্তন, স্বার্থপরতাহীন কার্য, অসত্য উচ্চারণে বিরত এমন জিহ্বা, প্রতিটি ঘটনাকে পূর্বনির্ধারিত, প্রত্যাশিত ও পরম একক উৎস থেকে আগত ও উৎপন্ন হিসেবে সাদরে গ্রহণ করে এমন মনোবস্থা বজায় রাখার প্রচেষ্টা- কেবল এ জন্যই, আর কিছু নয়।”
এটি ১৯ শতাব্দী পুরনো ১২টি খন্ডে বিভক্ত ছোট্ট একটি লেখা। তবে এর প্রাচীনত্ব জানার পর এর আবেদন কমে যায় না, বরং বেড়ে যায়। মার্কাস অরেলিয়াস এর জীবন যেন তার লেখার সারবত্তাকে তুলে ধরে। এই বইটি না থাকলে আমরা তাঁকে আর কতটুকুই বা স্মরণ করতাম। তার দক্ষতা আর নেতৃত্বের কথা আর কতই বা বলতাম। কিন্তু কখনো কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে রাতের পিদিমের আলোয় বসে লেখা এই গদ্য আমাদের হৃদয়-মনে জায়গা করে নিয়েছে।
মহাবিশ্বে সব কিছুর মাঝে, মানুষের মাঝেও, যে মৌলিক ঐক্য আছে, ‘অনুধ্যান’ পড়লে সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত এক বোধের সংস্পর্শে আসা যায়। সেই বোধ যেন বলে দেয়, অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিতে কিছু দেখার প্রচেষ্টা আসলে প্রত্যক্ষকারী ব্যক্তির বিশ্বকে ছাড়িয়ে দেখার চেয়ে কম নয়- আর এর ফলে সবকিছুকে একীভূত করার ঘটনা ঘটে। কোনো ব্যক্তিকে ঘৃণা করা, অবহেলা করা বা বিচার করার অর্থ হলো প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়া। সম্রাটের ভাবনার মূল বিষয়টিই হলো, মানবিক সম্পর্ককে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে যে অবশ্যই এসবের বিপরীত কাজ করতে হবে তার উপলব্ধি।
‘অনুধ্যান’ এর পরতে পরতে একথারই প্রতিধ্বনি যে, যা কিছু যেমন, লোকেরা যেমন তেমন ভাবেই গ্রহণ করাটাই কর্তব্য, আমরা তাদের যেমন চাই সেভাবে নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কষ্টের ছোঁয়া আছে ঠিক, অরেলিয়াস যেমন বলছেন: “তোমার হৃদয় ভেঙে চুরমার হতে পারে, কিন্তু লোকেরা ঠিকই তাদের মতোই চলতে থাকবে।” অরেলিয়াসের বই পড়ে এমন অনুভূতি হতে পারে যে আপনি কোনো একাকী নি:সঙ্গ ব্যক্তির কথা শুনছেন, কিন্তু তিনি ঠিকই নৈর্বক্তিকভাবে সবকিছু দেখেছেন এ কারণে তিনি নিজে মোহমুক্তির তিক্ত স্বাদ থেকে মুক্ত ছিলেন: “তুমি সেই শিলাখন্ড হও যার গায়ে বারবার উত্তাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে: আর শিলাখন্ডটি অনড় দাঁড়িয়ে থাকে, ততক্ষণে চারদিকের উত্তাল জলরাশি থিইয়ে এসে বিশ্রাম নেয়। ‘হায়, আমি কতই না অভাগা, আমার ভাগ্যেই এমনটা ঘটল!’ না, না, এভাবে ভেবো না, বরং বলো, ‘আহা, আমি কতই না ভাগ্যবান, এরপরও তো আমার মাঝে কোনো তিক্ততা নেই, বর্তমান আমাকে অবিচলিত রাখছে, ভবিষ্যতও আমাকে নি:শঙ্ক রাখে।’”
স্টয়িক দর্শনের মাহাত্ম্য হলো সব কিছুকে এমন এক দৃষ্টিকোণে নিয়ে আসা যেন আপনি যা প্রয়োজনীয় তা স্মরণে রাখতে পারেন ও তা চর্চ্চা করতে পারেন। ‘অনুধ্যান’ বইটিকে আপনি ভাবতে পারেন যেন ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ’ এর প্রাচীন ও মহৎ সংস্করণ। দুনিয়া আসলে যেমন, সেটি যে ব্যক্তি তার মনশ্চক্ষে দেখতে পারেন তিনি তার গন্ডি পেরিয়ে সীমানার বাইরেও দেখতে সমর্থ হন। আমরা যে এই দুনিয়ায় বাস করছি, আমাদের কখনো কখনো মনে হয় যেন আমাদেরকে কোন এক কর্ম সাধন করতে হবে, আর আমরা যেন অন্য কোথাও থেকে এসেছি এবং এক সময় ফিরেও যাব। জীবন আসলেই দু:খময় ও নিরর্থক মনে হতে পারে, কিন্তু সমগ্র মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব বিষয়ে আমাদের যে কৌতুহল ও বিস্ময় তা তো কখনো পানসে হয়ে যায় না: “তোমার মাথার উপর ঘূর্ণায়মান তারকাপুঞ্জ খেয়াল করো, ভাবো যেন তুমি তাদের মাঝেই আছো আর তাদের সাথে ঘুরছো। মাঝে মাঝেই প্রাকৃতিক শক্তির পরিবর্তনশীল ও পুন:পরিবর্তনশীল যে সদানৃত্য রয়েছে সেটি মনশ্চক্ষে আনো। এমনতর সব স্বপ্নাবিভাব আমাদের পার্থিব জীবনের একঘেয়ে তলানি পড়া বোধকে মুক্ত করে আমাদের রাগমোচন ঘটায়।”
শেষ কথা
আমাদের মনে এক কৌতুহলোদ্দীপক প্রশ্ন হাজির হয়। মার্কাস অরেলিয়াস তো কমোডাস এর পিতা। কমোডাসই প্রথম অ-বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারের যে ঐতিহ্য সেটির বিপরীতে গিয়ে রোম সাম্রাজ্যের দখল নেয় এবং বর্বর শাসনেরও প্রমাণ দেয়। মার্কাস অরেলিয়াস এর মতো অমন দার্শনিক কিভাবে এমন পুত্র মানুষ করলেন? ‘অনুধ্যান’ বইটি আসলে অন্যান্য আত্মোন্নয়ন বইয়ের মতো সরল উত্তরে ঠাসা নয় – এর মূল বিষয়বস্তুই হলো ‘অপূর্ণতা’। সবকিছু কেন ঘটে তা আমরা কখনোই জানতে পারব না, মানুষেরা কেন তাদের নিজ নিজ খেয়াল মত আচরণ করে বা কাজ করে চলে তাও জানব না। বরং এসব কিছুই তো আমাদের বিচার্য নয়, ঘটনাপ্রবাহ ও জীবনের আসলে আরো বৃহত্তর অর্থ আছে যা আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। এই জ্ঞানটিই আসলে এক সান্ত্বনা। ‘অনুধ্যান’ ছোট্ট একটি বই যেটি শৃঙ্খলহীন বিশ্বে বিচারবুদ্ধির সুস্থতার উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। বইটির সাধারণ গদ্য আধুনিক যুগের পাঠকের মন কেড়ে নেয়।
মার্কাস অরেলিয়াস
১৩৮ খ্রিস্টাব্দে রোমের অন্যতম সফল সম্রাট হাড্রিয়ান মৃত্যুর সময় অ্যান্টোনিয়াস পায়াসকে তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে মনোনীত করে যান এবং হাড্রিয়ানের নির্দেশমতই অ্যান্টোনিয়াস পায়াস ১৭ বছর বয়সী মার্কাস অরেলিয়াসকে তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে মনোনীত করেন। মার্কাস অরেলিয়াস একসময় অ্যান্টোনিয়াস পায়াসের কন্যা ফাউসটিনাকে বিবাহ করেন। তিনি নিয়মিত রাজকার্য পালনের পাশাপাশি আইন ও দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করতেন। ৪০ বছর বয়সে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং তাঁর ভাই লুসিয়াস ভেরাস এর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে শান্ত স্বভাবের হলেও সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য তাঁকে বিভিন্ন সময় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। মার্কাস অরেলিয়াস কখনো চাননি যে তাঁর ১২ খন্ডের পান্ডুলিপিটি প্রকাশিত হোক। ১৮০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর প্রায় ১৪ শতাব্দি পরে ১৫৫৯ সালে এটি প্রথম বই হিসেবে প্রকাশিত হয়। আমরা যদিও রিডলি স্কটের সিনেমা ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ এ দেখি যে কমোডাসের হাতে সম্রাট নিহত হয়েছেন কিন্তু এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
একই ধরনের বই
------------------
বোয়েথিয়াস এর ‘দর্শনের সান্ত্বনা’ (দ্য কনসোলেশন অব ফিলোসফি)
রিচার্ড কার্লসন এর ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না’ (ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ)
রূপান্তর ©হাসিনুল ইসলাম