somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজানঃ আমাদের সময়ে

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখনকার দিনের আধুনিক রমজান মাসে সবকিছুই আছে। আছে অনেক বেশি বেশি, তারপরেও মনে হয় কি যেন নেই, কি যেন শূন্যতা। আসলে রমজান মাসটা এখন যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ হয়ে গেছে। ঘরে ঘরে গ্যাসের চুলা, হীটার, ওভেন, রেফ্রিজারেটর, ব্লেন্ডার, মোবাইল এ্যালার্ম, রমজান অ্যাাপস আরো কত কি !!! কেন যেন মনে হয় নেই শুধু সেই মমত্ব বা দরদ। সব খাবারই রেডিমেড, ইফতারী/জিলাপির দোকানের সামনে ত্রানের চেয়েও বেশী বড় লাইন। আহাা কোথায় সেই আমাদের রমজান,
- সকালে ঘুম থেকে ঊঠেই মায়ের ছোলা ভিজিয়ে রাখা, দুপুরের পরেই তার রান্না ঘরে ঢোকা, কাঠের চুলার ধোয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া মা ধোয়াশা সরিয়েই বেরিয়ে আসতো বিভিন্ন প্রকার ইফতারী নিয়ে। মায়ের হাতে মাখানো চিড়া, হাতে তৈরী বেলের সরবত আহা সেই স্বাদ আর এই ব্লেন্ডারের যুগে পাইনা।

- তখনকার দিনে ঘরে ঘরে এতো ফ্রিজ ছিলো না, প্রচন্ড গরমের রমজানের দিনে রাস্তার পাশে চালের কুড়া বিছানো বড় বড় বরফের চাক কেটে কেটে বিক্রি হত কেজি দরে। ১/২ টাকা কেজি, পাটের রশি দিয়ে বেধে লোকে হাতে হাতে নিয়ে ঘরে ফিরতো। কূড়ালদিয়ে কাটার সময়ে ছিটে আসা সেই বরফ কুচি যেন তুষারপাতের শ্রান্তি এনে দিতো। আমাদের টিনের ও কাচের জগে এনে ঢেলে দিতাম সেই বরফ। কেন যেন সেই বরফ পানির প্রশান্তি এই রেফ্রিজারেটরের যুগের ঠান্ডা বটলড ওয়াটারে পাইনা।

- মাঝে মাঝে বিদ্যুৎহীন অন্ধকার ঘরে টিমটিমে ল্যাম্প বা হারিকেনের আলোয় ইফাতারিটা যেন এক অন্য রকম আবহ তৈরী করতো। এক হাতে হাত পাখা নিয়ে ইফতারীরত সবাইকে বাতাস দিতে থাকতো ক্লান্তিহীন মা। আহ, সেই হারিয়ে যাওয়া মায়ের হাতপাখার শান্তি এখন আর এই ঘুরন্ত পাখা বা হিমশীতল এসি তে পাই না।

- টিনের প্লেটে ইফতারী বেড়ে নিয় সবাই ঘরের মেঝের মাদুরে গোল হয়ে বসতাম। আব্বা কোরানশরীফ পড়া শেষ হলে সবাই মিলে মুনাজাত ধরতাম। ইহকালের ভুল গুলির ক্ষমা, আগামী দিনের প্রত্যাশা ও পরকালের শান্তির জন্য সেই নিখাদ কামনা আজ শাহী জিলাপী্‌, বটি/শিক কাবাব অথবা হালিম বিরানীর কামনার কাছে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

- আমাদের সময়ে ছিলনা অ্যাালার্ম/ মোবাইল/ বা অ্যাাপ্স। মধ্যরাতের সেহেরীপার্টির সুরময় গজল ও উচ্চকন্ঠের ডাকে সবাই জেগে ঊঠতাম, উৎকণ্ঠা নিয়ে খেতে থাকতাম সময় শেষের সাইরেন বাজার। আমাদের সময় সাইরেন বাজানো হতো, ইফতারীর সময় উতকর্ণ হয়ে কান পেতে থাকতাম কখন সাওময় হবে আর খেতে পারবো। সেই সাইরেন ফিলিংস এখনকার অ্যাালার্ম কোনোভাবেই দিতে পারেনা।

- ইফতারীর সময় খেতে খেতে আব্বা/আম্মা কখন তাদের প্লেট ঠেকে কিছু ঊঠীয়ে দেবে, অথবা একটা বেগুনী বা চপ দুই ভাইকে ভাগ করে দিবে সেই অপেক্ষায় থাকতাম। কখনো বা ধীরে ধীরে খাওয়া বড় আপুর প্লেটে জমে থাকা খাবার থেকে কিছু চলে আসতো ছোট ৪ ভাই বোন দের প্লেটে। তাদের এই উঠিয়ে দেওয়াতে যে ভালোবাসা থাকতো তা এখন সামনে সাজিয়ে রাখা থেরে থরে ইফতারীরেতে খুজে পাইনা।

- আর বড় হয়ে যাবার পর, ১৯৯৮-২০০৪ সাল পর্যন্ত আমি ছিলাম আমাদের পূর্ব বানিয়াখামার বড় মসজিদের ইফতারীর খাদিমদার। এলাকার মাসুম নামে এক মামা সহ দুজনে মিলে বিভিন্ন বাসা থেকে আসা ইফতারগুলি সম্ভাবে বন্টন করতাম মসজিদে ইফতারী করতে আসা অসংখ্য ভিক্ষুক, গরীব অথবা মুসাফির। চট বিছিয়ে দিতাম সারি করে, মাটির পাত্রে বেড়ে দিতাম সবাইকে, সামনে একটা করে প্লাস্টিকের গ্লাস। কোনদিন পরিমানে বেশী, কোনদিন কম। গরীব সেই মানুষগুলী বা মুসাফিরের সেই চকচকে চোখ আর সন্তুষ্টিভরা মুখগুলী আমৃত্য মনের দেওয়ালে টানানো থাকবে।

.........আহা, কোথায় সেই দিনগুলো; নিষ্টুর সময় সব কেড়ে নিলো, সব :( :( :(
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×