আগুনের ধরণ অনুযায়ী তার নির্বাপনী নির্ধারণ করতে হয়। আগুনকে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয় মূলত তার নির্বাপনী নির্ধারণ করার জন্য। ক্যাটাগরি গুলোকে Class বলা হয় এবং A, B, C, D, E ও F এই ছয়টা ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটা ক্লাসের আবার আলাদা আলাদা কালার কোডও আছে। আগুনের বিস্তারিত বর্ণনার আগে কিছু আবাসিক সাবধানতার কথা বলে নেই পরে এসব বিশ্লেষণে যাব কারণ এগুলো মূলত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বা শিল্প এলাকায় ব্যাবহারের জন্য।
১. বাসায় সব সময়ের জন্য এক বালতি পানি ও এক বালতি বালি মজুদ রাখুন। বেশী করে খাবার সোডার মজুদ রাখাটাও উত্তম।
২. সাধারণ আগুন মানে কাপড়, কাগজ, কাঠ পুরে যে সব আগুন হয় সেগুলোতে পানি ঢালবেন নেভানোর জন্য।
৩. রান্নাঘরে তেল পুরে আগুন ধরে গেলে সাথে সাথে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিবেন, আর আগুন যদি বেশী হয় বালি দিয়ে নেভাবেন। তবে সেই আগুন যদি কারো গায়ে লেগে যায় তাহলে খাবার সোডা ছিটিয়ে দিবেন, ভুলেও পানি দিবেন না।
৪. ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিটের আগুনেও কখনও পানি দিবেন না, বালি ছিটিয়ে দিবেন, বা থাকলে চটের বস্তায় বালি নিয়ে চেপে ধরবেন। ভুলেও পলিথিন না প্লাষ্টিক ব্যাবহার করবেন না।
৫. পুড়ে গেলে আগুন নেভানোর সাথে সাথে ঠান্ডা পানি ঢালুন ও ধুয়ে ডিম ভেঙে সাদা অংশ মেখে দিবেন, না থাকলে টুথ পেষ্ট মেখে দিবেন। মনে রাখবেন ফ্রীজে সব সময় ৪-৫ লিটার ঠান্ডা পানি রাখবেন। ঠান্ডা পানি শুধু খাওয়ার জন্যই না, বিপদেও উপকারে আসে, ব্যাথা পেলে বা পুড়ে গেলে উপশমের কাজে লাগে।
এবার আসি আগুনের ধরণ নিয়ে, ক্লাস অনুযায়ী আগুনের বর্ণনা ও তার নির্বাপনী পদ্ধতি।
Class A: এটা মূলত কাঠ, বাঁশ, কাগজ, কাপড় বা এজাতীয় বস্তু যেসব পুড়ে ছাই তৈরী হয়। এসব আগুন তাপ কমলেই নিভে যায় আর তাই পানি ঢাললেই নিভে যায়। অতএব এসব আগুন পানি দিয়ে নেভানো সম্ভব। কালার কোড "লাল"।
Class B: দাহ্য তরল যেমন তেল, পেট্রল, কেমিক্যাল ইত্যাদি যা দ্রুত সম্প্রসারনশীল। এইসব আগুনে কখনই পানি ব্যাবহার করা যাবে না। এই আগুন নেভাতে হলে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে বা অক্সিজেন অনুপস্থিত থাকতে হবে। তাই এসব আগুন নেভাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) এর প্রয়োগ সবচেয়ে কার্যকরী। তবে ড্রাই পাউডার বা ফোমও ব্যাবহার করা যায়। তবে যে কোন পাউডার দিয়ে চেষ্টা করবেন না কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এটার কালার কোড হচ্ছে কালো।
Class C: দাহ্য গ্যাস যেমন চুলার গ্যাস বা মিথেন, সিএনজি, ইঠেন, বিউটেন ইত্যাদি। এটার একমাত্র নির্বাপক হচ্ছে ড্রাই পাউডার। এটার কালার কোড হচ্ছে নীল।
Class D: দাহ্য ধাতু যেমন লিথিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। এটারও একমাত্র নির্বাপক হচ্ছে ড্রাই পাউডার এবং কালার কোড নীল।
Class E: এটা হচ্ছে ইলেক্ট্রিক্যাল আগুন বা ইলেক্ট্রিসিটি থেকে উদ্ভুত আগুন যেমন শর্ট সার্কিট বা ওভের ভোল্টেজ থেকে সৃষ্ট এবং একমাত্র নির্বাপক হচ্ছে ড্রাই পাউডার। অতএব কালার কোড হচ্ছে নীল।
Class F: এটা হচ্ছে ফ্যাট বা চর্বি পুড়ে যে আগুন মানে রান্নার তেল, ঘী, চর্বি ইত্যাদি। এটা নির্বাপনের জন্য উপযোগী হচ্ছে তরল বা Wet কেমিক্যাল। পানি কোনভাবেই এই আগুন নেভানোর জন্য উপযোগী না, তবে অল্প স্বল্প আগুনে কাবার সোডা ব্যাবহার করা যায়। এটার কালার কোড হলুদ।
আসলে কালার কোড হচ্ছে নির্বাপকের, যাতে কালার কোড দেখেই বুঝা যায় যে নির্বাপকের উপাদান কি।
বি: দ্র: মনে রাখবেন এটা শুধুই সাধারণ জ্ঞান, কোন বিশেষজ্ঞ মতামত না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১৮