আগের পর্ব গুলো পড়তে নিচে ক্লিক করুন।
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি।
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব - ২)
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব -৩)
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব -৪)
পর্ব ৫
আনলাকি ১৩ বোধ হয় একেই বলে।১৩তম দিনের দিন মাঝি ঘোষণা দিলো, ট্রলার আর আগে যাবে না।তারা এখন গভীর সমুদ্রে আছে,সামনের পানির অবস্থা দেখে তাদের ধারনা হচ্ছে,সামনে তিমি মাছের আখড়া।ওখানে তিমি ঘোরাফেরা করছে।আর সামনে যাওয়া যাবে না।এমনবস্থায় ট্রলার আগে গেলে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ট্রলারের সাগরেদও দেখি ওস্তাদের সাথে তাল মিলিয়েছে।আপাতত কাজ হচ্ছে ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে থাকা।কতদিন লাগবে তা ও ঠিক নাই।ট্রলার চললে মনে হয় যেন ট্রলার দাড়িয়ে আছে,আর ট্রলার দাড়িয়ে থাকলে মনে হয় যেন পৃথিবী যেন থমকে আছে।অদ্ভুত অনুভুতি।মোটামুটি ট্রলারের সেই ঘটনার পর থেকেই রঞ্জু নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।সে চিন্তা করে রেখেছে মরবই যখন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পৃথিবীর আনন্দ উপভোগ করে মরব।
মাঝিদের গতিবিধি কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হতে লাগল।২ দিন ধরে একই জায়গাই দাড়িয়ে আছে।কেউ একজন বলছিল, ওই সব তিমি টিমি কিছুই না।আমাদের ট্রলার পথ হারিয়ে ফেলেছে।সবার মাঝে মৃদু গুঞ্জন শুনা গেল। এ তো দেখি মরার উপর খারার ঘা। যা হবার হোক, ট্রলার পথ খুজে পাক আর না পাক রঞ্জু তার নিজের পথ খুজে পেয়েছে।
দিন যায়...হঠাত করে ট্রলার এর একজনের চোখে পড়লো খুব দূরে আলো দেখা যাচ্ছে।জলচে-নিভচে।কিন্তু জলার আর নিভার মদ্দে ছন্দ নেই।আলো একবার ছোট আর একবার বড় দেখা যায়।ট্রলারের সবাই বাতি নিভিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো।এই টুকু পথ পাড়ি দিতে তাদের দেড় দিনের মতো লাগলো।
রাতের বেলা একটা ব্যপশা,গুমোট এলাকায়,বড় বড় প্রবাল এ ভরপুর জায়গায় তাদের সবাইকে নেমে যেতে বলল।রঞ্জু নেমেই টের পেল যে তার গলা সমান পানি আর হাটতে গিয়ে পা কেটে যাচ্ছে প্রবালের কারনে।ট্রলার এর সবাই কার আগে কে নামবে এই নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হল।মাঝি শুধু একবার সবাই কে সতর্ক করে দিলো যে, ইটালির নেভাল গার্ড এই সময় সমুদ্রে চেকিং চলে।সবাই যেন সাবধান থাকে।
নামার পরপরই সবাই নিকটবর্তী তীর কে লক্ষ্য করে দৌড় দিল।শুধু রঞ্জু ছিল ব্যতিক্রম।এত লোক এক্ সাথে এক জায়গা দিয়ে ডুকলে সমস্যা।তাই সে কিছু দূর ঘুরে তীরে উঠবে চিন্তা করলো।তার সাথে আছে সেই লোকটা যার সাথে তার ট্রলারে পরিচয় হয়েছিল আর অসুস্থতার সময় তাকে সাহায্য করেছিল।
রঞ্জু অনেকক্ষণ হল তীরবর্তী একটা বড় প্রবালের পিছনে,কোমর পানিতে মাথা নিচু করে বসে আছে।সমুদ্র থেকে নেভাল গার্ডের লোকজন খুব পাওয়ারফুল সার্চলাইট নিয়ে পাহারা দিচ্ছে।লাইট তার কাছাকাছি আসা মাত্র মাথা নিচু করে ফেলে আর লাইট চলে গেলে মাথা তুলে মুখ হা করে শ্বাস নেয়।
রঞ্জু প্রবালের আড়াল থেকে বের হল টিক মধ্য দুপুরে।ও কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছে না।সাথে থাকা লোকটাকে বলল আলাদা হয়ে যেতে। লোকটা ওকে অনুনয় করলো যাতে ওকে আলাদা না করে।ও তাকে নিজের ভাইএর মতো মনে করে।ও যেখানে যায় লোকটা সেখানে যেতে রাজি।কিন্তু রঞ্জু এসব ইমোশন কে পাত্তা দিলো না।
শহরে ঢুকার মুখে দুজন আলাদা হয়ে গেলো।রঞ্জু কিছুদুর হেটে গিয়ে পৌছাল একটা বাস স্ট্যান্ড এ।সেখানে সে দুজন রমনির পথ আঁটকে ইশারা করে বুঝাতে চাইল যে ও ক্ষুধার্ত।রমনি দুজন প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিল।পরে রঞ্জু বুঝাল যে সে কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে।খুব খারাপ অবস্থা।তখন মেয়ে দুটোর খুব মায়া হল।তারা তাকে ২ টা বার্গার কিনে দিলো,সাথে কিছু টাকা ও ফোন নম্বরও দিলো।এবং বলল যে কোন সাহায্য লাগলে তাদের যেন এই নম্বরে কল করে।
বার্গার খেয়ে রঞ্জু বাহিরে বের হতেই পুলিশ এর গাড়ি এসে তার সামনে থামল এবং তার চুলদাড়ি দেখে তাকে সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেলো।
(আগামি পর্বে সমাপ্য)।
কেমন হচ্ছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৭