ক্যাম্পাসে যাবার জন্য বাসে উঠেছি। পুরো রাস্তা ঠিকভাবে গেলেও রমনা পার্কের সামনে বাস জ্যামে পরলো। ঐখানের জ্যামে বাস সাধারনত ৫-১০ মিনিটের বেশি থাকে না। কিন্তু বাস প্রায় ২০ মিনিট দাড়িয়ে আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম বাকি রাস্তা হেটেই যাই। শাহবাগের মোড়ে এসে দেখলাম প্রকৃত ঘটনা। ছাত্রলীগের ছেলের পুরো শাহবাগ মোড় মানবপ্রাচির দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। মনে পড়লো , আজ ছাত্রলীগের জন্মদিন।কাম্পাসের দিকে হাটা শুরু করলাম। যাদুঘরের দিকে দেখলাম ট্রাকের পর ট্রাকে এই দিকে আসছে। হয়তো এই কারনেই এই ব্যবস্থা। যাক , যে ছাত্রলীগ প্রতিদিন দেশের জন্য রক্ত দিয়ে যাচ্ছে, আর দেশের মানুষ তাদের জন্মদিনে এতটুকু কষ্ট করতে পারবে না? তাই ব্যাপারটা খুশি মনে মেনে নিলাম। সামনে যাকেই দেখছি সেই লীগ কর্মী, আর বেশির ভাগেরই মাথায় দেখলাম গাজিপুর ছাত্রলীগ লেখা সম্বলিত একটা কাপড় বাঁধা। কয়েকজনকে দেখে অবাক হলাম- এরা ছাত্র! কয়েকজনকে দেখে মনে হলো কোন সন্ত্রাসীও বোধহয় এদের সাথে কথা বলার আগে তিনবার ভেবে নেবে। যাক , এদের ভিডিও করবো বলে মোবাইলখানা বের করলাম। পরক্ষনে বোধোদয় হলো , ভিডিও হয়তো করতে পারবো কিন্তু বাসায় আনতে পারবো না। কোন ছিনতাইকারী মোবাইলটা নিলে হয়তো একটি পরিবারের একদিনের আহার হবে, কিন্তু এই ভাইজানেরা মোবাইল দিয়ে হয়তো আবার কোন মেয়েকে ধর্ষন করে তার ভিডিও স্বল্পমূল্যে বাজারজাত করবেন। আমার পাক-পবিত্র মোবাইলের এহেন নাপাক ব্যবহার! ভাবতেই মোবাইলটা আবার পকেটে রাখলাম। শাহবাগ থেকে ক্যাম্পাসে যাবার রাস্তাটা টু-ওয়ে। ভাইয়েরা একটা লেন পুরো দখল করে রেখেছেন। ফলে অন্য লেনটি দিয়েই একসাথে গাড়ি যাতায়াত করছে। বহু কষ্টে রাস্তার অর্ধেকটা পার হলাম, এবার বাকী অর্ধেক পার হবার পালা। কিন্তু ভাইদের মিছিল সেইখান দিয়েই যাচ্ছে। মিছিলটা খুবই চমকপ্রদ। প্রথমে চারটা বাইক,তার প্রায় পর পর ব্যানার সম্বলিত মিছিল , এবং মিছিলের সাথে সাথেই প্রায় লাগানো ৩-৪ টা কর্মিসম্বলিত ট্রাক। তারপর আবার চারটা বাইক, মিছিল,ট্রাক......। ট্রাকগুলোতে হাই ভলিয়মে মিউজিক বাজছে।পুরো মিছিলটি ধীরে ধীরে আগাচ্ছে। আমার দ্রুত রাস্তা পারা হওয়া দরকার। রাস্তা পার হবার তিনটি উপায়।
১.চরম ঝুকি নিয়ে ট্রাকগুলোর মাঝখান দিয়ে দৌড়ে পার হওয়া
২.ট্রাক আর বাইক গুলোর মাঝখানে যে সামান্য ফাক আছে সেখান দিয়ে পার হওয়া
৩. বাইক আর মিছিলের মাঝখান দিয়ে পার হওয়া
২বা ৩ নং পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি ভাইজানদের সাথে ধাক্কা লাগে তবে আমার কঠিন পর্দাথ থেকে তরল এমনকি বাষ্পিয় পর্দাথে রূপান্তরিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত । তাই আল্লাহর নাম নিয়ে দুই ট্রাকের মাঝখান দিয়ে দৌড়, এতপর হন্টন। হাটছি আর চিন্তা করছি।কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম , ট্রাকগুলোতে যে মিউজিক হাই ভলিয়মে বাজানো হচ্ছে, সেগুলো আসলে ধুমধারাক্কা হিন্দি গান। যে ছাত্রলীগের শ্লোগান - জয় বাংলা, তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে হিন্দি গান বাজিয়ে। যাক যদি বাংলাদেশে বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে দেশিয় সংস্কৃতি বাদ দিয়ে ৫৮ জন বলিউড তারকাকে পারফর্ম করানো হয় , তবে এটাতো খুব ছোট ব্যাপার। ভাবতেই বুক ভরে উঠলো , গর্বে নয় আতংকে । আমার প্রায় কাছাকাছি একটি বিশাল মিছিল চলে এসেছে। আতংকিতো হবার আরো একটি কারন মিছিলের শ্লোগান- জিন্দাবাদ,জিন্দাবাদ। আজ কি মার খাবার জন্য ছাত্রদল পাল্টা মিছিল বের করেছে! না একটু পর পুরো শ্লোগান শুনলাম- ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ। জয় বাংলা কোথায় গেলো!!ছাত্রলীগের মত এমন একটি অসাম্প্রদায়ীক দলের মিছিলে ডানপন্থী বুলি শুনি যারপর নাই আশাহত হয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকলাম।