অনেক আগে "সমাজ বিপ্লবের প্রথমিক ধাপে বাংলাদেশ" শিরোনামে একটি পোষ্ট করেছিলাম যা ছিল এরকম:
______..............................................___________
কেউ মানুক বা না মানুক, খেয়াল করুক বা না করুক, স্বীকার করুক বা না করুক বাংলাদেশের সমাজে ওনেক পরিবর্তন এসেছে গত ২০ বছরে এবং এটা খোড়া হোক, অকার্জকর হোক আর যতই দূর্নীতিগ্রস্থ হোক, গনতন্ত্রিক ব্যাবস্থার কারনেই। বিষদ বিবরণে যাব না, অল্প কিছু উদাহরণ দেই শুধু।
৮০ এর দশকেও ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া করত শুধু একটা মাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে আর সেটা হল বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া। অথচ ৯০ এর দশক থেকে প্রাইভেট বা কর্পোরেট চাকরি প্রধান্য বিস্তার করতে শুরু করে। আর এখনকার কথা নিশ্চই বলে বুঝাতে হবে না। ৮০ এর দশকে ছাত্র বা ছাত্রীদের বড় হয়ে শুধু মাত্র ডাক্তার বা ইন্জিনীয়ার হওয়ার বাসনা ব্যাক্ত করত। এখন এই মানসিকতায়ও ওনেক বৈচিত্র এসেছে। আগে শুধু সরকারি চাকুরী আর ব্যাবসা করেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যেত, আর এখন বেসরকারি চাকুরী করেও ৪০-৪৫ বছরেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে এমন উদাহরণ আছে ভূড়ি ভূড়ি।
আগে বাবা মা রা ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিত আর এখন তারা নিজেরা বিয়ে করে। আগে বিয়ের সময় পাত্র পাত্রির চেয়ে তাদের বাবা মার এবং চাচা, মামা, খালুর যোগ্যতা প্রাধান্য পেত বেশি। এখন কিন্তু সেই ধারনার পরিবর্তন ঘটেছে। তখন পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে পাত্রীর বাবার ধন সম্পদ দেখত সবাই, এখন কিন্তু পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাই মূখ্য। তার মানে হচ্ছে নারী শিক্ষার সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে। দেশে এখন ছাত্রর চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশী। ছাত্রীর ঝড়ে যাওয়ার সংখ্যা বেশী কিন্তু এটাই বা কম কি, এগোচ্ছে তো। বিয়ের সময় পাত্রীর পছন্দের গূরুত্ব দেওয়া হয় সমান ভাবে।
সেলফ ডিপেনডেন্ট এর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন মানে আয় উপার্জনের দিক দিয়ে এমন কি সেটা নারীদের ক্ষেত্রেও। চাকরির উপড় নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে দিন দিন। নিজস্ব ধ্যান ধাড়না ও চিন্তা দিয়ে অনেক উদ্যক্তা জন্ম নিচ্ছে এবং সফলও হচ্ছে এবং এর সামাজিক গ্রহনযোগ্যতাও বেড়েছে অনেক গুন। কারন ছোট ছোট ব্যাবসার সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা না বাড়লে ব্যবসার প্রসাড়ও বাড়ে না। এধরনের অনেক উদ্যক্তা এখন বড় বড় রফ্তানিকারক হিসাবে দাড়িয়ে গেছে এবং অনেক নারী উদ্যক্তা বুটিক শপ, ফ্যাশন শপ, বেকারি, হ্যান্ডিক্র্যাফট, আ্যড ফার্ম, ডিজাইন ফার্ম ও বিউটি শপ করে প্রচার লাভ করেছেন এবং সম্মান অর্জনও করেছেন। উদাহরণ স্বরুপ কানিজ আলমাস খান, গীতি আরা শাফিয়া চৌধুরী, তালেয়া রহমান আরো অগণিত রয়েছেন। কৃষি, মৎস, পোলট্রি খাতে তো ক্ষুদ্র উদ্যক্তারাই দেশের প্রধান চাহিদা মেটাচ্ছে এমন কি মহিলাদের পোশাক শিল্পও কিন্তু ক্ষুদ্র ও মহিলা উদ্যক্তাদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। যা কিনা ২০ বছর আগে সম্পূর্ণ ভাবে ভারতীয় পণ্যের উপর নির্ভরশীল ছিল। এটাও এক ধরনের সামাজিক বিপ্লব।
যতই হাঙ্গামা ফ্যাসাদ থাকুক গনতন্ত্রে তা কিন্তু মানুষের প্রতিভা বিকাশে বাধা দান করে না বড়ংচ সহয়তা করে। আমরা যতই এই দুই মহিলাকে দোষারোপ করি না কেন এত কিছু কিনতু এই দুই মহিলার সময়েই বিকাশ লাভ করেছে। আর দেশের মানুষ যখন আরো সভ্য ও শিক্ষিত হবে তখন এমনিতেই গনতন্ত্র আরো সুশীল হবে। অনেকেই বলে এমন গণতন্ত্রের দরকার নাই। আরে ভাই এমনটা না থাকলে অমনটাই বা হবে কি করে। গণতন্ত্রকে আরো সুযোগ দিন আর নিজেরা আরো সহনশীল হই তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে এক সময়।
___________..........................................________________________
কিন্তু গত ৩-৪ বছরে সব হিসাব নিকাশ মনে হয় উল্টে যাচ্ছে, যে আশার আলো দেখেছিলাম সেটা যেন ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ ভাগ শিক্ষার্থির একমাত্র উদ্দেশ্যই যেন সরকারি চাকুরী এবং সেটার জন্য তারা রাস্তায় নেমেছে, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত। এবং তারা যে বিষয় বা গ্রুপেই পড়ুক না কেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, বিবিএ বা যাই হোক সবার মূখ্য উদ্দেশ্যই হচ্ছে সরকারি আমলা বা কেরাণী হওয়া। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তাদেরকে ভাল ছাত্র বলেই সবাই গণ্য করে। আর যেকোন দেশের অর্থনিতীর প্রাণ হচ্ছে বেসরকারি উদ্যক্তা বা ব্যাবসা। বিভিন্ন বিশেষায়িত বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে সব ভাল ছাত্র যদি সরকারি কেরাণী হয়ে যায় তাহলে দেশে কি অবস্থা হবে।
আমার পরিচিত দুজন বুয়েট থেকে সিএসই পড়ে এখন পুলিশের এএসপি হয়েছে বিসিএস দিয়ে। এরকম আরও হয়ত ৫০ ভাগ বুয়েট ছাত্র সরকারি চাকুরীতে ঢুকেছে। তাহলে বুয়েটে, মেডিক্যাল সহ আরও যেসব প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে দেশের মানুষের যে হজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ তা জলে গেল। অতএব ভারত, শ্রীলংকা, চায়না, কোরিয়া বা বিদেশ থেকে যে প্রযুক্তিবিদ বা প্রকৌশলী এনে প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রিজ চালাতে হবে সেটাতো খুবি স্বাভাবিক। হঠাৎ করে সরকারি চাকুরী এত লোভনীয় হয়ে যাওয়ার কারণ কি শুধুই ক্ষমতা ও সম্মান নাকি এর পেছনে আরও কোন বড় কারণ রয়েছে সেটা আমার মাথায় ঢুকছে না।