আমাদের দেশে কিডনির রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কম নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে! বিশেষ করে কিডনি স্টোন বা মূত্রথলির 'পাথর' এর সমস্যার কথা এখন প্রায়শই শোনা যায়।
কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান অংশ। বেঁচে থাকার জন্য যেমন মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র জরুরি, ঠিক তেমনি জরুরি হলো কিডনি। কিডনি না থাকলে আমাদের জীবনধারণ অসম্ভব! সাধারণত পেটের অভ্যন্তরে মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়ার উভয় পাশে একটি করে মোট দুটি কিডনি আমাদের শরীরে থাকে। কিডনিগুলো দেখতে বিনের মতো।
আমাদের শরীরের যাবতীয় ক্ষতিকর, অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য পদার্থগুলো এই কিডনির বদৌলতেই মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিডনি দুটির মধ্যে রয়েছে দুটি ছোট ছোট স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি! এই ল্যাবরেটরিগুলো প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দু লিটার মূত্র তৈরি হয়। এই মূত্রে থাকে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো শরীরের ভেতর জমা হয়ে থাকলে আমাদের রক্ত দূষিত হয়ে পড়ত। কাজেই বলা যায় কিডনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে! সাধারণত কোনো কারণে একটি কিডনি অকেজো হয়ে পড়লে অন্যটি তার কাজ নিজের ঘাড়ে তুলে নেয়। তাতে সুস্থ কিডনিটির ওপর চাপ পড়ে বেশি। কিন্তু দুটো কিডনি যদি একসাথে আক্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে জীবনধারণ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে! কাজেই আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যাতে আমাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত না হয়।
কিডনির রোগগুলোর মধ্যে স্টোন বা পাথর হওয়া অন্যতম। কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নির্ভর করে স্টোন কিডনির কোথায় এবং কীভাবে আছে। স্টোনের আকার-আকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পাথর খুব ছোট হলে সেটি কোনো ব্যথা-বেদনা ছাড়াই দীর্ঘদিন এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত শরীরে নিরীহভাবে থাকতে পারে! স্টোনটি বড় হলে বা বড় হতে শুরু করলে অথবা এর আকার এবড়োখেবড়ো হলে এটি কিডনি ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং ব্যথা অনুভূত হয়। এ ব্যথা কিডনির অবস্থান থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে তলপেটে এমনকি পুরুষদের অণ্ডকোষেও!
কিডনি রোগের কারণ :
কিডনিস্টোন তৈরির প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু ব্যাপার কিডনিতে স্টোন তৈরির কারণ বলে বিবেচিত হয়। যেমন -
১. কিডনিতে বারবার ইনফেকশন হওয়া এবং যথোপযুক্ত চিকিত্সা না করা।
২. শরীরে পানির স্বল্পতা।
৩. শরীরে ক্যালসিয়ামের আধিক্য।
৪. অধিক পরিমাণে দুধ, পনির ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করা।
উপসর্গ :
যেহেতু কিডনির ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তাই সেই ক্ষত থেকে রক্তপাত হতে শুরু করে এবং প্রসাবের সাথে রক্ত বেরিয়ে আসে। তাই অধিকাংশ কিডনিস্টোন-রোগীদের বেলায় প্রধান উপসর্গ হলো -
১. রক্তবর্ণের প্রসাব।
২. বমি বমি ভাব। অনেক সময় বমিও হতে পারে।
৩. কিডনির অবস্থানে ব্যথা। এই ব্যথা তীব্র তবে সাধারণত খুব বেশি স্থায়ী হয় না। ব্যথা কিডনির অবস্থান থেকে তলপেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিকিত্সা :
কিডনির অবস্থানে ব্যথা এবং রক্তবর্ণের প্রসাব হলে ডাক্তাররা সাধারণত দুটো সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেন। একটি হলো কিডনির ইনফেকশন, অন্যটি কিডনির পাথর। তাই কিডনি এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম এবং প্রসাবের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সতর্কতা :
১. কিডনি স্টোন এড়াতে হলে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২. বারবার ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে এর ঠিকমতো চিকিত্সা করান।
৩. কখনো প্রসাব আটকে রাখবেন না! প্রসাবের বেগ আসলে চেষ্টা করবেন সাথে সাথে প্রসাব করার।
৪. প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাবেন।
৫. দুধ ও দুধের তৈরি খাবার পুষ্টিকর হলেও সেসব খাবেন পরিমিত পরিমাণ, অত্যধিক বেশি নয়।