somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানের শিক্ষা ব্যাবস্থা হতে পারে আমাদের জন্য অনুকরনীয় - পর্ব ১ প্রাইমারি

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে যা চলছে তাকে কোনভাবেই শিক্ষা বলা যায় না, রিতীমত তামাশা চলছে। আমরা নিজেরা যেহেতু কিছু বানাতে পারি না, অতএব নতুন আবিষ্কারের কিছু এখানে আছে বলে আমার মনে হয় না। তার চেয়ে যেসব দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা উন্নত তা হুবহুব বাস্তবায়ন করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে। জাপানীজ শিক্ষা ব্যাবস্থা সম্বন্ধে যা জেনেছি সেটা মূলত সারা বিশ্বেই সমাদৃত আর একারণে তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত কাটিয়ে উঠেও একটা অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ারে পরিণত হতে পেরেছে। চাকুরী সুত্রে বেশ কিছুদিন, প্রায় আড়াই বছরের মত টোকিওতে থাকার সুবাদে কাছ থেকেও কিছু দেখার সুযোগ হয়েছিল।

স্কুলের বাচ্চাদের একটা জিনিষে খুবি মিল ছিল যেটা হল যে প্রায় একি সময়ে সবাই স্কুল ড্রেস পড়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেই স্কুলে যায় এবং খেলাধুলার জার্সি গায়ে সন্ধায় ঘরে ফেরে। এটা খুবি কমন এবং একদিনও এর কোন ব্যাত্যয় দেখিনি, শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সকালেই খেলার জার্ষি পড়ে যেতে দেখতাম। আমার কৌতুহল থেকেই জানতে পারলাম যে স্কুলগুলোতে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক। এমনকি এলিমেন্টারি(প্রাইমারি ক্লাস ১-৬) স্কুলে কারিকুলামে খেলাধুলার অংশ থাকে ৬০%, লোয়ার সেকেন্ডারী (ক্লাস ৭-৯) ৫০% এবং আপার সেকেন্ডারী (ক্লাস ১০-১২) ৪০%। আর কিন্ডারগার্টেন (৩-৫ বছর বয়স পর্যন্ত) এ কোন লেখাপড়াই নাই। খেলাধুলা ওদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন সেটা হয়ত আমরা কোনদিনও বুঝব না কারণ আমাদের দেশের কিন্ডারগার্টেনের শিশুরাও খেলার সময় পায় না। আমার পরিচিতদের কিন্ডারগার্টেন পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও নাকি ২টার দিকে বাসায় ফিরে আবার সন্ধা পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ে তারপরেও আবার বাসায় পড়াশুনা করে রাত ১০টা পর্যন্ত। আমাদের ঘরে ঘরে আইনষ্টাইন তৈরী হচ্ছে, তাই নয় কি?

এরপর আসি কিন্ডারগার্টেন এ তারা কি পড়ে, জাপানিজরাতো আমার প্রশ্ন শুনে আকাশ থেকে পড়ছে। কিন্ডারগার্টেন কি আবার লেখাপড়ার যায়গা নাকি, ওটাতো ডে কেয়ার সেন্টার। পাশাপাশি তারা আচার ব্যাবহার, হাটা চলা, খাওয়া দাওয়া শিখে আর ফুল, পাতা, পশু-পাখি চিনে। আমার প্রশ্ন ছিল হাটা-চলা বা খাওয়া দাওয়া আবার শেখার কি আছে, ওরা বুঝিয়ে বলল যে রাস্তায় হাটা, পার্কে হাটা, কোন শপিং সেন্টারে হাটার কিছু নিয়ম আছে, এমনকি এসকেলেটারে উঠা, লিফট ব্যাবহার করা এসব শিখে কারণ সব যায়গার আলাদা আলাদা ভদ্রতা আছে। সিম্পল উদাহরণ, এসকেলেটারে ডানা পাশে সরে দাড়ানো যাতে যাদের দ্রুততা আছে তারা যেন বাম পাশ দিয়ে হেটে তাড়াতাড়ি নেমে যেতে পারে। কয়েকজন একসাথে ফুটপাথে হাটলে রাস্তা যেন ব্লক না হয় সেদিকে খেয়াল করতে হয়, আবার ওরা ডিজেবলডদের প্রতি খুবি সদয়। তাই তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে কিভাবে রাস্তায় বা বাসে ও ট্রেনে চলতে হয় এসব শেখায়। এর সাথে আচরণ, বিভিন্ন রকম সম্ভাষণ, কোথায় কখন কোনটা ব্যাবহার করতে হয়। খাওয়া, উঠা, বসা, হাটা-চলা সবকিছুর মধ্যেই ওদের যেন ভদ্রতা আর সভ্যতা প্রকাশ পায় সেটাই মূখ্য বিষয়। তাছাড়া যারা বায়োমেকানিক্স পড়েছে তারা জানে যে হাটা-চলাও যদি বিজ্ঞানসম্মত না হয় তাহলে শরীরের কি ক্ষতি হয় এবং ভবিষ্যতে স্থায়ী বৃকিতি হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও থাকে যেমন একটা হল স্পন্ডলাইসিস। শুধু তাই না, যাবতীয় গৃহের কাজ যেমন কাপড় ধোয়া, থালা বাসন ধোয়া, গোছ গাছ করা, ঘর পরিষ্কার করা, নিজের জিনিষ নিজে করা, নিজে নিজে কাপড় পরা, জুতার ফিতা বাধা এসবের ধারণা দেওয়া হয় এবং এলিমেন্টারি স্কুলের প্রথম তিন বছর এসব প্রাকটিক্যালি শিখান হয়। যাতে প্রত্যেকে স্ববলম্বী বা স্বনির্ভর হতে পারে। আমাদের দেশে অভিজাত পরিবারে এসব নিজে করাতো রিতীমত মানসম্মানের ব্যাপার যে আমার বাচ্চা কাপড় ধুবে, ঘর পরিষ্কার করবে? তারা তো নিজেরা খেতেই পারে না, খাইয়ে দিতে হয়।

এছাড়াও রাস্তা পার হওয়া, ট্রাফিক রুলস, পাবলিক ন্যুইসেন্স, পরিষ্কার পরিছন্নতা, সাতার শেখা, সাইকেল চালনা, হালকা শারিরীক কছরত বা ব্যায়াম, কিছু সাধারণ খেলাধুলা, এসবই শেখান হয় কিন্ডারগার্টেন এ। খাতা কলমের কাজ বলতে প্রধান শিক্ষা যেটা কিন্ডারগার্টেন এ শেখান হয় তা হল আঁকাআকি বা অঙ্কন। এটাতে জাপানীজরা পটু, অঙ্কনের সাথে সাথে তারা শিখে Visualization বা দৃশ্যায়ন। মানে হচ্ছে তারা যা কল্পনা করে তা যেন ছবিতে প্রকাশ করতে পারে আর সেখান থেকেই এসেছে Emocon(Emotional Icon) যা আমরা মেসেঞ্জারে ব্যাবহার করি। এছাড়াও আছে Gesture বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে কিছু বর্ণনা করা। আর একটা বাধ্যতামূলক শিক্ষা হচ্ছে অরিগ্যামি বা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন জিনিষের যেমন পশু-পাখির মডেল বানান। এসব আমাদের কাছে হয়ত কোন শিক্ষা মনে হবে না কারণ আমরা আইনষ্টাইন তবে ওরা বলে যে এসব ওদের শিশুদের মনবিকাশের জন্য জরুরী কারণ তারা চায় ওদের ছেলেমেয়েরা যেন সৃষ্টিশীল হয় এবং তারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে না পারলেও যা আছে তার যেন উন্নতি সাধন করতে পারে।

এবার আসি এলিমেন্টারি (ক্লাস ১-৬) এ কি পড়ানো হয়। ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত আসলে কোন লেখাপড়া বা পরীক্ষা বলতে তেমন কিছু নাই। কিন্ডারগার্টেন এ যা শিখেছিল তারই কিছু উন্নত লেভেলের কাজ শেখান হয় এবং এর পাশাপাশি ওদের বর্ণমালা, কিছু বেসিক গণিত মানে যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগ শেখান হয়। মজার ব্যাপার হল এইসময় পর্যন্ত কোন বিদেশী ভাষার বর্ণমালা শেখান হয় না। খেলাধুলার ওনেক কসরত শেখান হয় এবং বলা বাহুল্য যে তাদের জন্য প্রাতাষ্ঠানিক খেলাধুলা এখন থেকেই শুরু হয়ে যায়। আমরা কি এসব কল্পনা করতে পারি যে আমাদের প্রাইমারির শিক্ষাত্রীরা সবাই খেলাধুলা শিখছে? আসল পড়াশুনা শুরু হয় ক্লাস ৪ থেকে বা ৯ বছর বয়স থেকে। তবে শর্ত থাকে যে তাকে যে কোন একটা খেলাধুলা এবং এর সাথে সাথে যে কোন একটা সংস্কৃতিক বিষয়েও পারদর্শী হতে হবে। তার মানে হচ্ছে যে এলিমেন্টারি পর্যায় শেষ করে একজন শিক্ষাত্রী তার লাইফের যেন একটা লক্ষ খুজে পায় যে ভবিষ্যতে কোন ধরণের যোগ্যতা অর্জন করতে চায়। কারণ ওদের দেশে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার বা মাষ্টার্স, পি এইচ ডি করলেই যে সফল ব্যাক্তি হতে পারবে, অন্য কিছু করলে সফল হবে না এই ভূলটাই ভেঙ্গে দেওয়া হয়। শিক্ষা বলতে ওরা শুধু আর্টস, কমার্স বা সাইন্স বুঝে না, এর চেয়েও অনেক বেশী কিছু বুঝান হয়।


যারা ভেবেছেন যে আমি শুধু ধারণা থেকে লিখেছি তাদের জন্য একটা পিডিএফ লিংক দিলাম, পড়ে দেখবেন।
Program for International Students Assessment - PISA 2012 - Japan
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে কেন পাকিস্তানি শিল্পীদের যাতায়াত বেড়েছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৪৫


জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের মিছিল ও সমাবেশে ইন্টেরিম সরকার বেকাদায় রয়েছে। আমলাতন্ত্রের জটিলতায় জুলাই আন্দোলনের আহতদের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার নিমো'র প্রতি একটি খোলা চিঠি

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:২৭

ব্লগার নিমো,

আপনি কিছুক্ষণ আগে আমার একটি পোস্টে লিখেছেন যে, আমি ১০ লক্ষ টাকা ইভেস্ট করে রিটার্ন পেয়েছি কিনা।

এইরকম প্রশ্ন আমাকে সোলেমানী ব্যান খাওয়া ব্লগার সোনাগাজী করেছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

উহুদের যুদ্ধের সময় ওমর রাঃ এবং আবু বকর রাঃ পলায়ন করেছিলেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

উহুদের যুদ্ধের সময় ওমর রাঃ এবং আবু বকর রাঃ পলায়ন করেছিলেন?

উহুদ পাহাড়ের ছবিটি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

ইদানিং কিছু মানুষের জ্ঞান বিপজ্জনক পর্যায়ে বেড়ে গেছে। কিছু লোক তো নিজেদের মহাজ্ঞানীরও উপরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বউ কে Control এ রাখার উপায় কী ?

লিখেছেন রাজীব নুর, ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫



বউকে কন্টোলে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, আপনাকে 'মানুষ' হতে হবে।
সহজ সরল একজন ভালো মানুষ। মানবিক এবং হৃদয়বান। যে মিথ্যা কথা বলিবে না। যার মধ্যে কোনো ভান-ভনিতা,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বলাগার রাজীব নুরকে বলছি

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৩



শ্রী রাজীব নুর ব্রহ্মচারী আপনি ধর্ম মানেন না ভালো কথা এটা আপনার নিজস্ব বিশ্বাসের ব্যাপার। আপনি ধর্ম মানতে কোন বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই তথাপী আপনি অযাচিতভাবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কুটুক্তি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×