somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানের শিক্ষা ব্যাবস্থা হতে পারে আমাদের জন্য অনুকরনীয় - পর্ব ২ জাপানিজ স্কুলের বৈশিষ্ট

১৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাপানের স্কুলগুলোর কিছু বৈশিষ্ট আছে যা মোটামুটি সব স্কুলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সেটা প্রাথমিক, মাধ্যমিক, সরকারি, বেসরকারি বা যে কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠান বা দুতাবাস পরিচালিত হোক না কেন। ওই দেশের প্রাক-প্রাথমিক স্কুলগুলো (কিন্ডারগার্টেন) মূলত ডে-কেয়ার সেন্টারের মত। তাই ওগুলো একটু ভিন্নরকম তবে মূল বৈশিষ্টগুলো একই। বৈশিষ্টগুলো ক্রমিক আকারে লিখছি যাতে প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা বুঝা যায়।

১। বয়স ৩ বছর হলেই কিন্ডারগার্টেন এ ভর্তি করা বাধ্যতামূলক।
২। কিন্ডারগার্টেন ৩ বছর, প্রাথমিক ৬ বছর (১-৬), মাধ্যমিক ৩ বছর (৭-৯), উচ্চ মাধ্যমিক ৩ বছর (১০-১২)।
৩। পরীক্ষার মাধ্যমে স্কুলে প্রবেশ করতে হয় মানে প্রাথমিক থেকে। তবে এটা কোন লিখিত পরীক্ষা না, বাচ্চার ম্যাচিউরিটি, অভ্যাস বা খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হবে কিনা বা আলাদা কোন কেয়ার নিতে হবে কিনা এসবই দেখা হয়।
৪। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক (ক্লাস ১-৯) সম্পূর্ণ অবৈতনিক তবে ক্লাস ১০ থেকে বেতন দিতে হয়।
৫। পৃথিবীর সব স্কুলের একটা সাধারণ নিয়ম যে একটা স্কুল ড্রেস থাকতে হবে, তবে কিন্ডারগার্টেনএ এই নিয়ম নেই।
৬। প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত কোন হোমওয়ার্ক নেই এবং এর পর থেকে তাদেরকে মূলত প্রবন্ধ বা কোন বিষয়ের উপর রচনা লিখতে দেওয়া হয়। এছারাও তাদেরকে প্রচুর প্রজেক্ট ওয়ার্ক দেওয়া হয় এবং বিশ্বাস করেন বা না করেন তারাই সবচেয়ে ব্যাস্ত মানুষ জাপানের।
৭। প্রতিটা ক্লাসরুমের প্রবেশ দরজার সাথেই একটা শেল্ফ থাকে তাতে বাচ্চারা নিজেরা নিজেদের জুতা সাজিয়ে রাখে আবার ওখান থেকে পড়ে নেয় এবং প্রথম দিন থেকে যে যেখানে জুতা রেখেছিল সেখানেই রাখা বাধ্যতামূলক।
৮। ছেলেদের চুল ছোট রাখা বাধ্যতামূলক।
৯। চুলের প্রাকৃতিক রং ছাড়া অন্য কোন রং গ্রাজ্য করা হয় না।
১০। মেয়েদের নখে রং বা গালে কোন ধরণের মেকআপ ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ।
১১। এক একটা ক্লাস রুমে শ্রেনী ভেদে ৩০-৪০ জন এর বেশী শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না।
১২। সাদা, কালো আর গাড়ো নীল রং ছাড়া অন্য কোন রং এর মোজা পড়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং পাওয়া গেলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
১৩। স্কুলে দুপুরের খাবার দেওয়া হয় এবং শ্রেনীকক্ষে বসেই শিক্ষক সহকারে খাবার খেতে হয়।
১৪। প্রথমিক পর্যন্ত স্কুলে মূল বিষয়গুলো হল গণিত, ভাষা শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সমাজ আর এর পাশা পাশি হস্তশিল্প, মিউজিক ও শারিরীক শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
১৫। এর পাশাপাশি স্বাস্থকর জিবন-যাপন, ছড়া, কবিতা সাহিত্য, আইটি জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং পরিষ্কার পরিছন্নতা ক্রিয়া কলাপ শেখানো হয়।
১৬। এছাড়াও যে কোন একটা খেলাধুলায় পারদর্শী হতে হয়।
১৭। স্কুলগুলোতে সব ধরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন থাকে।
১৮। স্কুলগুলোতে কোন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকে না, শিক্ষার্থীদের রুটিন করে এক এক দিন এক এক দল ক্লাসরুম ও অন্যান্য এলাকা বা করিডোর পরিষ্কার করতে হয়।
১৯। এমনকি মাসে একদিন টয়লেট পরিষ্কার করা বাধ্যতামূলক।
২০। লেখাপড়া ও খেলাধুলার পাশাপাশি যে কোন একটা বিষয় যেমন সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি যে কোন একটা বিষয়ে পারদর্শী না হলেও করতে জানতে হয়।
২১। গ্রীষ্মকালীন ছুটি ৪০ দিন, আর শীত ও বসন্তের ছুটি থাকে ১০ দিন করে। এই ছুটিতে প্রচুর প্রজেক্ট ওয়ার্ক দেয় যেমন কোথাও ভ্রমণ ও সেই ভ্রমণের উপড় শিক্ষনীয় কি ছিল তার উপর প্রবন্ধ লেখা আর বড়দের জন্য কোন একটা খন্ডকালীন চাকুরী করে তার উপর নিরীক্ষাধর্মী লিখা যেমন যে কাজটা করল সেটা আরও কিভাবে উন্নত করে করা যায় বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে গবেষণা।
২২। সাপ্তাহিক ছুটির দিনের একটি যেমন শনি বা রবি বার যে কোন একদিন স্কুল এ যেতে হয় শুধু খেলাধুলার জন্য, ঐদিন প্রতিযোগীতামূলক খেলার আয়োজন থাকে।
২৩। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত স্কুল থাকে। সকালে যায় স্কুল ড্রেস পরে তবে বাসায় ফিরে খেলার জার্সি পরে।
২৪। ৮০ শতাংস ছেলেপেলে আবার স্কুলের পরে আবার কারিকুলাম বহির্ভূত কোর্সে পারদর্শী হওয়ার জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়।
২৫। স্কুলে কোন ধরণের খাবার বা ওষূধ নিয়ে আসা পুরোপুরী নিষিদ্ধ।
২৬। মাধ্যমিক (শ্রেনী ৭-১২) থেকে বছরে তিনটা পরীক্ষা হয় এবং সেগুলো পাশ করতে হয় তবে তা থাকে মোট মূল্যায়ণের ৪০ ভাগ মাধ্যমিকে ও ৬০ ভাগ উচ্চমাধ্যমিকে।
২৭। প্রতিটা স্কুলে একজন পুষ্টিবিদ থাকে বাচ্চাদের পুষ্টি, স্বাস্থ ও খাদ্যমাণ নিশ্চিকরণের জন্য।
২৮। যে যেই এলাকা, শহর বা ওয়ার্ডে বসবাস করে সেখান থেকে পায়ে হাটা দূরত্বের কোন প্রাথমিক স্কুলে ভর্তী হতে হয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করা যায় তবে তা নিজের এলাকার মধ্যেই। এলাকার বাইরে যেতে হলে বেসরকারিতে পড়তে হবে। তবে কখনই ব্যাক্তিগত গাড়ী ব্যবহার করা যায় না স্কুলে আসার জন্য।
২৯। উচ্চমাধ্যমিক থেকে বেসরকারী বৃত্তির ব্যাবস্থা বা ঋণ আছে তবে যে প্রতিষ্ঠান ঋণ দেয় তা ষোধ না হওয়া পর্যন্ত ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বাধ্যতামূলক পড়ালেখা শেষ হওয়ার পরপরই।
৩০। উচ্চমাধ্যমিক এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছামত যেকোন বিষয়ে ভর্তি হতে পারে তা তার স্কুলের বিষয়ের সাথে সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক তবে স্কুলে সবারই একই বিষয় পড়তে হয়। কোন গ্রুপ নাই আমাদের মত যেমন সাইন্স, আর্টস বা কমার্স। তবে মাধ্যমিকের পরে কারিগরী শিক্ষায় গেলে ভিন্ন কথা।

একটা জাতি ভবিষ্যতে কোন যায়গায় পৌছাতে চায় তা নির্ভর করে তার শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর এবং স্কুল হচ্ছে সেই ব্যাবস্থা পরিচালনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অতএব ঘন ঘন পরীক্ষা পদ্ধতি বদলানর আগে স্কুলগুলোকে বদলাতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩
৩৭৫ বার পঠিত
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×