কিছুদিন ধরে একটা উপদ্রব শুরু হয়েছে, চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছোড়া হচ্ছে, এমনকি বেশ কিছু মানুষ আহত ও নিহতও হচ্ছে। এবং এসব ঢিল ছুড়ছে শিশু কিশোরেরা আর সে কারনেই হয়ত সরকার এটাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে না, ভাবছে এসব এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ বা আইনগত ব্যাবস্থা নিতে সেরক একটা দেখা যায়নি। মিডিয়াগুলোউ খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এবং এটা মনে হচ্ছে সংক্রামক আকারে একটু একটু করে খুব ধীর গতিতে হলেও বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়েও পড়ছে। আশংকা হচ্ছে যে এটা মহামারি আকারে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। কারণ বাংলাদেশে খারাপ কিছু খুব সহজেই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটা নিছক বিনোদনের জন্যই বাচ্চারা এসব করছে। এটা যদি স্যাবটাজ হয়ে থাকে, হতেও পারে যে ট্রেন জার্নিকে বিভিষিকাময় করে তুলার জন্য কেউ এটা করছে কারন ট্রান এখনও সবচেয়ে নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী, তাহলে সেটা নিয়ে আসলে আমাদের করার কিছুই নেই কারণ পরিবহন ব্যাবসায়ীরা এই দেশে অনেক শক্তিশালী। তারা এমনকি সরকারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারে। বাংলাদেশে ট্রেনটা ধ্বংসের জন্য মূলত তারাই দায়ি এবং তারা যে কোন মূল্যে ট্রেনকে বাংলাদেশে প্রধান যানবাহন হতে দিবে না। তাই মানুষকে ভয় দেখিয়ে বা ট্রেনকে কোনভাবে অনিরাপদ প্রমাণ করতে পারলে যা একটু ঘুরে দারাচ্ছে তাও থমকে যাবে। এটা ঠিক যে এই সরকার রেল এর উন্নয়নের জন্য সামান্য হলেও কিছু করছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া লাইন পূণরায় চালু করেছে এবং সম্পূর্ণ নতুন কিছু লাইনও চালু হয়েছে। আর তাই এটা পরিবহন ব্যাবসায়ীদের জন্য একটা মাথা ব্যাথার কারণ হলেও হতে পারে।
আর এটা যদি স্যাবটাজ না হয়ে থাকে তাহলে তা আমাদের সমাজের মানবিক মূল্যবোধ এর অবক্ষয় চুড়ান্ত রুপই বলতে হবে যার পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। ছোট বেলায় দেখতাম বা নিজেরাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে করতাম তা হল নিছক মজা পাওয়ার জন্য পাখির বাসায় ঢিল মারা, ব্যাঙকে ঢিল মারা, কুকুর বিড়ালকে লাঠি দিয়ে হয়ত একটা বাড়ি দেওয়া, দল বেধে সাপ মারা, বেজী মারা, শিয়াল মারা, ফড়িং এর পাখনা ছিড়ে দেওয়া, পাখি শিকার করা বা এরকম পশু-পাখির উপড় অনেক অত্যাচার চালান। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বড়রা কখনও মানা করত না এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারাও অংশগ্রহন করত। পশু-পাখিকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ লাভ করা যেন আমাদের সংষ্কৃতিরই একটা অংশ, এটা যেন একটা বিনোদন এর মাধ্যম। আমাদের এই বিকৃত বিনোদনের জন্যই দেশের অনেক প্রাজাতির পশু-পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরও কিছু হওয়ার পথে। আমাদের স্কুল কিংবা পরিবারে কখনই শিক্ষা দেওয়া হয় নাই যে পশু-পাখিও কষ্ট পায় এবং তার চেয়েও বড় কথা ওরাও আমাদের পরিবেশ প্রকৃতিতে ভূমিকা রাখে। তদুপরি এটা খারাপ কাজ বা অন্যায় বা সামাজিক অপরাধ যদিও এখন একটা আইন করেছে সরকার যে পশু-পাখিকে বিনা কারণে কষ্ট দেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। কোন আইনই কার্য্যকর হয় না বা রোধ করা সম্ভব হয় না যদি না এটা সামাজিক ভাবে অন্যায় বা অপরাধ হিসাবে আগে স্বীকৃতি না পায়। এগুলোতো আমাদের সমাজে কেউ কোন রকম অন্যায় বা অপরাধ বলেই গণ্য করে না। অতএব এটা খুব অস্বাভাবিক যে পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়াটা কিছু কিছু মানুষের কাছে তখন পানসে হয়ে যাবে এবং আরও বেশি বিনোদন বা উম্মাদনার জন্য তখন তারা মানুষকেও কষ্ট দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না। আমরা বোধ হয় দিনে দিনে সেই অবক্ষয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি এবং এই মানসিক ব্যাধিকে কেউ মানসিক ব্যাধি বলে গণ্য করছে না বলেই এই ব্যাধি সারানো সম্ভব হবে না এবং এটা একসময় সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়বে। মাঝে মাঝে ফেসবুকে কুকুর বিড়াল নির্যাতনের যেসব ফটো বা ভিডিও পাই সেগুলো রিতীমত লোমহর্ষক ও নির্মম আর এসব করছে কিন্তু কোমলমতি কিশোরেরাই। আমরা কি এখনও আদিম ও বর্বরই রয়ে গেলাম?