আমরা এই আধুনিক মানবীয় যুগে পদার্পন করে দেখছি অনেক উন্নত দেশগুলোতে বাড়তি খাদ্য উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেয়া হয় অন্যদিকে যেখানে অনেক অনুন্নত দেশগুলো চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। এ রকম অপচয় মানবতার এবং অর্থনৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। সারা পৃথিবীতে ২০১১ সালে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্য আবর্জনায় পরিণত করা হয়েছে যা সারা পৃথিবীতে উৎপন্ন খাদ্যের তিন ভাগের এক ভাগের সমান।
Food waste or food loss is food that is discarded or lost uneaten. As of 2011, 1.3 billion tons of food, about one third of the global food production, are lost or wasted annually.[1] Loss and wastage occurs on all steps in the food supply chain. In low-income countries most loss occurs during production, while in developed countries much food – about 100 kilograms (220 lb) per person and year – is wasted at the consumption stage সূত্র http://en.wikipedia.org/wiki/Food_waste
যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৬.৭ মিলিয়ন টন খাদ্যে অপচয় করা হয় যার আনুমানিক মূল্য প্রতি বছরে প্রায় ১০.২ বিলিয়ন পাউন্ড এর সমমানের। The university of Arizona’র ২০০৪ সালের এক পরিসংখ্যান মতে আমেরিকাতে ১৪-১৫% ভোজ্য খাবারে হাত পর্যন্ত দেয়া হয় না। সেগুলো নষ্ট হয় বাড়তি খাদ্য হিসেবেই। Another survey, by the Cornell University Food and Brand Lab, found that 93 percent of respondents acknowledged buying foods they never used. সূত্র http://en.wikipedia.org/wiki/Food_waste
প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন কেজি খাবার উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেয় জার্মানরা৷ আর ফেলে দেয়া সেই খাবারের অর্থমূল্যও কয়েক বিলিয়ন ইউরো৷ জার্মানির একজন নাগরিক প্রতিবছর গড়ে ৮০ কেজি খাবার ফেলে দেন৷ একজনের উচ্ছিষ্ট যদি এতে হয়, তাহলে গেঁটা জার্মান জাতি বছরে কি পরিমাণ খাবার নষ্ট করে সেটি চিন্তা করতে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ যেখানে অন্যান্য অনুন্নত গরীব দেশগুলোর জনগণ একবেলা খাবার পায় না সেখানে এরকম অপচয় আসলেই বিবেক নাড়া দেয়ার মতোই। জার্মানির স্টুটগার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সম্প্রতি এক জরিপ পরিচালনা করেছে ৷ সেই জরিপের তথ্য বলছে, বছরে এক কোটি ১০ লাখ কেজি খাবার ময়লা হিসেবে ফেলে দেয় জার্মানরা ৷ জানা যায়, নষ্ট হয়ে যাওয়া এই খাবারের অর্থমূল্যটা হলো প্রায় ২০ বিলিয়ন ইউরো৷ টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। সূত্র http://www.dw.de/dw/article/0,,15815439,00.html
সারা পৃথিবীতে যে প্রকার খাদ্য নষ্ট হয় তা দিয়ে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের সকল মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব। যেখানে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে খাদ্য বিনষ্ট হয় সেখানে বিশ্বের প্রায় ৯২ কোটি ৫০ লাখ লোক খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে থাকে। এটা আসলেই খুব অমানবিক। এই অপচয়কে যদি আমরা রোধ করতে পারি তবে আমরা খাদ্য সংকটের কঠিন সমস্যাকে মোকাবেলা করতে পারবো। এক গবেষণায় বলা হয়, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ভোক্তারা প্রতিবছর ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোগ্রাম (২০৯ পাউন্ড থেকে ২৫৩ পাউন্ড) খাদ্য অপচয় করে থাকে। সে তুলনায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের আফ্রিকায়, অথবা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষরা বছরে মাত্র ৬ থেকে ১১ কিলোগ্রাম খাদ্য অপচয় করে। অর্থাৎ ধনী দেশগুলো প্রতিবছর ২২কোটি টন খাদ্য অপচয় করে। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে প্রতিবছর খাদ্য উৎপাদন হয় মাত্র ২৩ কোটি টন।
ধনী দেশগুলোর নষ্ট করা খাবার থেকে সাহারা অঞ্চলের মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব। ধনী দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি নষ্ট করা হয় ফলমূল এবং সবজি। তারা ফলমূলের আকার আকৃতিকে খুব বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো, পরিবহন এবং প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারী ও বেসরকারি বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। আর ধনী দেশগুলোর জন্য অপচয় রোধে নৈতিক শিক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে এক গবেষণায়। সূত্র http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=34&dd=2011-05-13&ni=58445
উন্নত দেশগুলোর ভোক্তা ও ক্রেতা উভয় পক্ষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য ছুড়ে ফেলে দেবার প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল-মাত্রায় দেখা যায়। এরকম অপচয় করা খাবার খুব সহজেই খাওয়া যায়।অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রতি বছর ৬৭ কোটি টন খাদ্যদ্রব্য বিনষ্ট করে। আর উন্নয়নশীল দেশ-গুলোয় এর পরিমাণ ৬৩ কোটি টন। প্রতি বছর ধনী দেশগুলো ২২ দশমিক ২ কোটি খাদ্যদ্রব্য অপচয় করে। আর সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে মোট খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ২৩ কোটি টন।
গ্রোসারি দোকানের বিল ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে আর অন্যদিকে খাদ্য ডোনেশন এর পরিমাণও দিন দিন কমছে। ফলে একদিকে যেমন ধনী দেশগুলোর খাদ্য অপচয় হচ্ছে অন্যদিক গরীব দেশগুলোর মানুষগুলো খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে।
Global food lossess and Food waste by Jenny Gustavsson,Christel Cederberg, Ulf Sonesson (Swedish Institute for Food and Biotechnology (SIK) Gothenburg, Sweden প্রকাশিত এইখান থেকে ডাউনলোড করে তথ্যমূলক রিপোর্টটি পড়ে দেখতে পারেন। এখানে খাদ্য অপচয়ের কারণ এবং ধরন গুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
সাধারণত যে সব কারণে ভোগ্য পণ্য গুলোর বেশীর ভাগ সময় অপচয় হয় তা নিম্নের একটি গ্রাফের মাধ্যমে দেখানো হলো। তবে এই কারণ গুলো দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির কারণে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হতে পারে।
আমাদের সারা বিশ্বের খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করতে হলে সব দেশগুলোকে একসাথে অবশ্যই খাদ্য অপচয় রোধ করতে হবে। এছাড়া ফসল উৎপাদনে আরও নিখুঁত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। আর ক্রেতাকে অবশ্যই স্পষ্ট তথ্য দিতে হবে। আর এর সাথে সাথে ভোক্তাদের নিজেদের আচরণের পরিবর্তন আনাটাও অনেক বেশী জরুরি। একইসঙ্গে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ ও সার্বিক খাদ্য-শৃঙ্খলা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই প্রকার খাদ্য অপচয় রোধ করে সবাই মুখে খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:২৫