১.
"ব্লগের এক একটা মালাউনের দশটা করে নিক। একটা নিজের নামে নয়টা নাস্তিকের নামে। নিজের নিকে সুশিলগিরি আর নাস্তিক নিকে গালিবাজি। সারাদিন ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কিন্তু নিজেদের ধর্ম নিয়ে কোন কথা নাই।" এক নাস্তিকের পোস্টে একটানে লিখে ফেলে ইয়ালামু। ঘরে এসি চললেও ঘামছে সে।
"হরে ভাই আর বলবেন না, ইসলামের পক্ষে কথা বললেই ছাগু। গতকাল আমারেও ছাগু টেগিং করছে মালাউনগুলা। আরে মিয়া নবীজির নামে পর্যন্ত উল্টা-পালটা কমেন্টস দেয় ুৃা, আৃৃাগুলা।" ইয়ালামুর কমেন্টের পরই সমর্থন জানাতে কমেন্টস দেন শহীদুল্লাহ ভাই। শহীদুল্লাহ ভাই রাসুলকে খুব ভালোবাসেন। রাসুলের বিরুদ্ধে কোন কথা সহ্য করতে পারেন না।যেই রাসুল তায়েফের মাঠে আপদমস্তক রক্তাক্ত হয়েও কোন বদদোয়া দেন নি, গালিগালাজ করতে কঠোরভাবে নিষেদ্ধ করেছেন; সেই রাসুলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে শহিদুল্লাহ ভাইকে প্রতিদিন ব্লগে ১০বার মালাউনগুলোকে গালি দিতে হয়।
"সবগুলা চাড়ালরে প্যাকেট কইরা দাদাগো কাছে পাঠাইয়া দেয়া দরকার।" পাল্টা উত্তরে ইয়ালামু কথাগুলো লিখে রাইট ক্লিক করবে , হটাৎই বুপ আওয়াজে মনিটর বন্ধ হয়ে গেলো।
খেলতে খেলতে ইউপিএসটি বন্ধ করে দিয়েছে পাশের ফ্লাটের অমিত। কখন যে অমিত এই ঘরে ঢুকলো আর কখন যে ইউপিএস বন্ধ করে দিল, ব্লগের ব্যস্ততায় খেয়ালই করা হয় নি।
"মালুর বাচ্চা , বের হ ।" রাগ সামলাতে পারে না তায়েফ।
চার বছরের অমিতের মালুর বাচ্চা শব্দের অর্থ জানার কথা না, তবুও চোখে এক রাশ জল নিয়ে দৌড়ে বের হয় সে। কাজটা ঠিক হলো না- অনুশোচনা তিব্র হয় ইয়ালামুর; সাথে খানিকটা বিস্ময়। এর আগে তো এমনটা করে নি ইয়ালামু।
২.
"বাবা মালুর বাচ্চা কি?"
অবুঝ শিশুর কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে আঁতকে উঠেন দিলিপ বাবু। নিজের জিবনে সহস্র বার শব্দটি শুনেছেন। তবুও কেন যেন আজও অভ্যস্থ হতে পারেন নি। এক ঝাক স্মৃতি ভীড় জমায় এক মুহুরতে।বাবা রাজাকারদের হাতে মারা গেলেন। ৭১ রের পর সবকিছু বদলে যেতে থাকে দ্রুত। তিনটি বাড়ির দুটি দখল হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। সেই প্রতিপত্তির কথা আজ মনে শুধু ব্যাথাই দেয়। অনেক চেষ্টার পরও নিজেদের শেষ সম্বলটুকু আগলে রাখতে পারেন নি। শেষে বাড়িটি ডেভেলাপারদের একটি ফ্লাট পাবার শর্তে দিয়ে দেন। আজ নিজের বাড়িতেই তিনি মালু, আর তার অপরাধে নিষ্পাপ শিশুটি মালুর বাচ্চা।
আমার বিশ্বাস গল্পে আমি সত্যের অতি কথন করেছি। আশা করি ব্লগের নেতিবাচক দিকগুলো ব্লগেই সীমাবদ্ধ, কারো ব্যক্তি বা সমাজিক জীবনে এর কোন কুপ্রভাব নেই। তবুও জানি মানব মনের সন্চালন তিব্র ভাবে যৌগিক। প্রত্যেকটি ভালো- খারাপ অভিজ্ঞতা conscious, subconscious বা unconscious mind থেকে ব্যক্তির আচরনকে প্রভাবিত করে। আবার সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের অনেক আচরন আমাদের সম্প্রদায় বা জাতির আচরনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গৃহিত হত। ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কোন অশালীন শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে। বিশেষত ধর্মের পক্ষে যে কোন প্রতিবাদে ধর্মের সুন্দর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা অনেক বেশি কার্যকর বলে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি।
গল্পের স্থান, কাল, চরিত্র শতভাগ কাল্পনিক। গল্পের নাম পরিবর্তনে ইচ্ছুক, যদি গল্পের উদ্দেশ্য ও বক্তব্যকে ধারন করতে পারে এমন কোন বিকল্প নাম পাই।