আমার প্রায় অনাবৃত শরীরের চারপাশে ভিনভিন করছে অসংখ্য মাছি ।সার ধরে পিঁপড়ার দল নাক দিয়ে ঢুকছে পেটের ভেতর । খুবলে খুবলে শরীরের কিছুটা মাংস খেয়ে গেছে খুধার্থ শেয়ালের দল । অতি কৌতুহলের বশেই হয়তো পেট চিরে বের করেছে সামান্য নাড়িভূড়ি । শরীরটা ফুলে একেবারে ঢোল হয়ে গেছে । আমাকে ঘিরে জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে আসংখ্য মানুষ , দূরে , নাকে কাপড় চেপে । দু-রাত হল আমি এই অজানা জায়গায় পড়ে আছি , একলা নারী ।
আমার নাম …… উঁম ম ম…… , নাম দিয়ে এখন আর কী হবে বল । তবে আমার নামে ছিল এক রকম আকর্ষন । আমি ছিলাম তোমাদের-ই সমান বয়সী । আমারও ছিল বাবা-মা , ভাই-বোন । তোমাদের-ই মত আমি জানালার ফাঁক দিয়ে এসে বিছানায় পড়া রাতের চাঁদের আলোয় স্পর্শ করে আমার স্বপ্নগুলোকে আলোকিত করতাম । মিষ্টি ফুলের সুবাস ভরা ভোরের কোমল বাতাস গায়ে মেখে আমার ঘুম ভাংতো । টক, মিষ্টি আর ঝালের অনুভুতিগুলো তোমাদের যেমন হয় আমারও ছিল ঠিক তেমনি ।
আমার বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আমার উশৃংখলতা । বাবা-মার অবাধ্য হয়ে আমি আমার খেয়াল খুশি মত জীবন যাপন করতে লাগলাম । চেহারায় বিউটিপার্লারের অপরূপ মন ভোলানো কারুকাজ শহরের বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া ছিল আমার নেশা । সে মাতাল বাতাসে শিহরিত হয়ে অধিকাংশ ছেলেরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো কাটা ভেঁড়ার মত লোলুপ দৃষ্টিতে । আমি পুলকিত হতাম । আমার শরীরের ঢেউ খেলানো তরঙ্গ দিয়ে ছেলে বুড়ো সবার মনে অঘাতে স্ফুলিঙ্গ তৈরী করে আমি মনে এক পৈশাচিক আনন্দ পেতে থাকি ।
খোলা খাবারের চারপাশে যেমন মাছির অভাব হয় না ঠিক তেমনি আমারও চারপাশে অসংখ্য ছেলে বন্ধু জুটে গেল । তখন আমার মাথায় ভাল-মন্দ বিচার করার সময় কোথায় । প্রথম প্রথম তাদের সাথে ঠাট্টাচ্ছলে সিগারেট খেলেও আস্তে আস্তে নানা জাতীয় নেশাদ্রব্য আমাকে অষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরল । আমি তলিয়ে যেতে থাকলাম অতল অন্ধকারে ।
বাবা-মা , ভাই-বোন , আত্মীয়-স্বজন , কাছের ভাল বান্ধু-বান্ধবীরা আমাকে অনেক বুঝাতো । তাদের সদ উপদেশ আমার কাছে বীষের চাইতেও তীতা লাগতো । সেগুলো আমার কর্ণ গহ্বরে প্রবেশ করলেও মস্তিষ্ক অবধি কখনোই যেতে দিতাম না । আমি তো আধুনিক যুগের মেয়ে , বন্ধু-বান্ধব (খারাপ) , উশৃংখল আমুদে বাঁধাহীন জীবন , আহ… আর কী লাগে ।
একদিন এক বন্ধুর (খারাপ) ফোন পেলাম বিকেলে । তার বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠান । বাড়ির সবার ইচ্ছাকে দু-পায়ে দলিত করে আমি পৌছুলাম সেই বন্ধুর (খারাপ) বাড়িতে । তখনও বুঝতে পারিনি আমার খেয়ালীপনা , আমার অবাধ্যতা , আমার হেহায়াপনা , আমার উশৃংখলা আমাকে কী বিপদের সম্মুখীন করেছে । চোখের পানিতে ধুয়ে যেতে লাগল আমার টানা টানা চোখের কাজল । কুসোরের (ইক্ষুর) ছোবড়ায় পরিণত হয়ে অবশেষে প্রাণহীন আমি পড়ে আছি এই অজানায় ।
মা……ও…মা তোমাকে খুব মনে পড়ছে , অমি অবাধ্য মেয়ে বাবার চোখের কান্নায় আর লজ্জায় পরিণত হলাম । বেহায়া মেয়ে আমি তোমাদেরকে এমন এক বস্তুতে পরিণত করে গেলাম যে সমাজের সবার ফিসফিসানির আঙ্গুল উঠবে তোমাদের দিকে ।
পুলিশ এসেছে দেখছি । এখনই আমাকে নিয়ে যাবে হয়তো হাসপাতালের লাশ-কাটা ঘরে । আমার ছোট আর বড় আপুরা , তোমাদের একটা কথা বলে যাই, প্লিজ রেখ……
“ অশ্লীলতা, উশৃংখলতা, বেহায়াপনা, আর অবাধ্যতার ঘোড়ায় চেপে আমার মত অনাবৃত পরিণীতায় পরিণত হইয়ো না ”
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৫০