গত সপ্তায় একদিন ছুটি আর তারপরেই আবার শুক্র-শনি অফিস ফাঁকি দেয়ার সুযোগে কি করি কি করি যাতনায় ছটপটে অনুভূতি থেকে মুক্তি থেকে অনুবাদে হাত। তারই ফল এটি। মিচিও নাকি মিশিও, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাকি বলেন - ড. কা - কু! ৩৫০ পৃষ্ঠার বই Physics of the Impossible আর তার উপর আমি এইচএসসি পাস বিজ্ঞানের ছাত্র। কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা হলো, আমার অনুবাদের বড় দুর্বলতাই হলো আক্ষরিক অনুবাদ। তাই ৩৫০ পৃষ্ঠার সারভাগ স্ক্রীনে আনার চেষ্টা করব (করব নাকি করবো?) যাতে আক্ষরিক অনুবাদের বিষক্ষয় হয়।
====================================================================================
ভূমিকার ভনিতা
একশ বছর আগে লেজার, টেলিভিশন বা আণবিক বোমার কথা বলা হলে বিজ্ঞানীরা যতসম্ভব বলতেন যে এসব বস্তুর সম্ভাব্যতা ভৌতবিজ্ঞানের সীমারেখার বাইরে। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু এই বইয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে টেলিপোর্টেশন বা টেলিকিনেসিস এর মত বিষয় সূদুর ভবিষ্যতে নিত্যদিনের বিষয় হতে পারে। তিনি অসম্ভবের প্রুযুক্তিকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন- আগামী শতাব্দিতে সম্ভবপর, আগামী সহস্রাব্দে সম্ভবপর, এবং হয়ত কখনো সম্ভবপর নয় এমন। উনি দেখিয়েছেন কিভাবে একদিন অপটিকস আর ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম এর বিজ্ঞান আলোকে ইচ্ছেমত বাঁকাতে পারবে, যেভাবে একটা পানির মধ্যে থাকা পাথরের চারপাশ দিয়ে পানির ধারা বয়ে চলে। র্যামজেট রকেট, লেজারের পাল, অ্যান্টিম্যাটার ইঞ্জিন আর ন্যানো-রকেট কিভাবে আমাদেরকে একদিন কাছাকাছি তারার দেশে নিয়ে যাবে। টেলিপ্যাথি আর সাইকোকিনেসিস, একসময় যেসবকে ভূয়াবিজ্ঞান বলে ভাবা হতো, কিভাবে উন্নত এমআরআই, কম্পিউটার, সুপারকন্ডাকটিভিটি ও ন্যানোটেকনোলজির সাহায্যে বাস্তবে পরিণত হবে। উনি আরো ব্যাখ্যা করেছেন, টাইম মেশিন কিভাবে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার বিদ্যমান নিয়মনীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তবে এমন একটি যন্ত্র বানানোর পর্যায়ে যেতে মানবজাতিকে হয়ত আরেক বিস্ময়কর সভ্যতায় উন্নীত হতে হবে।
কাকুর কৃতজ্ঞতা
বইটি লেখার সময় কাকু বিভিন্ন বিদ্বজ্জনের সাথে আলোচনা করেছেন। উনি যে ক’জন ব্যক্তির প্রতি নামোল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা সংখ্যায় ১৭ জন। আর এঁদের ১০ জনই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী

কাকুর ভনিতা
কাকু তাঁর বইয়ের ভূমিকা শুরু করেছেন আলবার্ট আইন্সটাইনের একটি উক্তি দিয়ে:
“কোনো ধারণাকে যদি প্রথমে উদ্ভট মনে না হয়, তাহলে এ দিয়ে কিছু হবে বলে মনে হয় না।”
এরপর কাকুর ভূমিকা কথন শুরু: “ভবিষ্যতে কোনো একদিন, দেয়ালের ভেতর দিয়ে হেঁটে পার হওয়া সম্ভব হবে কি? এমন স্টারশিপ তৈরি করব যা আলোর চেয়ে দ্রুত চলবে? অন্য মানুষের মন পড়তে পারব? অদৃশ্য হতে পারব? মনের শক্তিতে বস্তু নাড়াতে পারব? মুহূর্তের মধ্যে আমাদের শরীরকে বহির্জগতে পাঠাতে পারব?”
কাকু এরপর তাঁর শৈশবের কথা বলেন। কিভাবে তিনি সেই সময় থেকেই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেন। অন্য অনেক পদার্থবিজ্ঞানীর মতই তিনি যখন বড় হচ্ছিলেন তখন টাইম ট্রাভেল, রে গান, ফোর্স ফিল্ড, প্যারালেল ইউনিভার্স এর মত আরো বহু কিছুর সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তায় ডুবে থাকতেন। এভাবেই তিনি এসব অসম্ভবের প্রেমে পড়লেন, সারাজীবনের জন্য।
কাকু জানান, তিনি সেই ছোটবেলায় কিভাবে ‘ফ্লাশ গর্ডন’ এর মত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী দেখার জন্য রোজ শনিবার টিভির সামনে আঠায় আটকে থাকা পোকার মত বসে থাকতেন। সেখানে তিনি রকেট শিপ, রে গান, অদৃশ্য প্রতিরক্ষা আর মহাকাশের নগরী দেখতে পেতেন। কাকু জানাচ্ছেন, কেবল তিনিই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর ভক্ত ছিলেন তা নয়। অন্য অনেক বিজ্ঞানীই এমন ছিলেন। হাবল টেলিস্কোপ যাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে সেই মহান এডউইন হাবল একসময় জুল ভার্নের ভক্ত ছিলেন। জুল ভার্নের ভক্ত হওয়ার কারণে আইন পেশায় খুব ভালো ক্যারিয়ারের আশা ছেড়ে, বাবা-মার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি বিজ্ঞানকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কার্ল সাগানের মত বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এডগার রাইস বারোজের ‘মঙ্গল গ্রহের জন কার্টার’ উপন্যাসগুলোর মাধ্যম।
কাকু স্মরণ করতে পারেন যে তাঁর শৈশবে আলবার্ট আইনস্টাইন মারা গেলে সবাই তাঁকে নিয়ে কথা বলছিল। পরদিন সকালে বাড়ির টেবিলে তিনি পত্রিকায় দেখলেন, আইন্সটাইন একটি অসমাপ্ত পান্ডুলিপি রেখে গেছেন। সেখান থেকে তিনি জানলেন, আইন্সটাইনের একটি অসম্ভব স্বপ্ন ছিল, এমন এক সমস্যা সমাধানের ইচ্ছে যা মর্ত্যের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এরপর বেশ কয়েক বছর পরে কাকু জেনেছিলেন, কি ছিল সেই স্বপ্ন। আইন্সটাইন পদার্থবিদ্যার তত্ত্বগুলোকে একত্র করে একটি একীভূত তত্ত্ব হাজির করতে চেয়েছিলেন – “সবকিছুর তত্ত্ব” নামে যা পরিচিত।
কাকু তাঁর শৈশব থেকে বয়োপ্রাপ্তির পরে বুঝতে পারলেন, তাঁর দেখা টিভি সিরিজের কল্পবিজ্ঞানে নায়ক শেষমেষ সবসময় তাঁর স্বপ্নের নারীকে পেতো কিন্তু একজন বিজ্ঞানীই টিভি সিরিজটি বাঁচিয়ে রেখেছিল। সেই টিভি সিরিজে ড. জারগভ না থাকলে তো কোনো রকেট শিপ থাকতো না, পৃথিবী রক্ষার জোগাড়ও হতো না। বীরত্বকে পাশে সরিয়ে রাখলে দেখা যাবে, বিজ্ঞান ছাড়া কল্পকাহিনী সম্ভব না। কাকু একসময় ভাবলেন, এসব সম্ভবপর নয়, সবই কল্পনার খেলা। অন্যেরা তাঁকে একথাও বলল, কল্পনার জগত ছেড়ে বাস্তবে আসো।
যাহোক, কাকু বুঝলেন, তিনি যদি তাঁর স্বপ্নকে লালন করতে চান, তাহলে বিজ্ঞান বুঝতে হবে। আর তাই তিনি গণিত ও পদার্থবিদ্যায় মাথা শানালেন। হাই স্কুলে তিনি সায়েন্স প্রজেক্টের জন্য মায়ের গাড়ির গ্যারাজে একটি অ্যাটম স্ম্যাশার তৈরির জোগাড়যন্ত্র করলেন। ওয়েস্টিংহাউস কোম্পানি থেকে ৪০০ পাউন্ডের বাতিল স্টীল নিয়ে আসলেন। ক্রিসমাসের আগে স্কুলের ফুটবল মাঠে ২২ মাইলের তামার তার বসালেন। শেষমেষ বাড়ির ৬ কিলোওয়াট ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করে ২.৩ মিলিয়ন ইলেকট্রিক ভোল্টের বিটাট্রন পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর তৈরি করলেন যার উদ্দেশ্য পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ২০,০০০ গুণ চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা। এই প্রজেক্টের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা।
হাই স্কুলের এই প্রজেক্ট কাকুকে জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় নিয়ে গেল, সেখান থেকে বৃত্তি সহ স্বপ্নের হার্ভার্ডে, যেখানে তিনি আইন্সটাইনের পদক্ষেপ অনুসরণ করা শুরু করলেন।
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:২৪