কপি পেস্ট নিয়ে ব্লগে যে হইচই চলতেছে তাহা নিয়ে ব্লগে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করতেছে। তাই আমি এই প্লাগিয়ারিজম নিয়ে খানিক পন্ডিতি করতে সাহস করে ফেললাম। যেহেতু বিজ্ঞ ব্লগারদের অনেকেই এই দরকারি বিষয় নিয়ে লিখতেছেন না।
তো প্লাগিয়ারিজম/প্লেজিয়রিজম কি?
আপনে গুগলে যদি plagiarism অনুবাদ করেন তবে দেখবেন সরাসরি 'চুরি' হিসাবেই ইহা অর্থ উত্তর করছে। কিন্তু একাডেমিক ভিত্তিতে গেলে-
১। অন্যের লেখা/আইডিয়া নিজের হিসাবে উপস্থাপনের চেস্টা। (আংশিক হলেও)
২। অন্যের লেখার সুত্র না দেওয়া
৩। লেখা চুরি
৪। অন্যের আইডিয়া/লেখা'কে এমনভাবে উপস্থাপন করা যে পাঠক/দর্শকেরা মনে করুক ইহা আমার নিজের লেখা অথচ সোর্স নিজের কাছেই ছিল।
সহজ বাক্যে প্লাগিয়ারিজম হচ্ছে এক প্রকার ধান্দামি(an act of fraud) যেখানে অন্যের কাজ নিজের হিসাবে চালিয়ে দেওয়া আংশিক/সম্পুর্ণরুপে নিয়ে নিজের কাজ হিসাবে জাহির করা।
এই গেল Merriam-Webster থেকে পাওয়া ডেফিনেশন।
আসলে এই প্লাগিয়ারিজম নিয়ে কথা বলার উদ্দেশ্য নয় এমন যে, আপনে অন্যের লেখা/কাজ নিয়ে কথা বলতেই পারবেন না। বরং অন্যের কাজ'কে উদৃত করে দিলেই আপনি মোটামুটি দোষমুক্ত থেকে যেতে পারবেন। বৈদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি কেহ প্লাগিয়ারিজম ধরা পরে তবে কিন্তু ছাত্রত্ব বাতিল হইবার রেকর্ড আছে। এটা সিরিয়াস একটা ইস্যু যা সাধারণ বাঙালিরা একদম বেখেয়াল হয়ে আছে।
সিম্পলি আপনে যদি কোটেশন দিয়ে আলাদা করেন তবে লেখাচুরির অভিযোগ থেকে আপনে সামান্য অব্যাহতি পাইবেন। এরপরে, যদি সোর্স উল্লেখ করে দেন তবে আপনে মোটামুটি পরিস্কার হইয়া গেলেন।
শতভাগ দায়মুক্তি/পরিস্কার হইবার জন্য আপনার লাইসেন্স/অনুমতি লাগবে। তার মানে বুঝতেই পারছেন, এই লেখাচুরি'র ব্যাপারটা কতখানি ভয়ানক।
আমি মূলত ৫ প্রকারের লেখাচুরি/প্লাগিয়ারিজম সম্পর্কে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতেছি-
সোজাসুজি কপি করা (Direct Plagiarism)
উৎস থেকে বরাবর কপি পেস্ট করা এই প্রকারের অন্তুর্ভুক্ত। উদাহরণ হিসাবে যেমন সোর্সঃ সোর্স থেকে জুয়েল সাহেব সামুতে লেখাচুরি করেছেন।
সম্পাদনার নামে লেখাচুরি (Paraphrasing Plagiarism)
এই সহজ জিনিসটা আমাদের অনেক ব্লগারই মানতে চাহেন না। তারা দাবি করেন যে সম্পাদনা করতেছেন অথচ এটা হচ্ছে জটিল পথের আশ্রয় নিয়ে লেখাচুরি। তবে এই জিনিসটা করতে কিছুটা খাটনিও লাগে কারন ফ্রেইজ গুলাকে নতুন করে সাজাতে হয়। নতুন করে সাজানো হলেও মোদ্দাকথা যেটা অন্যের কাজ দেখে দেখে নিজের মত সাজিয়ে নিলেও এটা অসৎ কর্ম এবং Plagiarism।
যেমন দেখেন এই নিউজ থেকে আমাদের নুরু সাহেব মেরে দিয়েছেন নিজের পোস্টে। তিনি দাবী করতেছেন ইহা সম্পাদনা। কিন্তু এটা আসলে Paraphrasing টেকনিকের লেখাচুরি। আশা করি এখন তিনি বুঝতে পারবেন, ভুলটা কোথায়।
আংশিক কপি করা (Verbatim Plagiarism)
উৎস থেকে কপি পেস্ট করে নিজের লেখায় অন্তর্ভুক্ত করা। উদাহরণ হিসাবে যেমন
সোর্স থেকে নতুন নকিব সাহেব মেরে দিয়েছেন তার
পোস্টে।
জটিলভাবে সংযুক্তকরণ (Patchwork Plagiarism)
এক বা একাধিক উৎস থেকে জোড়াতালি দেওয়াকেই এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা যায়। নিজের কিছু অংশ থাক বা না থাক আপনে যদি কয়েক জায়গা থেকে এনে নিজের হিসাবে চালিয়ে দিতে চান তবে অবশ্যি এটা Patchwork টেকনিকের চুরি।
যেমন রাজিব নুর সাহেব আনন্দবাজার থেকে চুরি করেছেন এই পোস্টে।
নিজের লেখাকে নতুন দেখানো (Self Plagiarism)
এটা ক্ষেত্রভেদে ভাল/খারাপ। যেমন আপনার একটা কাজ বিক্রি করতে দিলেন এডোবি স্টকে তারপরে আপনে করলেন কি শাটারস্টকেও আপনে স্বত্ব বিক্রি করলেন। অথচ এডোবি স্টকে আপনে স্বত্ব অলরেডি সেল করে দিয়েছেন, এই কাজ আর কোথাও আপনে বিক্রি করতে পারবেন না। অতএব এই যে Plagiarism করলেন এটা খুব খারাপ একটা কাজ।
আবার সামুতে যদি নিজের পুরনো কোন লেখা আপনে দেন, সেটা খারাপ হবে না। কারণ এখানে সেল/পারচেজ এর কিছু নাই।
আশা করি আমি বোঝাতে পেরেছি প্লাগিয়ারিজম এর প্রধান প্রকারভেদ গুলো কি কি। সম্পাদনার নাম করে হোক, ধর্মের প্রচারের নামে হোক যে কোন কাজেই আপনে যদি অন্যের লেখা/কাজ নিজের হিসাবে জাহির করতে চাইবেন তখনই সমস্যা। আরা ভাই একটু উদৃতি দিতে সমস্যা কোথায়?
আরেকটা কথা এত হৈল-চৈল এর মধ্যেও এখন পর্যন্ত কোন সুপরিচিত ব্লগার প্লাগিয়ারিজম নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে লিখছেন না দেখে আমি অবাক। আজ(আসলে কালকে) ব্লগার নুরু সাহেব'র সংগে বাক-বিতন্ডায় সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম যে এই নিয়ে লিখব। আমার আবার লিখতে মন চায় না। তাই লিখতে বসে কয়েক বারে লিখে ফেললাম। এখন মাত্র একবার চোখ বুলিয়ে পোস্ট করে দেব। আমার আবার প্রুফরিডিং অসহ্য লাগে।
সুত্রঃ
Merriam-Webster
Lindsey Wilson College
scribbr
ছবি
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:১৪