স্বেচ্ছায় ইতিহাস পুনঃলিখনকারীরা....যুগে যুগে (১ম পর্ব)
দ্বিতীয় পর্ব
চায়না
১৯৬৬ সালে চীনা নেতা চেয়ারম্যান মাও সে-তুং সংস্কারের একটি পূর্ণ সংকলন উপস্থাপন করেন যা তিনি সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি দাবি করেন যে এটি কমিউনিস্ট মতাদর্শের সাথে চীনের মতাদর্শ বাস্তবায়ন করার একটি প্রচেষ্টা ছিল।অন্যদিকে ভিতরে ভিতরে এটি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসাবে তার নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধারের একটা সূক্ষ্ম চাল ছিল।
পরবর্তী ১০ বছরে মাও বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে দমন করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বিক্ষোভে রূপ নেয় এবং বিভিন্ন সংস্থা ধীরে ধীরে তার অবাধ্যতা প্রকাশ করতে শুরু করে। তার শাসনের এই সময়কাল চীনার ইতিহাসে বেশ বিতর্কিত হয়ে উঠে।পরবর্তীতে চীনা সরকার ২০১৮ সালে এই ইতিহাস চীনার ইতিহাস বই থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেয়ার সিধান্ত নেন।
এর প্রেক্ষিতে তারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামের এই অধ্যায়টি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে চীনের উন্নতি সংক্রান্ত অন্য একটি অধ্যায় বইয়ে সংযুক্ত করেন।তারা সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য সমস্ত কিছুই বই থেকে বাদ দিয়ে দেন।
আফগানিস্তান
২০১২ সালে, আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার ইতিহাসের পাঠ্যসূচি আপডেট করেছে। এর ফলে দেশটির ইতিহাসের ৪০ বছরের ইতিহাস অবিলম্বে বিলোপ ঘটে যার মধ্যে আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকারের অধীনে জীবন, ১৯৭০ এর দশকে কয়েকটি অভ্যুত্থান এবং ১৯৭৯ সালের সোভিয়েতের আক্রমণ সমস্ত কিছুই মুছে যায়।
এই পাঠ্যসূচিতে তারা মুজাহিদিনদের (পরবর্তীতে তালেবান) সোভিয়েত বিরোধী আন্দোলন, সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ,পরবর্তীতে মার্কিন সেনার আগমন আর তাদের দখলদারিত্ব ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত বাদ দিয়ে শুধু কয়েকটি লাইন দিয়ে পুরো ঘটনা শেষ করা হয়।
সরকার বলেছে,তাদের বিচ্ছিন্ন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এই সম্পাদনাগুলি প্রয়োজনীয় ছিল যেখানে নাগরিকরা জাতি, গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের চেয়ে শুধুমাত্র জাতি হিসেবেই নিজেদের অগ্রাধিকার দিবে। সমালোচকরা বলছেন যে সংশোধনগুলি ছিল তালেবান ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির সরকারের সাথে দ্বন্দ্বের অনুমোদন চাওয়ারই নামান্তর। আগের ইতিহাস পাঠ্যসূচিগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে খারাপ মানুষ হিসাবে চিত্রিত করেছিল।
এক সমালোচক বলেছেন, আফগানের বই থেকে মার্কিনদের দূর করার চেষ্টা মানে হচ্ছে দুইটা আঙ্গুল দিয়ে সূর্যকে ঢাকার চেষ্টা।
তুরস্ক
জার্মানির স্কুলগুলোতে তুর্কি শিক্ষার্থীদের তুর্কি ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার জন্য তুর্কি বই ব্যবহার করে থাকে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সরকার অনুমোদিত বই ছিল Turkce ve Turk Kulturu (তুরস্ক এবং তুরস্কের সংস্কৃতি) যা পরবর্তীতে বিতর্কিত হয়ে উঠে এবং সবাই বইটির নিষেধাজ্ঞা দাবি করতে থাকে।
সমালোচকরা বলেন এই বইটিতে তুরুস্কের সুবিধার্তে ইতিহাস বদলানো হয়েছে।অন্যান্য ইতিহাস বইয়ের মতো তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১.৫ মিলিয়ন আর্মেনিয়ান হত্যার বিষয়টি উপেক্ষা করে।
লেখক দাবি করেছিলেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করার জন্য আর্মেনিয়ানরা রাশিয়ার সাথে যুক্ত ছিল (যেখানে রাশিয়া, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ছিল), যা যুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশ (তুরস্ক সহ)ভেঙ্গে যায়।
লেখক আরও দাবি করেছেন যে যুদ্ধের পর আর্মেনিয়া তুরস্কের কাছে তাদের জমি স্বেচ্ছায় অর্পণ করেছিল, যা ডাহা মিথ্যা।
বইগুলো তুর্কী জাতীয়তাবাদকে আক্রমনাত্মকভাবে প্রচার করছে এমন উদ্বেগের বিষয়ে তারা বইটির নিন্দা জানিয়েছেন।তুর্কি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ ছিল: "তরুণদের রক্ষা করা, বয়স্কদের সম্মান করা এবং আমার দেশ এবং মাতৃভূমিকে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসা আমার লক্ষ্য।
তুর্কী শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বইটি প্রকাশ করে এবং তুর্কি দূতাবাসে বিতরণ করে।
এই দেশ গুলো ছাড়াও চিলি, সার্বিয়া, ভিয়েতনাম এদেরও ইতিহাস পরিবর্তনের ইতিহাস আছে।
এই জন্যই হয়তো কোনও এক কবি বলেছেন,
ইতিহাস লিখিত হয় শুধু বিজয়ীরদের দ্বারা।
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯