somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের জল-ছবি ‍‍: বাল্যকালে সাতরিয়ে পাঠশালে যাওয়া

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি যে গ্রামে জন্মেছিলাম তার নাম বটিয়া। এটি ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার একটি সাবেক জয়পাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম। জয়পাড়া ইউনিয়নটি এখন পৌরসভা । এটি কখনো দোহার পৌরসভা আবার কখনো জয়পাড়া পৌরসভা নামে মাঝে মাঝে সাইন বোর্ড বদল করে। ২০০০ সালে নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। ফলে এখানকার মেয়র-কাউন্সিলররা আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন বলে ধরে নেয়া যায়।

দোহার থানা থেকে গ্রামটি খুব বেশী দূরে নয়। ৫/৬ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে যাওয়া যায়। গ্রামটি মোটামুটি বড় না হলেও আদর্শ সাইজের একটি গ্রাম। একটি ছোট খাল (সাহেব খালীর খাল নামে পরিচিত) গ্রামটির পশ্চিমপাড়েকে একটি ছিট মহল বানিয়ে রেখেছে। সেখানে মাত্র ৩টি বাড়ি। এই ছিটমহলে আমার প্রথম আগমন। কাগরে কলমে আমাদের বাড়ি ছিল জয়পাড়া ইউনিয়নে। এখন দোহার/জয়পাড়া পৌরসভার অধীনে। তবে যেহেতু আমরা কোন পৌর সুবিধা ভোগ করি না তাই এখন আমরা পুরোমাত্রায় ছিট মহলবাসী।

ছিট মহল হওয়াতে আমাদের অংশে কোন চিঠি-পত্র আসত না। বাজারের বড় কোন দোকানের ঠিকানা দিলে চিঠি আসত। ভোটের সময় পাশাপাশি ২ টি ইউনিয়নের প্রার্থীরা ভোট চাইতে আসত আমাদের বাড়ি। দুই ইউনিয়নের পোস্টারই শোভা পেত আমাদের বাড়ির বেড়ায়।

বাড়ির সাথে খাল থাকাতে কিছু কিছু সুবিধার সাথে সাথে অসুবিধাটিই ছিল অনেক বেশী। কারণ খাল পার হয়ে অপরপাড়ের কারো সাথে খেলাধুলা করার সুযোগ আমার হয়নি। ফলে খেলার জগত থেকে আমি পড়লাম পিছিয়ে। অন্য পারের স্কুলে যেতে অসুবিধা। কারণ যেই সময়ের কথা বলছি সে সময় লটাখোলার কানাইয়ের খেয়া/গুদারা ছাড়া আর কোন খেয়া নৌকা ছিল না। অথচ বটিয়ার এক মাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান স্কুলটি খালের অপরপাড়ে অবস্থিত। তাই আমার খাল পাড়ের উপায় ছিল কলা গাছের ভেলা। নৌকা খুব বেশী মানুষের ছিল না। নিম্নবিত্ত মানুষের হাতে অত নগদ টাকা কই যে নৌকা কিনবে? বাড়িতে কলাগাছ ছিল। তাই কেটে কেটে ভেলা বানানো হত।

কলাগাছের ভেলা বানিয়েও শান্তি ছিল না। কারণ, খাল পার হয়ে স্কুলে যাবার পর অন্য মানুষ তা নিয়ে চলে আসত। ফলে স্কুলের ছুটির পর আমাকে বাড়ি আসতে হত খাল সাতরিয়ে । এক হাতে বই আর জামা-প্যান্ট ধরে সেই হাতটি পানির উপর উচু করে ধরে অনেক কষ্টে সাতার কেটে খাল পার হতে হত। স্রোতের টানে অনেক দূরে গিয়ে উঠতাম। ততক্ষণে হাসফাস অবস্থা। ক্লাশ টেন পর্যন্ত খাল সাতরিয়ে পার হওয়া ছিল বর্ষা মৌসুমে আমার নিত্য দিনের ঘটনা।

এখন আমাদের নিজস্ব নৌকো আছে। আমি খুব ভাল নৌকো চালাতে পারি। এক নাগারে এক ঘন্টা বৈঠা চালালে আমার কোন কষ্ট হয় না। কত মানুষকে যে আমি এই জীবনে খাল পার করে দিয়েছি তার কোন ঠিক নেই। আগের মতো এখন আর সাতরিয়ে খাল পার হতে হয় না। তবে নৌকায় করে পার হবার সময় এখনো ভাবি কি করে একটি ছোট্ট বালক বই খাতা সহ সাতরিয়ে খাল পার হত ঐ ছোট্ট বয়সে।
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

লিখেছেন ডাঃ আকন্দ, ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ২:৩৮

বাংলাদেশ নিয়ে আমি বড়ো স্বপ্ন দেখি না , দেখা উচিতও না । প্রিয় এনসিপি তোমরাও বড়ো স্বপ্ন দেখতে যেয়ো না । কারণ যে দেশে অধিকাংশ মানুষ পরিবারতন্ত্র মেনে চলে ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিলিং আউট ইন মরোক্কোঃ ওস্তাদের সাথে বহু-প্রত্যাশিত মোলাকাত!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২২ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫



পূর্বকথাঃ আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে সেই ২০২২ এর সেপ্টেম্বর মাসে একটা পোষ্ট করেছিলাম মরোক্কোর তান্জিয়ারে যাওয়া নিয়ে.........বদ লোকের জন্য দোয়া করলে বদ-দোয়া হয়ে যায়!!! শিরোনামে। সেই ভ্রমনের আসল সচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ২২ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২৭


বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা এই এক প্রশ্ন দিয়েই তাদের সকল অন্যায় অবিচারকে জাস্টিফাই করে আসছে। আমরা দেশের মানুষের মাঝে এই ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছি আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে মেয়র হবে না হবে, তাতে আমার কী আসে যায়!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২২ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮


একটা কথায় কতটা ক্ষোভ, হতাশা আর বাস্তবতার প্রতিফলন হতে পারে—এই একটুকু বাক্যই তার প্রমাণ। এটা নিছক কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস না, এটা আজ হাজারো সাধারণ নাগরিকের কণ্ঠস্বর, যারা প্রতিদিন বাঁচার সংগ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ভুল করি, বিপদে পড়ি= (প্রার্থনা)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৫



যখন তোমার বান্দা অহঙ্কারী হয়, তুমি তো তা দেখ,
কী শাস্তি আমার পাওনা হিসাবের খাতায় লেখ;
আমি হারাই পথের দিশা,
জীবনে নেমে আসে সহসা অমানিশা।

কখনো দাও রোগ বালাই,
কষ্টে ভোগে প্রার্থনায় তোমারেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×