somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিময়তা : শ্রাবনধারার মাঝে অশ্রুর নোনাজল

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেছন থেকে জোরে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ কানে আসল। আমি আমার চেনা জানা পৃথিবী থেকে পালিয়ে যেতে চাইতেছিলাম। পালানোর জন্য আমার একটি সুযোগের দরকার ছিলো। আমি দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলাম এরপর বড় সড়ক ধরে চলতে শুরু করলাম। আমি জানিনা কোথায় গিয়ে থামবো তবে এটুকু জানি যেখানেই গিয়ে থামি না কেন, এখান থেকে অবশ্যই ভালো হবে।

রাত বাড়ার সাথে সাথে আমার বাড়ির সাথেও দূরত্ব বাড়তে লাগলো আর সেই সাথে আমিও একটু মানসিক প্রশান্তি অনুভব করতে লাগলাম। আমার গাড়ি জানত আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে কারন সে চালানোতে কোন ইচ্ছাশক্তি ছিল না। আমি কিশোর বয়সে নিত্য চলাফেরা করা নদীর পাড়ের সেই সরু রাস্তা ঘেঁষে দাড়ালাম। এদিকটায় অনেক দিন যাওয়া আসা হয় না। কর্ম জীবনের ব্যস্ততার জন্য প্রমোদ ভ্রমনের সময় কখনও বের করে নেওয়া হয়নি, কর্মক্ষেত্রের সময় জটিলতা, অভিভাবক - শিক্ষক সমাবেশে অংশগ্রহন, সবশেষে পরিবারের জন্য সময় দেওয়া।

বন্ধু পরিবেষ্টিত হয়ে এই জায়গায় কত সন্ধ্যা কাটিয়েছি, মনের অজান্তেই স্মিত হেসে উঠলাম। একটি পুরানো গাছের পাশে গাড়ি পার্ক করে বের হয়ে আসলাম। অনেক মূল্যবান স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে সব বাঁধভাঙ্গা বন্যার মত এসে আমার হৃদয় কে পরিপূর্ন করে দিচ্ছে। বাতাসে তীব্রতা টের পেলাম একটু একটু সাথে অত্যাসন্ন বৃষ্টির ঘ্রাণ। কপালের দুই পাশের চুল ঠিক করে সেই স্মৃতিময় গাছের পানে ছুটে চললাম। সেই মূল্যবান রত্ন খুঁজে পেতে সময় লাগলো না। এ্যাশলী এবং জন, শাশ্বত প্রেম। সময় আর ঋতু লেখা গুলোকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে কিন্তু তারা এখনও সেখানেই আছে। অশ্রুসজল চোখে আমি লেখাটা কে দেখলাম, আঙ্গুল দিয়ে অনুভব করলাম হৃদয়ের গভীরে। আমি ধীর পায়ে নদীর দিকে এগিয়ে আসলাম, আমার চোখের পানি যেন পাকা অভিনেতার মত অপেক্ষা করছিলো বৃষ্টির জন্য, যেই বৃষ্টি শুরু হবে অমনিই পরা শুরু করবে।

চোখ বন্ধ করে একটি পাথরের উপর বসে আমি বৃষ্টি আর নদীর পানির মিলনের রিনিঝিনি শব্দ শুনতে লাগলাম। আমার গালে তার হাতের ষ্পর্শ অনুভব করতে লাগলাম, তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে। আমি তার বৃষ্টিভেঁজা গন্ধ আর উত্তাপ অনুভব করতে পারছিলাম। তাকে হারানোর ভয়ে চোখ বন্ধ রেখে আমার হাত তার গলার চারিদিকে প্রসারিত করে দিলাম আর তাকে চুমু দিলাম ঠিক সেইভাবে যেভাবে দুইযুগ আগে দিয়েছিলাম। আমি অনেক দিন চেষ্টা করেছি ভুলে যাওয়ার জন্য, কিন্তু সে অনুভুতি আজ এখানে অনেক অনেক শক্তিশালী। আমি খুব ব্যাকুল হয়ে তাকে অনুভব করতে লাগলাম, হায় এই কথা সে যদি জানত।

ততক্ষনে প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।বজ্রের প্রচন্ড শব্দ আমাকে চোখ খুলতে অনেকটা বাধ্য করল। বুঝতে পারলাম আমি একাই এতক্ষন পুরানো স্মৃতির সাথে ছিলাম।

দূর্ঘটনাস্থল এখান থেকে খুব একটা বেশী দূরে নয়। নদীর কূল ঘেঁষে রাস্তটি এঁকে বেঁকে চলে গেছে। সেই রাতে জনের গাড়িটি রাস্তা থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়। ড্রাইভারের অংশটি পুরোপুরি দুমড়ে মুচড়ে যায়। গাড়ির চালক জনের বন্ধু ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে, কিন্তু জন কয়েক ঘন্টা বেঁচে ছিলো। এই কয়েক ঘন্টা যেন মনে হচ্ছিল বিশাল এক সময়। আমি ভাবতে পারছিলাম না তাকে কিভাবে বিদায় জানাবো।

বিগত বিশবছর যাবৎ আমি অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছি সেই স্মৃতি কে তার সুখ ও আনন্দময় স্মৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে। আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই জন আমাকে তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে "এই সেই..."। মাঝে মাঝে ভাবি আমার জীবনটা কেমন হত অনেক অনেক বছর আগে সেদিন যদি জন মারা না যেত? আমি সত্যি কি "এই সেই..."হয়ে থাকতে পারতাম?

সেই স্থান ত্যাগের সময় পুরানো উষ্ণতা আমাকে আবেশী করে তোলে। সেই গাছের দিকে একটি চুম্বন ছুঁড়ে দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াই। ধন্যবাদ জন, আমার প্রয়োজনের সময় তুমি সবসময় আমার পাশেই আছো, ছিলে, থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০০৯ রাত ১০:৩১
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান

ক্যালিগ্রাফি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় যামিনী সুধা,

আপনার নাম আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার এক অমলিন আলো জ্বালায়। একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আপনি শুধু জীবনের অভিজ্ঞতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তদ্বির বানিজ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও এনসিপির নেতা

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

জনপ্রিয় অনলাইন এক্টিভিস্ট জুলকারনাই সায়েরের এক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে গতকাল যেখানে রেলভবনে, রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) এর একান্ত সচিবের কক্ষে তদ্বির বানিজ্যে দেখা গেছে এনসিপির সংগঠক (হবিগঞ্জ) নাহিদ উদ্দিন তারেক ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

টরন্টোর চিঠি - "অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!"

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭


গত বছর গ্রীষ্মের শুরুতে টরন্টোয় বসবাসরত আমার জন্মস্থান জেলা-শহর থেকে আগত অভিবাসীদের একটি পিকনিকে গিয়েছিলাম। ৫০–৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সকলে ছিলেন নারী। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাসকে দিয়ে গাজায় ঠিক কী কী উপকার হয়েছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৫



ইসরায়েলের বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ১১৫ জন ফিলিস্তিনি এবং আরও অন্তত ২১৬ জন আহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্টারের কাচ্চি বিরিয়ানী

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩১



শেষ কবে স্টারের কাচ্চি খেয়েছিলাম আমার মনে নেই। আগে একটা সময় ছিল যখন কাচ্চির নাম নিলে যে নামগুলো সবার প্রথমে সামনে আসতো তার ভেতরে এই স্টারের নাম থাকতো। এখনকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×